পোশাকের কনটেইনার যাচ্ছে কম

  • এইচঅ্যান্ডএম, ওয়ালমার্ট, এমঅ্যান্ডএস, পিভিএইচ, কনতুর, ইন্ডিটেক্স, আসদার মতো ব্র্যান্ড পোশাক নেওয়া কমিয়েছে।

  • ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত মাসে ২৩২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ কম।

  • দেশের পণ্য রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশ চট্টগ্রামের ১৮টি ডিপোতে কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দর দিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়।

বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএমের ঢাকা কার্যালয় সপ্তাহে গড়ে সাড়ে আট শ কনটেইনার তৈরি পোশাক চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠায়। গত মাসের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে সুইডেনভিত্তিক এই ব্র্যান্ড পাঠিয়েছে যথাক্রমে ৮৬৩, ৭৩০ ও ৫৫০ কনটেইনার পোশাক। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা ব্র্যান্ড ওয়ালমার্ট সপ্তাহে গড়ে ৩০০ কনটেইনার পোশাক নিয়ে থাকে বাংলাদেশ থেকে। সেখানে তারাও গত মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে যথাক্রমে ১৮০ ও ১৪০ কনটেইনার পোশাক নিয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, এইচঅ্যান্ডএম-ওয়ালমার্টের পর বাংলাদেশ থেকে সপ্তাহে গড়ে ২৬০ কনটেইনার তৈরি পোশাক নেয় প্রাইমার্ক। গত মাসের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে আয়ারল্যান্ডভিত্তিক এই খুচরা বিক্রেতা ব্র্যান্ড পোশাক পাঠিয়েছে যথাক্রমে ১৯২, ২৩০ ও ১৯৬ কনটেইনার।

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশ লকডাউন বা অবরুদ্ধ পরিস্থিতি জারি করেছে। এতে তৈরি পোশাকের চলমান ক্রয়াদেশের ওপর স্থগিতাদেশও আসতে শুরু করেছে। পাশাপাশি নতুন ক্রয়াদেশ দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। এতে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তৈরি পোশাকের কনটেইনার যাওয়া গত মাস থেকে কমে গেছে। চলতি মাসেও সেই প্রবণতা অব্যাহত আছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, এইচঅ্যান্ডএম-ওয়ালমার্টের পর বাংলাদেশ থেকে সপ্তাহে গড়ে ২৬০ কনটেইনার তৈরি পোশাক নেয় প্রাইমার্ক। গত মাসের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে আয়ারল্যান্ডভিত্তিক এই খুচরা বিক্রেতা ব্র্যান্ড পোশাক পাঠিয়েছে যথাক্রমে ১৯২, ২৩০ ও ১৯৬ কনটেইনার। জার্মানভিত্তিক সিঅ্যান্ডএ সপ্তাহে গড়ে ২৩০ কনটেইনার তৈরি পোশাক নিয়ে থাকে। অক্টোবরের তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে সেটি কমে হয় যথাক্রমে ২১০ ও ১৮০ কনটেইনার। এর বাইরে এমঅ্যান্ডএস, পিভিএইচ, কনতুর, ইন্ডিটেক্স, আসদারও পোশাক নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। কনটেইনার কম যাওয়া মানেই পোশাকের রপ্তানিও কমে যাওয়া।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত মাসে ২৩২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ কম। চলতি মাসেও রপ্তানি কমতির দিকে। মাসের প্রথম ১৬ দিনে ১১৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরের একই সময়ের তুলনায় এই আয় ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ কম।

দেশের পণ্য রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশ চট্টগ্রামের ১৮টি ডিপোতে কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দর দিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিক সমিতির সচিব রুহুল আমিন সিকদার গতকাল বলেন, করোনার শুরুতে গত মার্চে রপ্তানিতে বিপর্যয় নেমে এসেছিল। তাই গত ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম কনটেইনারবোঝাই পোশাক রপ্তানি হয়েছে। মাঝে কিছুটা বাড়লেও এখন আবার কমতির দিকে।

