যশোরে চামড়ার হাটে মন্দা

ক্রেতা আসতে না পারায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বড় চামড়ার হাটটি এবার জমে ওঠেনি। গতকাল যশোরের রাজারহাটে।
ছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মন্টু মণ্ডল ২০টি গরুর চামড়া নিয়ে যশোর অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মোকাম রাজারহাটে আসেন। প্রতিটি চামড়ার দাম ৪৫০ টাকার বেশি বলেননি ক্রেতারা। অথচ গ্রাম থেকে কিনে লবণ মাখানোসহ প্রতিটি চামড়ায় তাঁর খরচ পড়েছে ৬২০ টাকা। একেকটি চামড়ায় ১৭০ টাকা লোকসানের শঙ্কা নিয়ে তাঁকে ওই চামড়া নিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে থাকতে দেখা গেছে।

অধিকাংশ প্রান্তিক ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীই এবারে মন্টু মণ্ডলের মতো দুরবস্থায় পড়েছেন। ঈদের পরে গতকাল শনিবারই ছিল যশোরের রাজারহাটে প্রথম হাটবার। সেখানে গিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের মৌসুমি ব্যবসায়ীদের চামড়া নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু বিধিনিষেধের কারণে বাইরের ব্যাপারীরা হাটে আসতে পারেননি। ফলে বাজারে যে পরিমাণ চামড়া উঠেছে, সেই তুলনায় ক্রেতা ছিলেন কম।

রাজারহাটে সরকার নির্ধারিত গরুর চামড়া প্রতি ফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ও ছাগলের চামড়া ১৭ টাকা দরে কেনা হচ্ছে না। বরং পিস হিসেবে চামড়া বেচাকেনা হতে দেখা গেছে। এতে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

মন্টু মণ্ডল বলেন, ‘লবণ দিয়ে সংরক্ষণ ও শ্রমিকের খরচ মিলে প্রতিটা গরুর চামড়ায় ৬২০ থেকে ৬৪০ টাকা খরচ হয়েছে। সেই চামড়া বাজারে ব্যাপারীরা ৪৫০ টাকা করে বলছেন। এই দামে বিক্রি করলে প্রতিটা চামড়ায় ১৫০ টাকার বেশি লোকসান হবে। আবার চামড়া বাড়িতে ফিরিয়ে নিলেও খরচ আরও বাড়বে। উভয় সংকটে পড়েছি।’

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার এড়েন্দা গ্রামের বিশ্বনাথ দাস বলেন, ‘৩০টি গরু ও ১৬০টি ছাগলের চামড়া নিয়ে হাটে এসেছি। সব চামড়া বিক্রি হয়ে গেছে। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারিনি। পিস হিসেবে ক্রেতারা চামড়া কিনেছেন। তবে হিসাব করে দেখেছি, প্রতি ফুট গরুর চামড়া ৩০ আর ছাগলের চামড়া ১৪ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এবার কোনোরকমে চালান বেঁচেছে।’

রাজারহাট চামড়া মোকামের ইজারাদার হাসানুজ্জামান জানান, গত বছর কোরবানির ঈদের পরে প্রথম হাটে গরু ও ছাগল মিলিয়ে অন্তত এক লাখ চামড়া উঠেছে। কিন্তু এবারে উঠেছে মাত্র ২০ হাজারের মতো। বিধিনিষেধের কারণে ঢাকা, নাটোরসহ বিভিন্ন এলাকার বড় ব্যবসায়ীরা আসতে পারেননি। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা ট্যানারি শিল্পমালিকদের কাছ থেকে তাঁদের বকেয়া টাকা পাননি বলে চামড়া কিনতে পারেননি। যে কারণে চামড়ার বাজারে মন্দাভাব চলছে।

কোরবানির ঈদের পরে প্রান্তিক পর্যায়ের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এবারে গ্রাম থেকে চামড়া সংগ্রহ করে নিজেরাই লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে রাজারহাট মোকামে আনেন। সেই চামড়া কিনে নিয়ে ব্যাপারীরা ঢাকার পোস্তা এলাকার চামড়ার আড়তে বিক্রি করেন। আবার পোস্তার আড়তদারদের কাছ থেকে ওই চামড়া বাকি বা নগদে কিনে নেন ট্যানারি শিল্পমালিকেরা।