বিজিএমইএর চিঠির জবাব দেননি নেটফ্লিক্সের সিইও

বিশ্বখ্যাত স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে গত ৩০ জুলাই মুক্তি পায় ডেভিড শ্যারন পরিচালিত ফরাসি চলচ্চিত্র ‘দ্য লাস্ট মার্সেনারি’। সেই চলচ্চিত্রের একটি সংলাপ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে তা প্রত্যাহারের জন্য নেটফ্লিক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টেড অ্যান্থনি স্যারান্ডেসকে গত মাসে চিঠি দিয়েছিলেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। তবে এক মাস পার হলেও নেটফ্লিক্সের সিইও সেই চিঠির কোনো জবাব দেননি।

নেটফ্লিক্সের সিইওর পাশাপাশি এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে চলচ্চিত্রটির পরিচালক ডেভিড শ্যারন, বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রসচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে চিঠি দিয়েছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি। তবে নেটফ্লিক্সের সিইওর মতো চলচ্চিত্রটির পরিচালকও ফারুক হাসানের চিঠির কোনো উত্তর দেননি গত এক মাসে।

‘দ্য লাস্ট মার্সেনারি’ চলচ্চিত্রের যে সংলাপ নিয়ে বিজিএমইএ আপত্তি করেছে, সেটি মীমাংসা না হওয়ায় আজ বুধবার আবার ঢাকায় নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ মেরিন সুহকে চিঠি দিয়েছেন ফারুক হাসান। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা নেটফ্লিক্সের সিইও ও চলচ্চিত্রের পরিচালককে আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তাঁদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি। চলচ্চিত্রটি এখনো নেটফ্লিক্সের প্লে-লিস্টে আছে। চলচ্চিত্র থেকে সেই আপত্তির সংলাপগুলোও সরিয়ে ফেলা হয়নি।’

নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য লাস্ট মার্সেনারি’ অ্যাকশন কমেডি ঘরানার ছবি। ১১২ মিনিটের চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন ডেভিড শ্যারন। গত মাসে নেটফ্লিক্সের সিইওকে দেওয়া চিঠিতে বিজিএমইএ দাবি করেছে, ‘দ্য লাস্ট মার্সেনারি’ চলচ্চিত্রটিতে বাংলাদেশের অহংকার, বাংলাদেশি পোশাক নিয়ে বিরোধী প্রচারণা ও অবমাননাকর সংলাপ আছে। চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র দি মিস্ট তাঁর সংলাপে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছে, যা জাতি হিসেবে বাংলাদেশিদের অনুভূতি ও গর্বকে আহত করে।

নেটফ্লিক্সের সিইওকে লেখা চিঠিতে ফারুক হাসান আরও উল্লেখ করেছিলেন, চলচ্চিত্রটিতে একটি সংলাপ এমন, ‘ইয়েস, বুলেটপ্রুফ ট্যাক্সেডো, মেড ইন ফ্রান্স। আই উড বি ডেড ইফ ইট ওয়্যার বাংলাদেশ।’ যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায়, ‘বুলেটপ্রুফ পোশাকটি ফ্রান্সে তৈরি। যদি এটি বাংলাদেশে তৈরি হতো, তবে হয়তো মরেই যেতাম।’ ‘তিনি নেটফ্লিক্সের সিইওকে চলচ্চিত্রটি থেকে সংলাপটি প্রত্যাহার করার অনুরোধ করার পাশাপাশি যতক্ষণ সেটি করা না হবে, ততক্ষণ চলচ্চিত্রটি প্রচার বন্ধ রাখার দাবি করেছিলেন।

এদিকে আজ ঢাকায় নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূতের পাশাপাশি প্যারিসে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেনকে চিঠি দেন বিজিএমইএর সভাপতি। উভয় চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা আমাদের পোশাকশিল্পকে বিশ্বদরবারে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছি। তাই পোশাকশিল্পকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য আমাদের ব্যথিত করেছে। আমরা এটির নিন্দা জানাই।’

ফারুক হাসান আরও লিখেছেন, ‘চলচ্চিত্রে মেইড ইন বাংলাদেশ নিয়ে যে মন্তব্য আছে, সেটি সম্পূর্ণরূপে ভুল। কারণ, বাংলাদেশ বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট তৈরি করে না। চার দশক ধরে আমরা যে পোশাক তৈরি করেছি, তা বিশ্বব্যাপী ক্রেতা ও ভোক্তাদের আস্থা অর্জন করেছে তার গুণগত মান ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্য দিয়ে।’