ফাহিমের শেষ, জসিমের শুরু

মো. জসিম উদ্দিন

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) দায়িত্ব নিয়েছে জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নতুন পরিচালনা পর্ষদ। অনলাইনে গতকাল বুধবার রাতে নতুন সভাপতির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন সংগঠনটির বিদায়ী সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।

দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, আবদুল মাতলুব আহমাদ ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।

অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আশা করি নতুন সভাপতি এফবিসিসিআই সংস্কারে হাত দেবেন। সাবেক সভাপতিরা সব সময় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছেন।’

নতুন সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সাবেক সভাপতিদের ধন্যবাদ। প্রতিটি মুহূর্তে তাঁরা আমার সঙ্গে ছিলেন। তাঁদের পরামর্শের কারণে আমি সভাপতি। করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা কঠিন সময় পার করছি। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে যাব। এফবিসিসিআইকে কীভাবে সক্রিয় করা যায়, গবেষণায় মনোযোগ বাড়ানো যায়, সেদিকে আমরা নজর দেব। আমাকে সভাপতি পদে মনোনয়ন দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।’

এফবিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি জসিম উদ্দিন ২০১০-১২ সালে সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছিলেন। তাঁর মালিকানাধীন বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্লাস্টিক পণ্য, আবাসন, গণমাধ্যম, তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে।

বেঙ্গল কমার্শিয়াল নামে একটি নতুন ব্যাংকেরও অনুমোদন পেয়েছেন জসিম উদ্দিন। তিনিই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। তাঁর ভাই বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম একজন সাংসদ, যিনি এখন মার্কেন্টাইল ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান।

এফবিসিসিআইয়ের নতুন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এবং রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী। এ ছাড়া নতুন ছয় সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি এম এ মোমেন, বারভিডার সাবেক সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন, মুদ্রণশিল্পের উদ্যোক্তা আমিন হেলালী, ময়মনসিংহ চেম্বারের সভাপতি আমিনুল হক, মিনিস্টার হাইটেক পার্ক লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক খান এবং পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান লাবিব গ্রুপের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আলমগীর।

আগের মেয়াদের মতো এবারও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক থেকে শুরু করে সভাপতি ও সহসভাপতি পদে সাধারণ সদস্যদের ভোট ছাড়াই সমঝোতার ভিত্তিতে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা জায়গা করে নিয়েছেন। এ জন্য সাধারণ সদস্যরা ৫ মে আর ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি।

২০২১-২৩ মেয়াদের জন্য সংগঠনটিতে মোট পরিচালক পদ ৮০টি। এসব পদ আবার দুভাগে বিভক্ত। এক ভাগে জেলাভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন বা চেম্বার থেকে ৪০ জন পরিচালক হন। বাকি পদ পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনের জন্য সংরক্ষিত। চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৩৪ জন মনোনীত পরিচালক পদের বিপরীতে আবেদন করেন ৩২ জন ব্যবসায়ী। অন্যদিকে সরাসরি ভোটের জন্য চেম্বার গ্রুপের ২৩ পরিচালক পদের বিপরীতে ২৫ জন প্রার্থী হয়েছিলেন। আর অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ২৩ পদের বিপরীতে প্রার্থী হন ২৬ জন। তবে খেলাপি হওয়ায় অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের একজন প্রার্থিতা হারান। এরপরও চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে ২ জন করে ৪ জন বেশি প্রার্থী ছিলেন। পরে সমঝোতার মাধ্যমে ৪ জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তাই আর ভোটের প্রয়োজন হয়নি।

এফবিসিসিআইয়ে সর্বশেষ ভোট হয় ২০১৭ সালে, তা-ও আংশিক। ওই সময় সভাপতি হন শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। পরিচালক পদেও চেম্বার অংশে ভোট ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। তবে পণ্যভিত্তিক সংগঠন বা অ্যাসোসিয়েশন অংশে তখন ভোট হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছিলেন অনেক ব্যবসায়ী।