প্রথমবারের মতো চীনে বিলেট রপ্তানি করতে যাচ্ছে জিপিএইচ

একসময় রড তৈরির মধ্যবর্তী কাঁচামাল ‘বিলেট’ আমদানি হতো। বছর দুয়েক আগে দেশীয় কারখানাগুলো বিলেট উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়েছে। এখন আর আমদানি করতে হচ্ছে না। স্বনির্ভরতা অর্জনের পরই এবার বড় চালানের বিলেট রপ্তানিতে নাম লেখাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

ইস্পাত উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ স্থানে থাকা চীনে এই বিলেট রপ্তানি করবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জিপিএইচ ইস্পাত। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরায় অবস্থিত জিপিএইচ সম্প্রতি তাদের কারখানার উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করে। সম্প্রসারিত কারখানায় সম্প্রতি পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রমও শুরু করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর পরপরই কোম্পানিটি চীনে বিলেট রপ্তানি করতে যাচ্ছে। বিশ্বে ইস্পাতের উৎপাদনের প্রায় অর্ধেকই হয় চীনে। সে দেশে আগামী মাসের শুরুতে প্রথমবারের মতো বিলেট রপ্তানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশি কোনো কোম্পানি।

জিপিএইচ জানায়, চীনের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ২৫ হাজার টন বিলেট রপ্তানি নিয়ে চুক্তি হয়েছে। রপ্তানিমূল্য ১ কোটি ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ থেকে একসঙ্গে এত বড় চালান কখনো রপ্তানি হয়নি।

জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মোহাম্মদ আলমাস শিমুল বলেন, ‘জিপিএইচ ইস্পাত যে বৈশ্বিক মানের ইস্পাত পণ্য উৎপাদন করছে, তার স্বীকৃতি হলো এই চালান রপ্তানি। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের কারখানায় ইস্পাত পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। বিলেট রপ্তানির মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।’

বাংলাদেশ থেকে প্রথম বিলেট রপ্তানি করেছিল জিপিএইচ ইস্পাত, সেটি ২০০৮ সালে। সে সময় শ্রীলঙ্কায় আড়াই হাজার টনের ছোট চালান রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া ভারতের সাতটি রাজ্যেও অনিয়মিতভাবে দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে রড ও বিলেট রপ্তানি করেছে। তবে এবারের মতো বিলেটের এত বড় চালান রপ্তানি অতীতে আর হয়নি বলে এ খাতের ব্যবসায়ীরা জানান।

এদিকে চীনে বিলেট রপ্তানির খবরে গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৭০ পয়সা বা প্রায় ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকায়। কোম্পানিটি সম্প্রতি তাদের নতুন সম্প্রসারিত কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। গত জুনে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে তা পিছিয়ে যায়। এমনকি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর প্রয়োজনীয় বিদেশি বিশেষজ্ঞও এখন দেশে আসতে পারছেন না। এ কারণে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর আগে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।

জিপিএইচ ইস্পাত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন কারখানায় পুরোদমে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হলে কোম্পানিটির বার্ষিক বিলেট উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ১০ লাখ মেট্রিক টনে। আর রড উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৭ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টনে। এঙ্গেল, বিমসহ আরও বেশ কিছু মধ্যবর্তী পণ্য উৎপাদিত হবে নতুন কারখানায়।

২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩৭৮ কোটি টাকা। বর্তমানে এটি ভালো মানের কোম্পানি হিসেবে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত। ২০১৯ সালের জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের নগদ ও বোনাস মিলিয়ে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।

সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ইস্পাত কারখানাটিতে বিলেট উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেসের সর্বশেষ প্রযুক্তি ‘কোয়ান্টাম ইএএফ’। এই প্রযুক্তি নেওয়ার তালিকায় কারখানাটি এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বে তৃতীয়।

জিপিএইচ জানায়, নতুন সম্প্রসারিত কারখানায় বিলেট উৎপাদনে ৫০ শতাংশ মূল্য সংযোজন হবে। বিলেট তৈরির কাঁচামাল পুরোনো লোহার টুকরা আমদানির পাশাপাশি দেশীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করছে কোম্পানিটি। চলতি ২০২০–২১ অর্থবছরে ১০ কোটি ডলারের ইস্পাত পণ্য রপ্তানি করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

ইস্পাত পণ্য রড বা বিলেট উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি হলো কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস। এই প্রযুক্তির উদ্ভাবক যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রাইমেটালস টেকনোলজিসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এই প্রযুক্তিতে টনপ্রতি রডসহ ইস্পাত পণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ লাগে। আবার প্রতি টন রড উৎপাদনে ৩৫ ঘনমিটার গ্যাসের সাশ্রয় হবে।