ভারতে প্রাণের রপ্তানি বেড়ে দ্বিগুণ

ভারতের কলকাতা, গুয়াহাটি, শিলং, আগরতলা—যেখানেই আপনি যান না কেন, সেখানকার পাড়ামহল্লায় সাধারণ দোকান কিংবা সুপারশপে একটু ঢুঁ মারলেই বাংলাদেশের প্রাণ গ্রুপের চানাচুর, চকলেট, ড্রিংকস, চিপস, বিস্কুট এসব পণ্য দেখতে পাবেন। এমনকি দিল্লি, পাঞ্জাব, গুজরাট, বিহারসহ বিভিন্ন রাজ্যেও প্রাণের পণ্য যায়।  
সুখবর হলো, বাংলাদেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারক প্রাণ গ্রুপ করোনার বছরেও ভারতে ভোগ্যপণ্য রপ্তানিতে সাফল্য দেখিয়েছে। বিদায়ী ২০২০–২১ অর্থবছরে ভারতে প্রাণের রপ্তানি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত অর্থবছরে দেশটিতে ৬ কোটি মার্কিন ডলারের ভোগ্যপণ্য রপ্তানি করেছে প্রাণ, যা বাংলাদেশের প্রায় ৫১০ কোটি টাকার মতো (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। আগের বছর ভারতে সাড়ে তিন কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল।  

প্রাণ গ্রুপ ১৯৯৭ সালে প্রথমবারের মতো ভারতে রপ্তানি শুরু করে। ওই বছর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় চানাচুর রপ্তানি করে। এরপর দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর পাশাপাশি এক এক করে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, বিহার, গুজরাট, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, কেরালাসহ ২৮টি রাজ্যে প্রাণের ভোগ্যপণ্য রপ্তানি বিস্তৃত হয়।

প্রাণ গ্রুপ ১৯৯৭ সালে প্রথমবারের মতো ভারতে রপ্তানি শুরু করে। ওই বছর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় চানাচুর রপ্তানি করে। এরপর দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর পাশাপাশি এক এক করে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, বিহার, গুজরাট, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, কেরালাসহ ২৮টি রাজ্যে প্রাণের ভোগ্যপণ্য রপ্তানি বিস্তৃত হয়। তবে ৫০ শতাংশের মতো পণ্য রপ্তানি হয় ত্রিপুরা, আসাম, মিজোরাম, মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যে, যেগুলো ‘সেভেন সিস্টার’ নামেও পরিচিত। এসব রাজ্যে গত অর্থবছরে প্রায় আড়াই শ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এখন ধীরে ধীরে ভারতের মূল ভূখণ্ডের রাজ্যগুলোতেও রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে।
যেসব ভোগ্যপণ্য রপ্তানি হয়

প্যাকেটজাত ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ভারতের বাজারে প্রাণের রপ্তানি বেড়েছে। এই প্রবণতা শুধু ভারত নয়, বিশ্বজুড়েই প্যাকেটজাত তৈরি খাবারের চাহিদা বেড়েছে।
কামরুজ্জামান কামাল, পরিচালক (বিপণন), প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ

আড়াই দশক আগে চানাচুর দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে প্রাণের রপ্তানি ঝুড়িতে আছে হরেক রকমের পণ্য। যেমন ফ্রুটস ড্রিংকস, চিপস, স্ন্যাকস, বিস্কুট, ক্যান্ডি, সস, কেচাপ, নুডলস, জেলি, মসলা ইত্যাদি। তবে প্রাণের পটেটো বিস্কুট, লিচি ড্রিংকস, পটেটো ক্র্যাকার্স ভারতের বাজারে বেশ জনপ্রিয়। ভারতের বিভিন্ন স্যাটেলাইট টিভি চানেলে হরহামেশা এসব পণ্যের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিধিনিষেধের কারণে রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া কমে গেছে। জাঙ্ক ফুডের চাহিদা কমেছে। মানুষের মধ্যে ঘরে বসে প্যাকেটজাত তৈরি খাবার খাওয়ার আগ্রহ বেড়েছে। তাই প্যাকেটজাত ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ভারতের বাজারে প্রাণের রপ্তানি বেড়েছে। এই প্রবণতা শুধু ভারত নয়, বিশ্বজুড়েই প্যাকেটজাত তৈরি খাবারের চাহিদা বেড়েছে।

