চীনে বিলেট রপ্তানি শুরু জিপিএইচের

ইস্পাতপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশ চীনে বিলেট রপ্তানি শুরু করেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি চট্টগ্রামের জিপিএইচ ইস্পাত। গতকাল বুধবার বিকেলে ওয়েবিনারে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনের পরই সীতাকুণ্ডের জিপিএইচ কারখানায় তৈরি হওয়া বিলেট রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। কারখানা থেকে প্রাইম মুভার ট্রেইলারে করে গতকালই বন্দর জেটিতে অপেক্ষমাণ এমভি ড্যাটো ফরচুন জাহাজে বিলেট বোঝাই শুরু হয়। প্রায় ২৫ হাজার টনের পুরো রপ্তানি চালান কারখানা থেকে জাহাজে তুলে দেওয়ার জন্য দরকার হবে প্রায় ৯০০ গাড়ি। আগামী সপ্তাহে চীনের বন্দরের উদ্দেশে রওনা হবে রপ্তানি পণ্য বোঝাই এ জাহাজ।

জিপিএইচের প্রথম চালানটির রপ্তানি মূল্য ১ কোটি ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ থেকে একসঙ্গে এত বড় চালান কখনো রপ্তানি হয়নি।

গতকাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘করোনার এই সময়ে চীনের মতো দেশে ইস্পাতপণ্য রপ্তানি আমাদের জন্য বড় সুখবর। এই রপ্তানির মাধ্যমে বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইস্পাতশিল্পও বৈশ্বিকভাবে উঁচু অবস্থানে উন্নীত হবে।’

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, রপ্তানি ঝুড়িতে বিলেট নতুন রপ্তানি পণ্য হিসেবে যুক্ত হলো। এই খাতকে এগিয়ে নিতে নগদ প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

জিপিএইচ ইস্পাতের পণ্যের মান বিশ্বমানের। বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে এই ইস্পাতপণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।
জিপিএইচ ইস্পাতের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর কবির

চীন থেকে বাংলাদেশে বিলেট আমদানি বন্ধ হয়েছে বেশি দিন হয়নি। ২০১৮ সালে সর্বশেষ চীন থেকে বিলেট আমদানি হয়েছিল। তার আগে থেকেই ধীরে ধীরে দেশীয় রড তৈরির কারখানাগুলো বিলেট উৎপাদনে স্বনির্ভর হতে থাকে। বছর দুয়েক আগে বিলেট আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। স্বনির্ভরতা অর্জনের পর এখন রপ্তানি হচ্ছে বিলেট। বিলেট থেকেই মূলত রড তৈরি করা হয়।

জিপিএইচের প্রথম চালানটির রপ্তানি মূল্য ১ কোটি ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ থেকে একসঙ্গে এত বড় চালান কখনো রপ্তানি হয়নি। এর আগে বাংলাদেশ থেকে প্রথম বিলেট রপ্তানি করেছিল জিপিএইচ ইস্পাত। ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কায় আড়াই হাজার টনের একটি ছোট চালান রপ্তানি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া ভারতের সাতটি রাজ্যেও অনিয়মিতভাবে দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে রড ও বিলেট রপ্তানি করেছে।

সীতাকুণ্ডের কুমিরায় অবস্থিত জিপিএইচের কারখানাটিতে বিলেট উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেসের সর্বশেষ প্রযুক্তি ‘কোয়ান্টাম ইএএফ’। এই প্রযুক্তি নেওয়ার তালিকায় কারখানাটি এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বে তৃতীয়।

জিপিএইচ ইস্পাতের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, জিপিএইচ ইস্পাতের পণ্যের মান বিশ্বমানের। বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে এই ইস্পাতপণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। জিপিএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেশের চাহিদার চেয়ে ইস্পাত খাতে উৎপাদনের সক্ষমতা এখন ৫০ শতাংশ অব্যবহৃত থাকছে। এই অব্যবহৃত উৎপাদনক্ষমতা কাজে লাগানো যায় একমাত্র রপ্তানির মাধ্যমে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুনশি শাহাবুদ্দীন আহমেদ, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ, জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মোহাম্মদ আলমাস শিমুল প্রমুখ।