৮৬ দামি গাড়ির ‘ভাগ্য’ ঝুলছে

পর্যটকদের ফেলে যাওয়া বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের ১১২টি গাড়ি বিক্রির জন্য নিলামে তুলেছিল কাস্টমস। সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতার তালিকা প্রকাশ করা হয়। সাধারণত তালিকা প্রকাশের কয়েক দিনের মধ্যেই গাড়ি বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু এবার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো গাড়ি বিক্রির অনুমোদন মেলেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ‘ক্লিয়ারেন্স পারমিট’ বা খালাসের ছাড়পত্র না পেলে গাড়িগুলো বিক্রি করা যাবে না বলে জানান কাস্টমস কর্মকর্তারা।

যেহেতু এসব গাড়ি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমদানি হয়নি, সেহেতু ক্লিয়ারেন্স পারমিট (সিপি) দেওয়ার বিষয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে। খুব শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
তপন কান্তি ঘোষ, বাণিজ্যসচিব

আমদানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি আমদানি করা নিষিদ্ধ। নিলামে তোলা গাড়িগুলোর মধ্যে ৮৬টি পর্যটন–সুবিধায় চট্টগ্রাম বন্দরে আনার সময় পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো ছিল। সে জন্য এসব গাড়ি নিলামে বিক্রি করতে হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স পারমিট বা বিশেষ অনুমোদন নিতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, নিলামে তোলার আগেই সংস্থাটি এসব গাড়ির ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছিল। নিলামে তোলার পর আবারও চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, গাড়িগুলো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়, পর্যটন–সুবিধায় আনা হয়েছে। শুল্কমুক্তভাবে আনা এসব গাড়ি নির্দিষ্ট সময় পর পর্যটকদের নিজ নিজ দেশে ফেরত নিতে হয়। পর্যটকেরা ফেরত না নেওয়ায় বন্দরে অনেক দিন ধরে পড়ে আছে। আবার ছাড়পত্র দেওয়া হলে সরকারও রাজস্ব পাবে। আর ছাড়পত্র দেওয়া না হলে স্ক্র্যাপ বা পুরোনো লোহার টুকরা হিসেবে বিক্রি করতে হবে।

এসব গাড়ি কখন বিক্রির অনুমোদন পাওয়া যাবে, তা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার মো. আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র ছাড়া এসব গাড়ি খালাসযোগ্য নয়। ছাড়পত্রের অনুমোদন পাওয়ার পরই যেসব গাড়িতে ভালো দর পাওয়া গেছে, সেগুলো বিক্রির বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজস্ব বোর্ডের চিঠি পেয়েছি। আমদানি নীতি আদেশ অনুযায়ী পাঁচ বছরের পুরোনো গাড়ির ছাড়পত্র প্রদান করা যায় না। এরপরও যেহেতু এসব গাড়ি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমদানি হয়নি, সেহেতু ক্লিয়ারেন্স পারমিট (সিপি) দেওয়ার বিষয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে। খুব শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’

পর্যটন–সুবিধায় এক দশক আগে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসব গাড়ি এনেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পর্যটকেরা। সাধারণত পর্যটন–সুবিধায় গাড়ি আনলে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায়, তবে তা আবার ফেরত নেওয়ার শর্তও থাকে। অতীতে এ সুবিধায় আনা অনেক গাড়ি ফেরত নেওয়া হয়নি। সে জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার রোধে ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে খালাসের শর্ত আরোপ করে কাস্টমস। তখন খালাস না নিয়ে সটকে পড়েন পর্যটকেরা। এরপর চার দফায় নিলামে তোলা হলে কিছু গাড়ির ভালো দাম পেলেও বিক্রি করেনি কাস্টমস। বেশির ভাগ গাড়ি খালাসের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র না থাকায় বিক্রি করা যায়নি বলে জানান কাস্টমসের কর্মকর্তারা।

ছাড়পত্রের অনুমোদন পাওয়ার পরই যেসব গাড়িতে ভালো দর পাওয়া গেছে, সেগুলো বিক্রির বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মো. আল আমিন, উপকমিশনার, চট্টগ্রাম কাস্টমস

কারনেট দ্য পেসেজ বা পর্যটন–সুবিধায় আনা এসব গাড়ির মধ্যে ল্যান্ড রোভার, মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, লেক্সাস, জাগুয়ার, ফোর্ড ও মিতসুবিশির মতো নামীদামি ব্র্যান্ডও রয়েছে। গত ৩ ও ৪ নভেম্বর নিলামে তোলার পর ১১২টি গাড়ির মধ্যে ১১০টি কেনার জন্য দরপত্র জমা পড়ে। সব কটি গাড়ির নিলাম মূল্য ওঠে ১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ছাড়পত্র না পাওয়া ৮৬টি গাড়ির নিলাম মূল্য হচ্ছে ১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। নিলামে তোলা গাড়িগুলোর মধ্যে ১০টি গাড়ির সর্বোচ্চ দর উঠেছে গড়ে ৪০ লাখ টাকার বেশি। নিলামের আগে ছাড়পত্র পাওয়া গেলে অনেক গাড়ির দর আরও বেশি পড়ত বলে কাস্টমসের কর্মকর্তারা মনে করেন।

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, ছাড়পত্র পাওয়া না গেলে এসব গাড়ি স্ক্র্যাপ বা লোহার টুকরা হিসেবে বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই। সে ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা বাজারমূল্যের গাড়ি স্ক্র্যাপ হিসেবে বাজারদর লাখ টাকার বেশি পাওয়া যাবে না। সরকারও রাজস্ববঞ্চিত হবে।