তিন বছরের রপ্তানির চিত্র
প্রাণ গ্রুপ করোনা শুরু হওয়ার আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতে ৪ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা বাংলাদেশের প্রায় চার শ কোটি টাকা। পরের অর্থবছরেও বেশ ভালোভাবেই যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ২০২০ সালের এপ্রিল ও মে মাসে কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় ওই সময়ে ভারতে প্রাণের পণ্য রপ্তানি হয়নি বললেই চলে। ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে রপ্তানির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় সাড়ে ৩ কোটি ডলার, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে আধা কোটি বা ৫০ লাখ ডলার কম। তবে বিদায়ী ২০২০–২১ অথর্বছরজুড়ে লকডাউন বা বিধিনিষেধ কখনো কঠোর, কখনোবা শিথিল থাকায় রপ্তানি ঘুরে দাঁড়ায় এবং বছর শেষে ৬ কোটি ডলারে উন্নীত হয়।

চাহিদা থাকায় ভারতের বাজারে প্রাণ গ্রুপের পণ্য রপ্তানি ক্রমে বাড়ছে। প্রাণ গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিবছর দেশটিতে তাদের পণ্য রপ্তানি গড়ে ২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। শুধু ভারত নয়, এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বহু দেশে এখন প্রাণের পণ্য রপ্তানি হয়। তবে ভারতই বৃহত্তম বাজার, যেখানে তাদের মোট রপ্তানির ২০ থেকে ২৫ শতাংশ যায়।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পাড়ামহল্লার সাধারণ দোকানের পাশাপাশি চেইনশপ ও অনলাইন শপগুলোতেও এখন প্রাণের পণ্য পাওয়া যায়। বিভিন্ন দেশের নামীদামি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এসব চেইনশপের র‍্যাকে শোভা পাচ্ছে মেড ইন বাংলাদেশি পণ্য প্রাণের ভোগ্যপণ্য।

সুপারশপ ও অনলাইন শপে প্রাণ
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পাড়ামহল্লার সাধারণ দোকানের পাশাপাশি চেইনশপ ও অনলাইন শপগুলোতেও এখন প্রাণের পণ্য পাওয়া যায়। বিভিন্ন দেশের নামীদামি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এসব চেইনশপের র‍্যাকে শোভা পাচ্ছে মেড ইন বাংলাদেশি পণ্য প্রাণের ভোগ্যপণ্য। যেসব সুপারশপ ও অনলাইন শপে প্রাণের পণ্য পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সেন্সর রিটেইল, ডি-মার্ট, মোর রিটেইল, মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি, বিগ বাস্কেট অনলাইন, আমাজন ইন্ডিয়া, গ্রোফারস, উড়ান অনলাইন স্টোর।

রপ্তানির পথ মসৃণ নয়
বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়েই ভারতে রপ্তানি হয় প্রাণের পণ্য। ভোগ্যপণ্য রপ্তানি বলে নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রথমেই পণ্যের মান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। পণ্য খালাসেও সময় লাগে। প্রাণ গ্রুপের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দুই দেশের মধ্যে মিউচুয়াল রিকগনিশন অ্যাগ্রিমেন্ট না থাকায় সীমান্তে গিয়ে ভোগ্যপণ্যের নমুনা ভারতের বিভিন্ন পরীক্ষাগারে পাঠাতে হয়। পরীক্ষাগার থেকে মান উত্তীর্ণ হওয়ার সনদ না আসা পর্যন্ত পণ্যের চালান বন্দরের আশপাশে গুদামে পড়ে থাকে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও সিলেটের তামাবিল দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে প্রাণের যেসব ভোগ্যপণ্যের চালান যায়, সব কটির পরীক্ষা করাতে হয় আসামের গুয়াহাটি পরীক্ষাগারে। এতে সময় লাগে ২০ থেকে ৪০ দিন। পণ্যের চালান সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো গুদামে রেখে মান সনদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
বেনাপোল, ভোমরাসহ পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে যাওয়া পণ্যের নমুনা পরীক্ষা করাতে হয় কলকাতার পরীক্ষাগারে। সেখানেও ২০–৪০ দিন সময় লাগে। এতে পণ্য ব্যবহারের মেয়াদ কমে যায়। গুণগত মানও নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার সীমান্তেই বাংলাদেশ ট্রাক থেকে পণ্য খালাস করে ভারতীয় ট্রাকে তুলতেও সময় নষ্ট হয়। সব মিলিয়ে পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়ে।