তিনি ছিলেন একজন সাহসী ও সৎ ব্যবসায়ী

মাহবুবুর রহমান

১৯৭৬/৭৭ সালে আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আমার পরিচয়। এরপর সেই পরিচয় কর্মক্ষেত্রের বাইরে পারিবারিক সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। আমাদের দুই পরিবারের সম্পর্ক এখন অনেক নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ। ঢাকা চেম্বারকে কার্যকর ও প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের যোগাযোগ। মোখলেসুর রহমান নামে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক এক সচিব এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনিই আনোয়ার হোসেন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নুরুদ্দিন আহমেদ, এম এ সাত্তার ও আমাকে একত্র করেছিলেন। পরে আরও অনেকে যুক্ত হন আমাদের সঙ্গে। আমরা মিলে গড়ে তুললাম সমমনা গোষ্ঠী। এ সমমনা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে পরবর্তী সময়ে অনেকে ঢাকা চেম্বারের নেতৃত্ব দিয়েছে। আনোয়ার হোসেন খুব ছোট থেকে বড় হয়েছেন। একসময় নিজে শাড়ি, লুঙ্গি মাথায় করে ফেরি করেছেন। এ কারণে ব্যবসার খুঁটিনাটি সমস্যাগুলো তাঁর খুব ভালো জানা ছিল। ঢাকা চেম্বারকে ব্যবসায়ীদের সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা যখন সমমনা গোষ্ঠী গড়ে তুলি, তখন তার অভিজ্ঞতা আমাদের এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছিল।

আনোয়ার হোসেন ও আমরা আরও অনেকে মিলে সত্তর ও আশির দশকে শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য বেসরকারীকরণ জোরালো ভূমিকা রেখেছিলাম। আমরা সবাই মিলে প্রথম বেসরকারি খাতে ব্যাংক ও ইনস্যুরেন্সের দাবি করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে আনোয়ার হোসেন, দীন মোহাম্মদসহ আরও কয়েকজন মিলে প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি দ্য সিটি ব্যাংক গঠন করেন। পাশাপাশি অনেক শিল্পকারখানাও গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে তাঁর সন্তানেরা ব্যবসার হাল ধরেছেন। তিনি ছিলেন একজন সাহসী ও সৎ ব্যবসায়ী। নিজে পড়ালেখা খুব বেশি করেননি। কিন্তু তিন ছেলেকে বিদেশে লেখাপড়া করিয়েছেন।

একসময় ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতিতেও নাম লেখানোর চেষ্টা করেছেন। পুরান ঢাকার লালবাগ থেকে সাংসদও হয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই বুঝতে পারেন, ক্ষেত্রটি তাঁর জন্য না। তাই রাজনীতি থেকে সরে এসেছিলেন। বন্ধুবান্ধবের চেয়ে নিজের এলাকার লোকজন তাঁর কাছে অনেক বেশি প্রিয় ছিল। নিজের পরিবারের বাইরে পুরান ঢাকার নিজের এলাকার লোকজন, ঢাকা চেম্বার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান—এ ছিল আনোয়ার হোসেন বৃহৎ পরিবার। মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে তিনি খুব আনন্দ পেতেন।


মাহবুবুর রহমান, সভাপতি, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশ (আইসিসিবি)