সম্ভাবনা বেশি জ্বালানি, সিমেন্ট ও স্বাস্থ্য খাতে

এই সম্মেলনে বিদেশিদের সামনে দেশের ব্র্যান্ডিং হয়েছে। বাংলাদেশের ১১টি খাতে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)

রেকর্ডসংখ্যক উদ্যোক্তার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে দুই দিনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন শেষ হয়েছে। এই সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ কী পেল, তার হিসাব-নিকাশ চলছে এখন। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা অবশ্য তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন। অন্যদিকে দেশের ব্যবসায়ীরাও বেশ খুশি। উভয় পক্ষের দাবি, দীর্ঘদিন পর বিদেশিদের সামনে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করা গেছে। তবে এ দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সময় বেঁধে দিয়ে সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

গত রবি ও সোমবার রাজধানীর র‌্যাডিসন হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় দুই দিনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন। আয়োজন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। ৫৪টি দেশের উদ্যোক্তারা এবারের সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালে শেষবারের মতো বিদেশিদের সামনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরেছিল বিডা। মাঝখানে করোনা মহামারির দেড় বছর অনেকটা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল বাংলাদেশ।

বিডার কর্মকর্তারা বলছেন, এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে বাংলাদেশে ব্যাপক সম্ভাবনাময় ১১টি খাত বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ফলে দেশের সিমেন্ট, জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে সৌদি আরব। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যেসব প্রতিশ্রুতি মিলেছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের স্বাস্থ্য, সিমেন্ট, জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন বিডার কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এটা ইতিবাচক।

বিডার তথ্য অনুযায়ী এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে মোট ২৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি মিলেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সৌদি আরবের ১৭৫ কোটি, চীনের ১৭ কোটি, তুরস্কের ১৫ কোটি ও যুক্তরাষ্ট্রের দেড় কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি উল্লেখযোগ্য। দেশীয় একটি কোম্পানি থেকেও ১২ কোটি ডলারের বিনিয়োগ-প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। সরকারের সঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে চুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া কিছু প্রকল্প নিয়ে সই হয়েছে সমঝোতা স্মারক।

তথ্য বলছে, সৌদি আরবের সঙ্গে সরকারের যে ১৭৫ কোটি ডলারের চুক্তি সই হয়েছে, তা দিয়ে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। এর একটি হলো, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের আধুনিকায়ন প্রকল্প। ক্যানসার শনাক্তকরণ ও আধুনিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটকে নতুন করে সাজানো হবে। কাজটি করবে সৌদি প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন। এ ছাড়া বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের আওতায় ছাতক সিমেন্ট কোম্পানিকে নতুন করে সাজানো হবে। এখানেও বিনিয়োগ করছে ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন। তারা লাফার্জহোলসিমের মতো ভারতের মেঘালয় থেকে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ কনভেয়ার ভেল্ট তৈরি করবে। নতুন যে প্রতিষ্ঠান কাজটি করবে, তার নাম দেওয়া হয়েছে সৌদি-বাংলা সিমেন্ট কারখানা। এর মাধ্যমে দেশেই সিমেন্টের ক্লিঙ্কার পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে ছাতকে সিমেন্টের উৎপাদন বাড়বে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন এবং যোগাযোগ খাতেও বিনিয়োগ করবে ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন।

জানা গেছে, সৌদি আরবকে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিনিয়োগ করতে দীর্ঘদিন ধরে অনুরোধ জানিয়ে আসছে সরকার। বিনিয়োগের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন সৌদি আরবের পরিবহনমন্ত্রী।

বিনিয়োগ সম্মেলনে চুক্তি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আইটি হাব ইনভেস্টমেন্টের সঙ্গে। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করবে তারা।