টিকা কিনতে ঋণ চায় সরকার

  • বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইআইবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণসহায়তা চেয়েছে সরকার।

  • ১৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষের জন্য টিকা কিনতে ২০০ কোটি ডলার পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে।

  • প্রত্যেক ব্যক্তিকে দুই ডোজ টিকা দিতে হবে। ১০ থেকে ১২ ডলার খরচ হতে পারে।

করোনার টিকা কিনতে ঋণের জন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছে সরকার। দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহায়তা চেয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে এরই মধ্যে। এসব সংস্থার কাছ থেকে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণসহায়তা চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, করোনার টিকা কেনার জন্য চলতি মাসের শুরুতে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে মোট ২৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে চিঠি দেয়।

করোনার টিকা কবে নাগাদ আবিষ্কৃত হবে, তা এখনো অজানা। তবে রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশই এ ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, যে দেশই প্রথম টিকা আবিষ্কার করবে, সেই দেশ থেকেই টিকা আনা হবে। টিকা আবিষ্কারের পর দ্রুত তা কিনতে যাতে অর্থসংকটে পড়তে না হয়, সে জন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন দাতা সংস্থার শরণাপন্ন হয়েছে সরকার। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাসহ (জাইকা) বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছে সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, করোনার টিকা কেনার জন্য চলতি মাসের শুরুতে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে মোট ২৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে চিঠি দেয়। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি ডলার, এডিবির কাছে ৫০ কোটি ডলার, জাইকার কাছে ৫০ কোটি ডলার, এআইআইবির কাছে ৫০ কোটি ডলার, জার্মানির কাছে ২৫ কোটি এবং ফ্রান্সের কাছে ২৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে আলাদা চিঠি পাঠিয়েছে ইআরডি।

করোনা মোকাবিলায় গত এপ্রিলে এডিবি বাংলাদেশকে ১০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ছিল ৮৫০ কোটি টাকা। এবার করোনার টিকার জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে এডিবির কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে চলতি সপ্তাহে।

সরকারের চিঠি পাওয়ার পরপরই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। বিশ্বব্যাংক এরই মধ্যে ইআরডিকে জানিয়েছে, করোনার টিকা কেনার জন্য তারা ৬০০ কোটি ডলারের যে তহবিল গঠন করেছে, সেখান থেকে ঋণ পেতে আবেদন করা ১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে।
ইআরডির অতিরিক্ত সচিব শাহাবুদ্দীন পাটওয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিকা কেনার জন্য আমরা বিশ্বব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছি। তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। আশা করছি, আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ঋণের অর্থ পাওয়া যাবে।’

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এখন জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫০ লাখ। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর জন্য টিকা কিনতে ২০০ কোটি ডলার পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে দুই ডোজ টিকা দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে দুই ডোজ টিকার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির পেছনে ১০ থেকে ১২ ডলার খরচ হতে পারে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যখন কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ শুরু হয়, তখন সংক্রমণ মোকাবিলায় বিভিন্ন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনা বাবদ বিশ্বব্যাংক থেকে যে ১০ কোটি ডলার পাওয়া গেছে, তা দেশের স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তাই আগের মতো এবারও বিশ্বব্যাংকের কাছে কাঙ্ক্ষিত ঋণ পাওয়ার আশা করছে সরকার।

এদিকে করোনা মোকাবিলায় গত এপ্রিলে এডিবি বাংলাদেশকে ১০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ছিল ৮৫০ কোটি টাকা। এবার করোনার টিকার জন্য ৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে এডিবির কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে চলতি সপ্তাহে।

এডিবির ঋণ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গত বুধবার রাতে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আবদুল বাকি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এডিবি থেকে আমরা ৫০ কোটি ডলারের যে ঋণ চেয়েছি, বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের এরই মধ্যে আশ্বস্ত করেছে। আশা করছি, টিকা কিনতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে তারা।’

চীনের উদ্যোগে গঠিত এআইআইবির কাছ থেকেও ঋণ পেতে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে বলে জানিয়েছেন ইআরডির যুগ্ম সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী। একইভাবে ফ্রান্স ও জার্মানির কাছ থেকেও সহায়তার অর্থ পাওয়ার আশার কথা জানিয়েছেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আলী হোসেন।

গত মার্চে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে কত টাকা ঋণ পেয়েছে এবং কত টাকা ঋণ পাবে, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, এআইআইবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে ১৫৬ কোটি ডলার ঋণচুক্তি সই করেছে সরকার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে আরও ৫০৮ কোটি ডলার ঋণচুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪৩ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে সরকারের আয় কমে গেছে। টানা দুই মাসের ছুটির কারণে সারা দেশ কার্যত বিচ্ছিন্ন থাকায় ভ্যাট, আয়কর ও শুল্ক আদায় ছিল স্থবির। এমন বাস্তবতায় সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নেওয়ার প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক, এডিবির বাইরে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাও সহায়তায় এগিয়ে আসছে। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনতে বাংলাদেশকে সাড়ে তিন কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শিগগিরই সরকারের সঙ্গে আইডিবির এ-সংক্রান্ত চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এই টাকায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম বিতরণ করা হবে।

ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) থেকে আড়াই কোটি ডলার ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। এই অর্থে খাদ্যশস্য কেনা হবে। ১৬ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে ফ্রান্সের এএফডি।

এ ছাড়া করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে এক কোটি ডলার ঋণ দেবে ইফাদ। এই টাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার ২৬ হাজার গরিব কৃষক পরিবারের মধ্যে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হবে।

ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) থেকে আড়াই কোটি ডলার ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। এই অর্থে খাদ্যশস্য কেনা হবে। ১৬ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে ফ্রান্সের এএফডি। এ দিয়ে দরিদ্র মানুষদের আর্থিক সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) থেকেও এক কোটি ডলার পাওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া কোরিয়া সরকার থেকে পাঁচ কোটি ডলার পাওয়ার প্রতিশ্রুতি মিলেছে।