ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষে এখনো অগ্রগতি শূন্য

ভেনামি চিংড়ি
ছবি: সংগৃহীত

হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি আয় বাড়াতে কয়েক বছর ধরে দেশে উচ্চফলনশীল জাতের ভেনামি চিংড়ির চাষ নিয়ে তোড়জোড় চলছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি সংস্থা সুশীলন ও এমইউসি ফুডস অনুমতি পেয়েও খুলনার পাইকগাছায় ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করতে পারেনি। সে জন্য কবে নাগাদ দেশে চিংড়ির এই উচ্চফলনশীল জাতের চাষ শুরু করা যাবে, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।

চট্টগ্রামের অ্যাগ্রি বিজনেস এন্টারপ্রাইজকে কক্সবাজারে পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষ করতে গত রোববার অনুমতি দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে দেশের বাইরে থেকে ভেনামির পোনা আমদানি করবে। তারপর অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) পরীক্ষাগারে প্রয়োজনীয় রোগজীবাণু পরীক্ষা শেষে চাষ কার্যক্রম শুরু হবে।

উদ্যোক্তারা জানান, গলদা ও বাগদা চিংড়ির চাষ বছরে একবারের (চাষের সময় মারা গেলে দুবার) বেশি করা যায় না। আর ভেনামি চাষ করা যায় বছরে তিনবার। সাধারণ পুকুরে প্রতি হেক্টরে ৩০০-৪০০ কেজি বাগদা চিংড়ি উৎপাদন করা যায়। অন্যদিকে একই পরিমাণ জমিতে সাত-আট হাজার কেজি ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব। ভারতে ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পাঁচ বছর সময় লেগেছিল। বাংলাদেশে তিন বছরের মধ্যে সম্ভব। তবে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে—এমন যুক্তিতে দীর্ঘদিন ভেনামি চাষে উৎসাহ বা অনুমতি কোনোটাই দেয়নি মৎস্য অধিদপ্তর।

ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষের জন্য আমরা ছয়টি পুকুর প্রস্তুত করেছিলাম। তবে গত মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে পুকুরে পানিতে প্রয়োজনীয় লবণাক্ততা ছিল না। সে কারণে পোনা আমদানির প্রক্রিয়া থেকে পিছিয়ে যাই আমরা।
সুশীলনের প্রধান নির্বাহী মোস্তফা নুরুজ্জামান

গত বছর অনুমতি পেয়েও ভেনামির চাষ শুরু করতে না পারার কারণ জানতে চাইলে সুশীলনের প্রধান নির্বাহী মোস্তফা নুরুজ্জামান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষের জন্য আমরা ছয়টি পুকুর প্রস্তুত করেছিলাম। তবে গত মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে পুকুরে পানিতে প্রয়োজনীয় লবণাক্ততা ছিল না। সে কারণে পোনা আমদানির প্রক্রিয়া থেকে পিছিয়ে যাই আমরা। তবে আশা করছি, সামনের ফেব্রুয়ারিতে পোনা আমদানি করে চাষ শুরু করতে পারব।’

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পানিতে প্রয়োজনীয় লবণাক্ততা না থাকায় গত মৌসুমে ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করা যায়নি। করোনার কারণেও পিছিয়ে গেছি আমরা। তবে আশা করছি, খুলনা ও কক্সবাজারে আগামী ফেব্রুয়ারিতে একসঙ্গে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করা যাবে।’ তিনি বলেন, ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষের প্রতিটি ধাপে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি নিতে হচ্ছে। সে কারণে পুরো প্রক্রিয়া শ্লথগতিতে এগোচ্ছে।

ভালোই ক্রয়াদেশ আসা শুরু করেছিল। তবে ইউরোপে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কা থাকায় ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দিতে কিছুটা চিন্তাভাবনা করছেন।
বিএফএফইএর সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন

বিএফএফইএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রায় পৌনে তিন লাখ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়। তবে দিন দিন রপ্তানির পাশাপাশি চিংড়ির উৎপাদনও কমেছে। যেমন গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৪ হাজার ৭৩৩ মেট্রিক টন বাগদা ও ৬ হাজার ৫০৩ মেট্রিক টন গলদা চিংড়ি উৎপাদিত হয়। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন কমে ২৪ হাজার ৩৯৬ মেট্রিক টনে নেমেছে। আর গলদা চিংড়ি উৎপাদন কমে হয়েছে ৫ হাজার ১৪৬ মেট্রিক টন।

অন্যদিকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫৫ কোটি ডলারের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়, যা পরের অর্থবছরে কমে ৫১ কোটি ডলারে নামে। এর পরের চার অর্থবছরও ধারাবাহিকভাবে চিংড়ি রপ্তানি কমেছে। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৩৩ কোটি ডলারের।

বিএফএফইএর সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন বলেন, ভালোই ক্রয়াদেশ আসা শুরু করেছিল। তবে ইউরোপে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কা থাকায় ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দিতে কিছুটা চিন্তাভাবনা করছেন।