ছোটদের ‘নগদ’ ও ‘ছাড়’ দিন

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ও বিল্ড আয়োজিত ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকারিতা’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়

কোভিড-১৯-এর ধাক্কা মোকাবিলায় সরকার সিএমএসএমই বা কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, তার ৯৪ শতাংশই ছিল ব্যাংকঋণনির্ভর। অথচ উচিত ছিল, কর, পরিষেবা, বাড়ি ভাড়া—এসব ক্ষেত্রেও প্রণোদনা বা ছাড় দেওয়া। অথচ অন্যান্য দেশে এই খাতকে সরাসরি ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ও বিল্ড আয়োজিত ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকারিতা’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, দেশের ছোট উদ্যোক্তারা যে ঋণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তিতে পিছিয়ে আছেন, তার মূল কারণ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক। রপ্তানিমুখী শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পের তুলনায় তাঁরা পিছিয়ে আছেন। রাজনীতির করিডরে তাঁদের কণ্ঠস্বর উচ্চারিত হয় না।
তবে প্রণোদনা যাঁরা ব্যবহার করতে পেরেছেন, তাঁরা উপকৃত হয়েছেন, কিন্তু বড় অংশই ব্যবহার করতে পারেননি। তাঁদের কথায় হতাশার সুর শোনা যায়।

সরকারের প্যাকেজে বৈষম্য ও বৈপরীত্য ছিল। যত অর্থ দরকার ছিল, ততটা দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে, যদিও ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বড় অংশের সঙ্গে ব্যাংকের সম্পর্ক নেই।
সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন, সরকারের প্যাকেজে বৈষম্য ও বৈপরীত্য ছিল। যত অর্থ দরকার ছিল, ততটা দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে, যদিও ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বড় অংশের সঙ্গে ব্যাংকের সম্পর্ক নেই। বিশ্বের অন্যান্য দেশে সিএমএসএমই খাতকে আর্থিক সহায়তা বা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। তিনি মনে করেন, ভর্তুকি তাঁদের ন্যায্য পাওনা ছিল।

উল্লেখ্য, সরকার সাধারণ ছুটির পরপরই সিএমএসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও শুরুতে ব্যাংকগুলো ছোটদের ঋণ দিতে উৎসাহী ছিল না। সে জন্য পরে জুলাই মাসে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিএমএসএমইর প্রণোদনা প্যাকেজে জামানত নেওয়ার কথা বলেনি, বরং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের রীতির ওপর ছেড়ে দিয়েছে। অনেক ব্যাংকই জামানত নিচ্ছে। তৃণমূলের উদ্যোক্তারা এই ব্যাপারে আপত্তি তুললে ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই বিভাগের প্রধান সৈয়দ আব্দুল মোমেন বলেন, এই ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সুনির্দিষ্ট নির্দেশ দিতে পারে যে জামানত নেওয়া যাবে না। সিএমএসএমই খাতে ব্র্যাক ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে জামানত ছাড়া।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হ‌ুমায়ূন বলেন, ব্যাংকের চাহিদা পূরণ করার সামর্থ্য এসএমই খাতের নেই। আবার সংজ্ঞাগত ভ্রান্তিও আছে, মাঝারি খাত বড় শিল্পের সুবিধা পায়, আবার ছোট শিল্পেরও পায়। সে জন্য তিনি মনে করেন, ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য বিশেষায়িত বন্দোবস্ত থাকা দরকার। পাশাপাশি ব্যাংকেরও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থাপনা পেশ করেন বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাশেম খান। তিনি বলেন, সিএমএসএমই খাতের অনেক উদ্যোক্তারই ট্রেড লাইসেন্স নেই। কিন্তু এটি ছাড়া ব্যাংকঋণ মেলে না। ঋণ প্রাপ্তির এই শর্ত শিথিল করার পরামর্শ দেন তিনি, তাতে সহজে ব্যবসার সূচকে দেশের উন্নতি হবে বলে তিনি মনে করেন। পাশাপাশি, যাঁরা আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থার বাইরে আছেন, তাঁদের একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে অ্যাপ তৈরি করা দরকার বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে এসএমইর সংজ্ঞা পাল্টাতে হবে বলে মত দেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ। তিনি বলেন, মাঝারি শিল্পের সঙ্গে ব্যাংকের সম্পর্ক থাকলেও কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে সম্পর্ক নেই বললেই চলে। কিন্তু ব্যাংকিংয়ের রেকর্ড ছাড়া ব্যাংক ঋণ দিতে চায় না। জামানতভিত্তিক নয়, ঋণ তারল্যভিত্তিক দেওয়া উচিত বলে মত দেন তিনি।

নারী উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে বক্তাদের অভিমত, নারী উদ্যোক্তাদের ১০ বছরের জন্য কর মওকুফ সুবিধা দিতে হবে। এ ছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের জামানত ছাড়া ঋণ দেওয়ার মত দেন তাঁরা।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ব্যবসায়ী নেতা সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, আসিফ ইব্রাহীম, প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হুমায়রা চৌধুরী, সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।