পোশাকপল্লিতে যাচ্ছে ৩৭ কোম্পানি

এই শিল্পনগরের পোশাকপল্লিতে যাবে ৫৯টি প্রতিষ্ঠান। সেখানে সব মিলিয়ে সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ হতে পারে।

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএকে বরাদ্দ দেওয়া জমিতে কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সেখানে যাচ্ছে ৩৭টি কোম্পানি। চলতি মাসেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে এসব কোম্পানির আলাদা আলাদা জমি লিজ চুক্তি হওয়ার কথা। চুক্তির পরপরই তারা শিল্পনগরে কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করবে বলে জানা গেছে।

বেজা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে পোশাকপল্লি করার জন্য বিজিএমইএকে বরাদ্দ দেওয়া ৫০০ একর জমির মধ্যে ৩২১ একরজুড়ে গড়ে উঠবে শিল্পকারখানা। বাকি জমি বর্জ্য শোধনাগার ও অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ এবং লেকসহ বিভিন্ন পরিষেবা-সুবিধার জন্য ব্যবহার করা হবে। সেখানে মোট ৫৯টি কোম্পানি যাওয়ার কথা। প্রথম পর্যায়ে যাচ্ছে ৩৭ কোম্পানি। বাকি ২২ কোম্পানির সঙ্গে পরে চুক্তি হবে। এই পোশাকপল্লিতে সব মিলিয়ে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের কথা রয়েছে, যা বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)।

জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জের বাউশিয়ায় একটি পোশাকপল্লি করতে দুই যুগ ধরে চেষ্টা করে আসছিল বিজিএমইএ। কিন্তু মালিকদের একাংশের অনীহার কারণে পোশাকপল্লির কাজ বেশি দূর এগোয়নি। বাউশিয়ায় পোশাকপল্লি করতে ব্যর্থ হওয়া ব্যবসায়ীদের এক বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয় সরকার। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে যেতে রাজি হন পোশাকশিল্প মালিকেরা।

এ প্রসঙ্গে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিজিএমইএ দীর্ঘদিন ধরেই মুন্সিগঞ্জের বাউশিয়ায় একটি পোশাকপল্লি করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেখানে তারা করতে পারেনি। আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে জমি-গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানিসহ সব ধরনের সুবিধা দেব। এতে তারা আশ্বস্ত হয়েছে। তাদের জন্য সব পরিষেবা প্রস্তুত।’ পবন চৌধুরী আরও বলেন, যেহেতু মুনাফা হবে আলাদা, প্লট হবে আলাদা। তাই সবার সঙ্গে আলাদা আলাদা চুক্তি সই হবে।

আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে জমি-গ্যাস-বিদ্যুৎ, পানিসহ সব ধরনের সুবিধা দেব। এতে তারা আশ্বস্ত হয়েছে। তাদের জন্য সব পরিষেবা প্রস্তুত।
পবন চৌধুরী, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বেজা

কারা যাচ্ছে পোশাকপল্লিতে

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের পোশাকপল্লিতে সবচেয়ে বেশি জমি পাচ্ছে অ্যাপারেল গ্যালারি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান পাবে ৩৩ একর জমি। জানা গেছে, অ্যাপারেল গ্যালারি সেখানে সাড়ে সাত কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৩৭ কোটি টাকা। এই কারখানায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ একর করে জমি পাচ্ছে দুটি কোম্পানি। এর একটি হলো ইপিলিয়ন স্টাইল লিমিটেড, অন্যটি গ্লোবাল শার্ট লিমিটেড। এর মধ্যে ইপিলিয়ন ৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন আল মামুন জানান, তাঁদের কারখানায় সাত হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

আরাফাহ ড্রেস লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল আলিম আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বেজার কাছে দুই একর জমি চেয়েছি। সেখানে আমাদের কারখানায় এক হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’ এত শ্রমিকের আবাসন ব্যবস্থা কীভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে জানতে চাইলে তিনি নিজস্ব ডরমিটরি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান। আবদুল আলিম আরও বলেন, ‘এত দিন সারা দেশে যত্রতত্রভাবে শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এখন পরিকল্পিতভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। আমরা আশাবাদী, মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর হবে একটি পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চল।’

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে যেতে আগ্রহী অন্য উল্লেখযোগ্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রাফিকস টেক্সটাইল লিমিটেড, কলম্বিয়া গার্মেন্টস লিমিটেড, ক্লিপটন কটন মিলস লিমিটেড, ভিজুয়াল নিটওয়্যার লিমিটেড, প্যাসিফিক কটন লিমিটেড ইত্যাদি।

এদিকে বিজিএমইএর এই পোশাকপল্লিকে পরিবেশবান্ধব এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে চায় বেজা। এর অংশ হিসেবে গত বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৪ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হবে।

বেজা জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর মোট ৩০টি অঞ্চলে বিভক্ত। এর মধ্যে জোন ২-এ ৯৩৯ একর এবং জোন ২ বি-এ ৪৭৪ একরের মাঝখানে পড়েছে বিজিএমইএর পোশাকপল্লি। এই দুটি জোনকে পুরোপুরি গ্রিন বা সবুজ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিজিএমইএর জন্য যে ৫০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেখানে শুধু একটি বিশাল সাইনবোর্ড টাঙানো আছে। পুরো এলাকা ফাঁকা। তবে প্রকল্প এলাকায় যাওয়ার রাস্তা করে দিয়েছে সরকার। গ্যাস-বিদ্যুৎ এবং পানির সুবিধাও রয়েছে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি আরশাদ জামাল প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাস এসে সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। এ জন্য যেতে দেরি হচ্ছে। শিগগিরই সেখানে পোশাক কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু হবে।