শিল্পকারখানা খুলে দিতে অনুরোধ ব্যবসায়ীদের

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা খুলে দিতে সরকারকে অনুরোধ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তাঁরা বলেছেন, শিগগিরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্পকারখানা চালু করার সুযোগ না দিলে পণ্য রপ্তানির ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব কথা বলে। প্রতিনিধিদলে ছিলেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান ও সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমানসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা উপস্থিত ছিলেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন
ফাইল ছবি

বৈঠকে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধে সব শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এতে উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সবাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তা ছাড়া পণ্যসামগ্রী প্রয়োজন অনুযায়ী উৎপাদন ও বাজারজাত না হলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এতে স্বল্প আয়ের ক্রেতারা ভোগান্তির শিকার হবেন। পাশাপাশি রপ্তানি খাতের উৎপাদন ব্যবস্থা বন্ধ থাকলে সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণ সম্ভব হবে না। তেমনটি হলে রপ্তানি ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, চলমান বিধিনিষেধে ক্ষুদ্র ও ছোট কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় উদ্যোক্তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই কারখানাগুলো পুনরায় চালু রাখা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। এ অবস্থায় রপ্তানি ও উৎপাদন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো শিল্পকারখানা সচল রাখার বিষয়ে উদ্যোগ নিতে এফবিসিসিআইয়ের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে চলতি বছরের এপ্রিলে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করলেও রপ্তানিমুখী পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা উৎপাদন চালানোর সুযোগ পায়। সর্বশেষ গত ২৮ জুন শুরু হওয়া সীমিত ও পরে ১ থেকে ১৪ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধেও পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা চালু ছিল। তবে ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোরতম বিধিনিষেধে সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ থাকবে সেই প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে সরকারের সঙ্গে দেনদরবারে নামেন পোশাক ও বস্ত্র খাতের পাঁচ সংগঠনের নেতারা। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দেন তাঁরা। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই কাজে আসেনি। সরকার নমনীয় হয়নি। ফলে চামড়া, ওষুধ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প ছাড়া অধিকাংশ শিল্পকারখানা আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ।

আরও পড়ুন

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সময়মতো পণ্য রপ্তানি করা নিয়ে পোশাকশিল্পের মালিকেরা দুশ্চিন্তায় আছেন। সময়মতো পণ্য দিতে না পারলে ক্রয়াদেশ বাতিল হবে, না হলে উড়োজাহাজে বিপুল অর্থ খরচ করে ক্রেতাদের কাছে পাঠাতে হবে। সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে সোয়েটার কারখানাগুলো। তা ছাড়া কারখানা বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের টিকাদান কর্মসূচিও এড়িয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। যদিও ঈদের আগে ৩০ হাজার শ্রমিককে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সভায় সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরে আমরা যত দ্রুত সম্ভব শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার অনুরোধ করেছি।’

অন্যদিকে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে সভায় কারখানা বন্ধ থাকায় কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো আমরা তুলে ধরেছি। তিনি (মন্ত্রিপরিষদ সচিব) বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।’

চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় হয়। তাতে সিদ্ধান্ত হয়, চলমান বিধিনিষেধে শিল্পকারখানা খোলার জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকলেও তা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। তার মানে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা বন্ধই থাকছে।