তৈরি পোশাক
যুদ্ধের মধ্যেও রাশিয়ায় রপ্তানি হচ্ছে
বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা এখন ক্রেতাদের কাছ থেকে ঋণপত্র খোলার পাশাপাশি ৩০-৫০ শতাংশ অগ্রিম অর্থ দেওয়ার শর্তও আরোপ করছেন।
ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রভাব বেশ ভালোভাবেই পড়েছে বাংলাদেশে। তবে যুদ্ধের মধ্যেও তৈরি পোশাক রপ্তানি বন্ধ হয়নি। এমনকি রপ্তানি হওয়া পোশাকের অর্থও পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অবশ্য রপ্তানি আগের চেয়ে কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।
বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় নিয়মিত পোশাক রপ্তানি করেন এমন কয়েকজন রপ্তানিকারক আলাপকালে প্রথম আলোকে জানান, যুদ্ধের অনিশ্চয়তায় রাশিয়ার ক্রেতাদের কাজ কমিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতাদের কাছ থেকে ঋণপত্র (এলসি) খোলার পাশাপাশি ৩০-৫০ শতাংশ অর্থ অগ্রিম দেওয়ার শর্তও আরোপ করা হচ্ছে। সেই শর্ত পূরণ করলেই কেবল পোশাক তৈরি করেন তাঁরা।
রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এককাট্টা হয়ে রাশিয়ার ওপর নানামুখী নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তারা আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট থেকে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে বের করে দেয়। এ ছাড়া বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানিগুলো রাশিয়ায় পণ্য পরিবহন বন্ধ করে। এতে দেশটির সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি জটিল হয়ে পড়ে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় ৪৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, অর্থাৎ মাসে গড়ে ৬ কোটি ডলারের পোশাক গেছে পুতিনের দেশে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরের দুই মাস মার্চ-এপ্রিলে ৫ কোটি ৭৪ লাখ ডলার বা মাসে গড়ে ২ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের পোশাক গেছে।
গ্রীন লাইফ নিটটেক্স নামের পোশাক কারখানা গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ায় ২ লাখ ৩৫ হাজার ডলার মূল্যের বিভিন্ন ধরনের পোশাক রপ্তানি করেছে। পরদিনই যুদ্ধ শুরু হয়। সে কারণে ক্রেতার অনুমোদিত আলফা ব্যাংক অব রাশিয়ায় প্রয়োজনীয় নথি পাঠাতে পারছিল না প্রতিষ্ঠানটি। তাতে অর্থ পাওয়া নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হালিম বিশ্বাস সম্প্রতি বলেন, ‘গত ঈদের আগেই পাওনা অর্থ পেয়েছি। ১ লাখ ৫ হাজার ডলারের আরেকটি ছোট ক্রয়াদেশ আছে, ১০ হাজার পিস জ্যাকেট রপ্তানির। অনিশ্চয়তা এড়াতে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫০ শতাংশ অর্থ অগ্রিম টিটির মাধ্যমে পরিশোধ করতে বলেছি। সেটি পেলে উৎপাদন শুরু করব।’
রাশিয়ার একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে পণ্য রপ্তানি করেও যুদ্ধের কারণে অর্থ পাচ্ছিল না ফ্যাশন ডটকম। ১৬০-১৭০ দিন পর সম্প্রতি ১৭ হাজার ডলার পেয়েছে তারা। এখনো প্রতিষ্ঠানটির পাওনা প্রায় ১০ হাজার ডলার। ১৭ হাজার ডলার পাওয়ার আগপর্যন্ত ৩ লাখ ডলারের একটি ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছে তারা। সেই অর্থ আসার পর পোশাক তৈরি কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ফ্যাশন ডটকমের এমডি খান মনিরুল আলম বলেন, ‘ক্রয়াদেশের প্রায় ৫০ শতাংশ অর্থ পাওয়ার পর রাশিয়ার কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে তারা ব্যাংকিং সমস্যাও মিটিয়ে ফেলেছে। রপ্তানি হওয়া পণ্যের অর্থ আমরা এখন ডলারেই পাচ্ছি।’
রাশিয়ায় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারকদের একটি হলো তুসুকা গ্রুপ। এই শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া থেকে বাড়তি ক্রয়াদেশ নিচ্ছি না। বলতে পারেন, সতর্ক পায়ে এগোচ্ছি। নিরুপায় হলে কিছু কাজ করছি। রপ্তানির অর্থ পেতেও বর্তমানে সমস্যা হচ্ছে না।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আরশাদ জামাল বলেন, ‘এইচঅ্যান্ডএম, জারা, বারবেরিসহ বড় কয়েকটি ব্র্যান্ড ব্যবসা বন্ধ করলেও সমস্যা নেই। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। যদিও তাতে আমাদের খুব একটা লাভ হবে না। কারণ, স্থানীয় নতুন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বৈশ্বিক বাজার থেকে পোশাক কেনার মতো সক্ষমতা দ্রুত গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাদের মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমেই কিনতে হবে। ভাষাগত সমস্যাও আছে। ব্যাংকিং সমস্যাও আছে।’
এদিকে রাশিয়ার মতো ইউক্রেনেও পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। তবে পরিমাণটি খুবই কম। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে দেশটিতে সাড়ে ১৮ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এপ্রিল শেষে সেটি বেড়ে হয়েছে ২০ লাখ ডলার। মানে, গত দুই মাসে মাত্র দেড় লাখ ডলারের পোশাক ইউক্রেন গেছে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাশিয়ায় রপ্তানি যে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, এটিই আমাদের জন্য ইতিবাচক। যুদ্ধের কারণে তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা, যুদ্ধের পর রাশিয়ার বাজারে আমরা আবার ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াব।’