সম্মিলিতের সঙ্গে স্বাধীনতা লড়াইয়ে এখন দুই জোট

সংগঠনের ৩৫ পদের বিপরীতে সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের ৯৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে স্বাধীনতা পরিষদের ২ জন আছেন।

তিন বছর আগে হঠাৎ করেই তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীনতা পরিষদ। তার পেছনের মূল কারিগর হচ্ছেন ডিজাইন অ্যান্ড সোর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। নানামুখী চাপের পরও স্বাধীনতা পরিষদ প্রার্থী দেওয়ায় গতবার সংগঠনটিতে নেতৃত্ব নির্বাচনে ঢাকায় নিয়ম রক্ষার ভোট হয়েছিল।

অবশ্য চলতি বছর সম্মিলিত পরিষদের সঙ্গে একীভূত হয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাধীনতা পরিষদ। যদিও ২০১৯ তাদের মনোনয়নপত্র ছিনতাই ও মারধরের শিকার হয়েছিলেন জোটের কয়েকজন নেতা-কর্মী।

সম্মিলিত ও স্বাধীনতা পরিষদ জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আগামী ৪ এপ্রিল বিজিএমইএর পরিচালনা পরিষদ নির্বাচনের লড়াইয়ে থাকছে মূলত দুই দল বা জোট। সংগঠনের ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫ পরিচালক পদের বিপরীতে সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের ৯৯ জন প্রার্থী গতকাল শনিবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সম্মিলিত পরিষদের দলনেতা ফারুক হাসান ও ফোরামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এ বি এম সামসুদ্দিন।

সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের নেতারা জানান, আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে পদের বিপরীতে সমানসংখ্যক প্রার্থী রেখে বাকিদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা হবে। সে ক্ষেত্রে ৩৫ পদের জন্য দুই জোটের মোট ৭০ জন প্রার্থী লড়াইয়ে থাকতে পারেন।

সম্মিলিত পরিষদে ‘স্বাধীনতা’

চলতি বছরের নির্বাচন সামনে রেখে সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম—উভয় জোটই স্বাধীনতা পরিষদকে টানতে চেষ্টা চালায়। শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছে সম্মিলিত পরিষদ। সে জন্য স্বাধীনতা পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম এবং এই জোটের আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা অলিরা ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হুমায়ূন রশীদকে নিজেদের প্যানেলের অধীনে নির্বাচনের সুযোগ দিয়েছে সম্মিলিত পরিষদ। এ ছাড়া নির্বাচনে জয়ী হলে সংগঠনের বিভিন্ন বিষয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পদ দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে তারা।

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দল সর্বসম্মতিক্রমেই সম্মিলিত পরিষদের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনো প্রকার চাপের কাছে নতি স্বীকার করিনি। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন চেয়েছিলাম। সে জায়গায় আমাদের নৈতিক জয় হয়েছে বলে মনে করি।’

সম্মিলিত পরিষদের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও একাধিক সংসদ সদস্য। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন সরাসরি জাহাঙ্গীর আলমকে সম্মিলিত পরিষদের হয়ে নির্বাচন করতে বলেন। তা ছাড়া আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের অন্যতম সহযোগী ও ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে নাম আসায় চাপে আছেন জাহাঙ্গীর আলম। ফলে সম্মিলিতের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে সহজেই রাজি হয় স্বাধীনতা পরিষদ।

প্রসঙ্গত, পি কে হালদারের দখল করা প্রতিষ্ঠান থেকে জাহাঙ্গীর আলম ঋণ সুবিধা নিয়েছেন, আবার মালিকও বনে গেছেন। বর্তমানে তিনি পি কে হালদারের দখল করা এফএএস ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান। চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা দখল করে বিদেশে পালিয়ে গেছেন পি কে হালদার। এসব প্রতিষ্ঠান এখন গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। তবে পি কে হালদারের ব্যবসায়িক অংশীদার ও সহযোগীরা বহাল তবিয়তে আছেন।

এ বিষয়ে সম্মিলিত পরিষদের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘চাপ নয়, সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বে আস্থা রেখেই স্বাধীনতা পরিষদ আমাদের সঙ্গে নির্বাচনে যাচ্ছে। একইভাবে ফোরামের তিনজন প্রার্থী আমাদের প্যানেলের হয়ে মনোনয়নপত্র কিনেছেন।’

অন্যদিকে ফোরামের দলনেতা এ বি এম সামসুদ্দিন দাবি করেন, স্বাধীনতা পরিষদ মূলত সম্মিলিত পরিষদেরই লোকজন। স্বাধীনতা পরিষদ তৃতীয় শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকলে তাদেরই (সম্মিলিত পরিষদ) লোকসান হতো।

নির্বাচনের প্রার্থী যাঁরা

সম্মিলিত পরিষদ ঢাকার ২৬ পরিচালক পদের বিপরীতে ৪৮টি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দলনেতা ফারুক হাসান দুটি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তালিকায় আরও আছেন বিজিএমইএর বর্তমান সহসভাপতি আরশাদ জামাল, এস এম মান্নান ও সাবেক সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ, বিকেএমইএর পরিচালক ফজলে এহসান শামীম, এনভয় গ্রুপের পরিচালক তানভীর আহমেদ প্রমুখ। চট্টগ্রামে ৯ পরিচালক পদের বিপরীতে জোটের হয়ে ১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

অন্যদিকে ফোরাম ঢাকার ২৬ পরিচালক পদের বিপরীতে ৩৫টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। তাঁদের মধ্যে জোটের দলনেতা এ বি এম সামসুদ্দিন তিনটি ও বর্তমান সভাপতি রুবানা হক দুটি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া সংগঠনের বর্তমান সহসভাপতি এম এ রহিম ও ফয়সাল সামাদ, সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম, রুবানা হকের ছেলে নাভিদুল হক প্রমুখ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সম্মিলিতের মতো ফোরামও চট্টগ্রামে ১০ জনের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।