তদারক করবে ২৩টি বিশেষ দল

সাত দিনের কঠোর লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তবেই শিল্পকারখানা চালু রাখা যাবে

তৈরি পোশাক কারখানা
ফাইল ছবি

করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত সাত দিনের কঠোর লকডাউনের মধ্যেও শিল্পকারখানা চলবে। তবে তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। শ্রমিকদের আনা-নেওয়ার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষকে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। লকডাউনে চালু থাকা শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি মানছে কি না, সেটি তদারকি করতে ২৩টি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়। সেই কমিটিকে সহায়তা করবে শিল্পপুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন।

এ ছাড়া পোশাক কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন হচ্ছে কি না, সেটি তদারকি করবে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। দুই সংগঠনের নেতারা জানান, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে এবার সংশ্লিষ্ট কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আগামীকাল ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ‘সর্বাত্মক লকডাউন’–এর সময় কাজ ও চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। যদিও রোববারই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে পোশাকশিল্প মালিকেরা জানান, লকডাউনে শিল্পকারখানা চালু থাকবে।

জানতে চাইলে শ্রমসচিব কে এম আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহায়তায় আমরা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে একটি নির্দেশিকা তৈরি করেছি। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর আলাদা একটা প্রটোকল প্রস্তুত করেছে। তাতে কারখানা থেকে শুরু করে বাসায় ফিরে কী কী করতে হবে, তা সুন্দরভাবে উল্লেখ আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেরও আলাদা নির্দেশিকা রয়েছে। সবই মেনে চলতে হবে।’

আবদুস সালাম আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, সেটি তদারকির জন্য ২৩টি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংশ্লিষ্ট কারখানার বিরুদ্ধে শ্রম আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শুরুতে সর্বাত্মক লকডাউনে সরকার শিল্পকারখানা বন্ধ রাখার পরিকল্পনা করেছিল। তবে বাদ সাধেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকেরা। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করেন পোশাকশিল্প মালিকদের দুটি সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা। তাঁদের যুক্তি—কারখানা বন্ধ হলে ক্রয়াদেশ পাওয়া যাবে না, বর্তমান ক্রয়াদেশের পণ্য সময়মতো সরবরাহে ব্যর্থ হবেন মালিকেরা এবং শ্রমিকেরাও বাড়ির দিকে ছুটলে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত সরকার শিল্পকারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

দেশে করোনার প্রথম ঢেউয়ের শুরুতে মাসখানেক কারখানা বন্ধ ছিল। গত বছরের এপ্রিলের শেষ দিকে সাধারণ ছুটির মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়। তবে প্রথম কয়েক দিন স্বাস্থ্যবিধি মানলেও পরে সেটি ঢিলেঢালা হয়ে যায়। আবার প্রথম দিকে তদারকি কিছুটা থাকলেও কয়েক দিন পর তা বন্ধ হয়ে যায়। যদিও সরকারের প্রজ্ঞাপনের পর বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নিজেদের সদস্যদের জন্য আলাদা করে নির্দেশনা দেয়।

বিজিএমইএ তাদের নির্দেশনায় কারখানা খোলা ও ছুটির সময়ে ভিড় এড়াতে বিভিন্ন বিভাগের শ্রমিকদের উপস্থিতির জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ, দূরের শ্রমিকদের জন্য আলাদা বাসের ব্যবস্থা, করোনায় আক্রান্ত শ্রমিকদের কারখানার নিকটবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর ওপর জোর দিয়েছে। আর বিজিএমইএর নিজস্ব গাইডলাইন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলেছে সংগঠনটি।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি আরশাদ জামাল গতকাল বলেন, ‘আজকে (গতকাল) সকালে আমাদের বোর্ড সভা হয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে কোনো কারখানা যদি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেয় তাহলে আমরা সেটিকে বন্ধ করে দেব। বিষয়টি তদারকি করতে মোবাইল টিম পুনর্গঠন করা হয়েছে।’

অন্যদিকে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানছে কি না, সেটি আমরা তদারকি করব। কোনো কারখানা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আমরা ওই কারখানা বন্ধ করে দেব।’

এদিকে গতকাল ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে শ্রম পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভা হয়। সভাপতিত্ব করেন শ্রমপ্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। সভায় মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নেওয়া পদক্ষেপের কথা জানান। অন্যদিকে শ্রমিকনেতারা কারখানায় শ্রমিকদের আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে পালাক্রম চালু, শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত এবং পরিবহনশ্রমিকদের আর্থিক সহায়তার বিষয়টি তুলে ধরেন।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, তৈরি পোশাক কারখানার আশপাশে অন্য অনেক শিল্প রয়েছে। সেসব কারখানায় যদি স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে পোশাকশ্রমিকেরাও নিরাপদ থাকবেন না। ফলে পোশাকের বাইরে অন্য শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি মানছে কি না, সেটিও তদারকি করা জরুরি। তা কিন্তু ২৩টি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি দিয়ে হবে না। কমিটি ও তার সদস্যসংখ্যা বাড়াতে হবে।