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ইউরোপের কয়েকটি দেশের পণ্য অন্য দেশে পাঠাচ্ছি। সে জন্য কিছু ক্রয়াদেশ দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত স্থগিত করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সব ব্র্যান্ডই ক্রয়াদেশ দেওয়া কিছুটা শ্লথ করছে। কারণ ঘরের বাইরে পড়া পোশাক বিক্রি হচ্ছে কম। অন্যদিকে ঘরে পড়ার পোশাকের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
এইচঅ্যান্ডএমের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ার প্রধান জিয়াউর রহমান

বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বা ২৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পোশাক কিনে থাকে। সেই হিসাবে এ দেশের রপ্তানি হওয়া পোশাকের ১০ শতাংশেরই ক্রেতা হচ্ছে এইচঅ্যান্ডএম। এই ব্র্যান্ড সম্প্রতি তাদের কয়েকটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে সাময়িকভাবে ক্রয়াদেশ স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে ই-মেইল পাঠিয়েছে।

জানতে চাইলে এইচঅ্যান্ডএমের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ার প্রধান জিয়াউর রহমান গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ইউরোপের কয়েকটি দেশের পণ্য অন্য দেশে পাঠাচ্ছি। সে জন্য কিছু ক্রয়াদেশ দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত স্থগিত করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সব ব্র্যান্ডই ক্রয়াদেশ দেওয়া কিছুটা শ্লথ করছে। কারণ ঘরের বাইরে পড়া পোশাক বিক্রি হচ্ছে কম। অন্যদিকে ঘরে পড়ার পোশাকের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তা ছাড়া প্রত্যেক ব্র্যান্ডের কাছেই পোশাকের পুরোনো স্টক জমে আছে। তবে দোকান খোলা থাকলে ব্যবসা চলবেই।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে পোশাক নেওয়া কিছুটা শ্লথ হবে। কিছু ক্রয়াদেশও স্থগিত হবে। কারণ, ফরমাল শার্ট, স্যুট, প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে না।
এমঅ্যান্ডএসের বাংলাদেশ প্রধান স্বপ্না ভৌমিক

বাংলাদেশি পোশাকের আরেক বড় ক্রেতা যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্র্যান্ড মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার (এমঅ্যান্ডএস)। ব্র্যান্ডটির ১ হাজার ৪৬৩ বিক্রয়কেন্দ্রে গত বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০০ কোটি ডলারের পোশাক গেছে। সপ্তাহে গড়ে ২২০ কনটেইনার পোশাক নেয় তারা। তবে গত মাসের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে নিয়েছে ১৭২, ১৫২ ও ১৯০ কনটেইনার পোশাক।

পোশাক নেওয়া কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এমঅ্যান্ডএসের বাংলাদেশ প্রধান স্বপ্না ভৌমিক গতকাল বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে পোশাক নেওয়া কিছুটা শ্লথ হবে। কিছু ক্রয়াদেশও স্থগিত হবে। কারণ, ফরমাল শার্ট, স্যুট, প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে না। তবে তিনি এ–ও বলেন, গত মার্চ-এপ্রিলের মতো বিপর্যয় এবার হবে না। অধিকাংশ ব্র্যান্ডই অনলাইন বিক্রিতে জোর দিয়েছে।

করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের কারণে গত মার্চ–এপ্রিলে ৩১৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ প্রাথমিকভাবে বাতিল ও স্থগিত হয়েছিল। তখন পোশাকশিল্পের মালিকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে সরকার রপ্তানিমুখী শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে।

বিজিএমইএর সহসভাপতি আরশাদ জামাল বলেন, প্রাক্কলিত ক্রয়াদেশ স্থগিত হচ্ছে বেশি। নতুন ক্রয়াদেশও কম আসছে। দুই সপ্তাহ পরে ইউরোপ-আমেরিকায় শুরু হওয়া ‘হোলি ডে সেল’ যদি ভালো না হয়, তাহলে আগামী মৌসুমের ক্রয়াদেশও কম আসবে। জানুয়ারিতে রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমার শঙ্কা রয়েছে।