সপ্তম প্রজন্মের হাতে নেতৃত্ব

হাজি মোহাম্মদ হাশিমের হাত ধরে ২০২ বছর আগে ১৮২০ সালে ভারতের মুম্বাই শহরে ইস্পাহানি পরিবারের ব্যবসা শুরু হয়। ছয় প্রজন্ম পেরিয়ে ইস্পাহানি গ্রুপে এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন মির্জা মেহদী (সাদরি) ইস্পাহানির চতুর্থ সন্তান মির্জা সালমান ইস্পাহানি।

ঢাকায় বেড়ে ওঠা মির্জা সালমান ইস্পাহানি যুক্তরাজ্য থেকে ব্যারিস্টার অ্যাট ল ডিগ্রি নিয়েছেন। তবে কখনো আইন পেশায় ছিলেন না। ১৯৮২ সালে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হন। ২০১৭ সালে বড় ভাই মির্জা আলী বেহরুজ ইস্পাহানির মৃত্যুর পর থেকে পাঁচ বছর ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার আগে দুই দশক ধরে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ইস্পাহানি পরিবার থেকে হঠাৎ কেউ গ্রুপটির উচ্চ পদে বসেননি। ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে পদোন্নতি পেয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছেন পারিবারিক প্রতিষ্ঠানকে। এভাবে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে যাওয়ার পর ব্যবসা সম্পর্কে তাঁদের অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ হয়। তাতে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন দ্রুত। পারিবারিক মূল্যবোধ আর প্রতিষ্ঠানের করপোরেট সংস্কৃতির কারণে সুদীর্ঘকাল ধরে ইস্পাহানির ব্যবসা কখনো থেমে থাকেনি। পরিবারের কোনো সদস্যের সিদ্ধান্তকে পরিবারের অন্য সদস্যরা সম্মান করেন। প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সবাই একযোগে কাজ করেন।

বর্তমান চেয়ারম্যান মির্জা সালমান ইস্পাহানি গ্রুপটির নেতৃত্ব ছাড়াও ব্যবসায়ী সংগঠন ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। মাত্র ২৭ বছর বয়সে চা–ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হয়েছেন তিনি। চা-বাগানমালিকদের সংগঠনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বস্ত্র খাতের মৌলিক কাঁচামাল তুলা বেচাকেনার বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থায়ও নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ‘ইন্টারন্যাশনাল কটন অ্যাসোসিয়েশনে’র সভাপতি হিসেবে ২০১৭-১৮ সালে দায়িত্ব পালন করে রেকর্ড গড়েছেন তিনি। তুলার ক্রেতা ক্যাটাগরিতে সংগঠনটির ১৭৫ বছরের ইতিহাসে তিনিই প্রথম সভাপতি হন। আবার বস্ত্র খাতের বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স ফেডারেশনের অন্যতম বোর্ড সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকসহ বহু সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

এত কিছু কীভাবে সামলান? মির্জা সালমান ইস্পাহানি জবাব দিলেন, ‘করপোরেট কাঠামো বহু বছর ধরে চর্চা করে আসছি আমরা। যোগ্য লোককে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছি। প্রতি তিন মাস পর বোর্ড সভা হয়। সেখানে আলোচনা-পর্যালোচনা হয়। লক্ষ্যমাত্রা থাকে। সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেন বলে সমস্যা হয় না।’

বর্তমানে এম এম ইস্পাহানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন মির্জা সালমান ইস্পাহানির ভাই মির্জা শাকির ইস্পাহানি, পরিচালক হিসেবে আছেন আরেক ভাই সাজিদ ইস্পাহানি, বড় ভাই প্রয়াত মির্জা আলী বেহরুজ ইস্পাহানির স্ত্রী জাহিদা ইস্পাহানি এবং চাচাতো ভাই ইরাজ ইস্পাহানি ও এমাদ ইস্পাহানি। মির্জা সালমান ইস্পাহানির ছেলে মির্জা আহমদ ইস্পাহানিও যুক্ত হয়েছেন পারিবারিক ব্যবসায়। তিনি অষ্টম প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আগামী দিনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে অষ্টম প্রজন্মও।