ভোট নয়, মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন আগামী এপ্রিলে হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা পিছিয়ে যেতে পারে। পর্ষদের একটি অংশ বর্তমান কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। আরেকটি অংশ বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংগঠনটির নির্বাচনকেন্দ্রিক তিন জোটের মধ্যে সম্মিলিত পরিষদের নেতারা।  

গত অক্টোবরে সম্মিলিত পরিষদের নেতারা নির্বাচনের প্রস্তুতি সভা করে প্যানেল লিডার বা সভাপতি প্রার্থী হিসেবে জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হাসানকে চূড়ান্ত করেন। অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন তিনি। এর বিপরীতে সংগঠনটির নির্বাচনকেন্দ্রিক আরেক জোট ফোরাম খানিকটা চুপচাপ। বর্তমানে বিজিএমইএর সভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালকদের অধিকাংশই এই জোটের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৩ ডিসেম্বর অনলাইনে বিজিএমইএর এক বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে একজন সহসভাপতি করোনা পরিস্থিতির কারণে বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব তোলেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে পর্ষদের সদস্যদের একটি অংশ বিরোধিতা করে। আরেকটি অংশ পক্ষে বক্তব্য দেয়। মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনায় বিব্রত হয়ে সভা ত্যাগ করেন সভাপতি রুবানা হক। পরে বিষয়টি নিয়ে শিগগির একটি বিশেষ বোর্ড সভা করার সিদ্ধান্ত হয়।

‘আশা করছি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আমাদের প্রাথমিক তালিকায় আমিসহ ৬৫ জনের নাম রয়েছে। তারপর ভোটার তালিকা প্রকাশ হলেই আমরা যাচাইবাছাই করে প্রার্থী চূড়ান্ত করব।’
ফারুক হাসান, সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিএমইএর একজন সহসভাপতি বলেন, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ইউরোপের দেশগুলো আবার লকডাউনে যাচ্ছে। তাই নতুন করে ক্রয়াদেশ আসা কমে গেছে। সব মিলিয়ে এই কঠিন পরিস্থিতিতে বর্তমান কমিটির মেয়াদ অন্তত ছয় মাস বাড়ানো প্রয়োজন। সংগঠনের সাবেক সভাপতিদের পরামর্শ নিয়েই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অন্যদিকে বিজিএমইএর পরিচালক মোহাম্মদ নাছির প্রথম আলোকে বলেন, করোনার মধ্যেও দেশে উপনির্বাচন হয়েছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। যেখানে সবকিছু হচ্ছে, সেখানে বিজিএমইএর নির্বাচন হতে তো কোনো অসুবিধা নেই। তা ছাড়া যাঁরা নতুন নেতৃত্বে আসবেন, তাঁরা অভিজ্ঞ। ফলে পরিস্থিতি সামলানো নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

বিষয়টি নিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পোশাকশিল্প মালিকদের এ সংগঠনটিতে নির্বাচনকেন্দ্রিক বড় দুটি জোট রয়েছে। তাদের একটি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করলেও অপর জোট বর্তমান কমিটির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

প্রায় ৩০০ সদস্য নিয়ে গত ২৬ অক্টোবর একটি মতবিনিময় সভা করে সম্মিলিত পরিষদ। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, বিজিএমইএর নেতৃত্ব নির্বাচনে ফোরামের সঙ্গে আর কোনো সমঝোতায় যাবে না পরিষদ। এখন এসে ভোটের পক্ষে অবস্থান নিলেও ৫ বছর আগে সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম পারস্পরিক সমঝোতার চুক্তির মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের পথ বেছে নিয়েছিল।

জানতে চাইলে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার প্রার্থী ফারুক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করছি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আমাদের প্রাথমিক তালিকায় আমিসহ ৬৫ জনের নাম রয়েছে। তারপর ভোটার তালিকা প্রকাশ হলেই আমরা যাচাইবাছাই করে প্রার্থী চূড়ান্ত করব।’

এদিকে, বিজিএমইএর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে স্বাধীনতা পরিষদ নামে একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। গতবারের নির্বাচনে তাদের নিবৃত্ত করতে নানামুখী চেষ্টা হলেও শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে অংশ নেয়। সে কারণেই ঢাকায় নিয়ম রক্ষার ভোট হয়েছিল। যদিও সেই ভোটে বড় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেননি স্বাধীনতা পরিষদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্মিলিত পরিষদ নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করলেও এখনো চুপচাপ ফোরাম। ভোটের চিন্তার বদলে ফোরামের নেতারা নির্বাচনী সমঝোতা বা বর্তমান কমিটির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। সে কারণে তাদের লিডারও চূড়ান্ত হয়নি।

ফোরামের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্মিলিত পরিষদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। তবে সেটি হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্যানেল লিডার হিসেবে বর্তমান সভাপতি রাজি হলেও তা এখনো চূড়ান্ত নয়।