৫০ শতাংশ নয়, শতভাগ শ্রমিকেই চলবে পোশাক কারখানা

কারখানা খোলা ও ছুটির সময় ভিড় এড়ানোর জন্য শ্রমিকদের প্রবেশ ও ত্যাগের ভিন্ন ভিন্ন সময় নির্ধারণে অনুরোধ করেছে বিজিএমইএ।

করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গত সোমবার জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়, প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছে। তবে দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাক কারখানা ৫০ নয়, শতভাগ শ্রমিক নিয়েই উৎপাদন কার্যক্রম চালাবে।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর শীর্ষ নেতৃত্ব গতকাল মঙ্গলবার এমনটাই জানিয়েছে। তাঁরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁদের পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে জানানো হয়েছে, অর্ধেক জনবল দিয়ে কারখানা পরিচালনার নির্দেশনাটি তৈরি পোশাক খাতের বেলায় প্রযোজ্য হবে না। তবে কারখানাগুলোতে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমসচিব কে এম আবদুস সালাম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে শ্রম অধিদপ্তর এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে (ডিআইএফই) নির্দেশনা পাঠিয়ে দিয়েছি। এটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত। ব্যতিক্রম কিছু হলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ গতকাল এক নির্দেশনায় বলেছে, করোনার প্রথম ঢেউ সামলে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করোনার প্রথম ঢেউয়ে পোশাকশিল্পে সংক্রমণের হার ছিল খুবই সামান্য অর্থাৎ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আশা করা যায়, করোনার প্রথম ঢেউয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। কারখানা খোলা ও ছুটির সময় শ্রমিকদের ভিড় এড়ানোর জন্য শ্রমিকদের প্রবেশ ও ছুটির ভিন্ন ভিন্ন সময় নির্ধারণের ওপর জোর দেওয়ার অনুরোধ করেছে বিজিএমইএ।

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল বিজিএমইএর নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট ফোরামের ইশতেহার ঘোষণা শেষে সংগঠনের সভাপতি রুবানা হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায়ে আমরা যোগাযোগ করেছি। আমরা সব শ্রমিক নিয়েই উৎপাদন চালাতে পারব। তবে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সব সদস্যকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

করোনা সংক্রমণ রোধে গত বছরের মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হয়। একাধিকবার অনুরোধের পর ৬ এপ্রিল কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। পরে সেটি ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তার আগেই সরকারের সবুজ সংকেত পেয়ে ২৬ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত ধাপে ধাপে কারখানা খোলার প্রক্রিয়া শুরু করে সংগঠন দুটি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পরিকল্পনার চেয়ে বেশি কারখানা আগেভাগেই উৎপাদন শুরু করে। আবার কারখানা চালু করতে কী কী বিষয় পরিপালন করতে হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিল বিজিএমইএ। শুরুতে কারখানাগুলো সেই নির্দেশনা মানলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যে সবকিছুই ঢিলেঢালা হয়ে যায়।

নতুন করে দেশে আবার করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় সোমবার সংক্রমণ ঠেকাতে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এতে শিল্পকারখানা ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে পরিচালনার পাশাপাশি গর্ভবতী, অসুস্থ, ৫৫-ঊর্ধ্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাড়িতে রেখে কাজ করানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক আমাকে নিশ্চিত করেছেন, ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে কারখানা পরিচালনার নির্দেশনাটি রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য প্রযোজ্য হবে না। তবে লিখিতভাবে কিছু নির্দেশনা দেবে জেলা প্রশাসন। সেটি পাওয়ার পর সদস্য কারখানার প্রতি নির্দেশনা দেবে বিকেএমইএ।’