‘১৮ ঘণ্টা একজনের লাশের ওপর শুয়েছিলাম’

রূপালি আক্তার

আগের দিন রানা প্লাজা ভবনের তৃতীয় তলায় ফাটলের কথা শুনেছিলেন রুপালি আক্তার। খুব একটা পাত্তা দেননি। মনে মনে ভাবছিলেন, ফাটলের কারণে কারখানা বন্ধ থাকবে? তাই পরদিন সাড়ে সাতটার দিকে নতুন জামা পরে মজিদপুরের বাসা থেকে কারখানায় গেলেন রুপালি। পরিকল্পনা ছিল, কারখানা বন্ধ থাকলে কয়েকজন মিলে নবীনগরে ঘুরতে যাবেন।

২৪ এপ্রিল ঝুঁকির মধ্যেও কারখানা খোলা। সপ্তম তলার নিউওয়েব বটমস লিমিটেডের হেলপার রুপালি আক্তার কাজ শুরু করেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেল। ভবনধসে অন্য অনেক সহকর্মীদের সঙ্গে চাপা পড়েন রুপালিও। ১৮ ঘণ্টা পর উদ্ধারকর্মীরা ছাদ কেটে অন্যদের সঙ্গে তাঁকেও উদ্ধার করেন। এই দীর্ঘ সময় রুপালি আক্তার তাঁরই সহকর্মী তানজীলার মৃতদেহের ওপর শুয়েছিলেন। রুপালির ওপর ছিলেন জীবিত আরেকজন।

আরও পড়ুন

রূপালি আক্তার আজ শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে সে দিনের স্মৃতিচারণা করলেন এভাবে, ‘আমরা কাজ করছিলাম। সোয়া ৯টার দিকে (প্রকৃতপক্ষে নয়টার কিছুক্ষণ আগে) বিকট শব্দ হলো। সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকম্পের মতো বিল্ডিং কাঁপতে ছিল। সবাই বাঁচার জন্য দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। আমিও ছুটতে গিয়ে পড়ে গেলাম। হঠাৎ দেখি আমি বিল্ডিংয়ের একটা বিমের নিচে। আমার নিচে তানজিলা। হাত-পা ঠান্ডা। আমার ওপরে আরেকজন। তার এক হাত ওপরে ছাদ। এভাবে ১৮ ঘণ্টা লাশের ওপর শুয়ে থাকার পর গভীর রাতে ছাদ কেটে আমাকে উদ্ধার করা হয়।’

সৌভাগ্যক্রমে রুপালি আক্তার বড় ধরনের চোট পাননি। তবে দীর্ঘসময় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে থাকায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। দেড় বছর চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হন। বর্তমানে সাভার ইপিজেডের একটি কারখানায় কাজ করেন রুপালি।

রানা প্লাজা ধসের আট বছর উপলক্ষে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গতকাল শুক্রবার অংশ নিয়েছিলেন রুপালি আক্তার। সেই সূত্র ধরেই তাঁর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। রুপালি বললেন, রানা প্লাজা ধসের সেই দিনের কথা ভুলতে পারি না। ছোটখাটো শব্দ শুনলেই ভয় পাই। একটি বাসে উঠলে ছোটখাটো ঝাঁকিতেও মনে হয় দুর্ঘটনা ঘটবে।

আরও পড়ুন

গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতারের সভাপতিত্বে গতকালের আলোচনায় অংশ নেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহ্বায়ক হামিদা হোসেন, নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু।

আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশে ক্ষতিপূরণের আইন একটি তামাশা। শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা। তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মৌলিক কোনো পরিবর্তন হলো না। এখন পর্যন্ত বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই।