শেয়ারবাজারে লেনদেনে গতি নেই, ২১০০ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন

শেয়ারবাজার
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

দেশের শেয়ারবাজারের লেনদেনে গতি ফিরছে না। গত পাঁচ কার্যদিবস ধরে তিন শ কোটির আশপাশেই ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৭০ কোটি টাকা। এর আগে গত সোমবার চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ডিএসইর লেনদেন দুই শ’ কোটির নিচে নেমে গিয়েছিল। তাতে ওই দিন শেষে লেনদেন ফিরে যায় আড়াই বছর আগের অবস্থানে।

আরও পড়ুন

ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বাড়লেও সূচকের পতন অব্যাহত রয়েছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৮০ পয়েন্টে। ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন হওয়া ৩১৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬০টি বা ৫১ শতাংশেরই দাম অপরিবর্তিত ছিল। আর দাম কমেছে ১৩৬টির বা সাড়ে ৪৩ শতাংশের। দাম বেড়েছে মাত্র ১৭টির বা সাড়ে ৫ শতাংশের।

বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেশির ভাগ শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় লেনদেনে স্থবির হয়ে গেছে। তাই লেনদেন বাড়াতে গত বৃহস্পতিবার ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হলেও তার কোনো সুফল বাজারে পড়ছে না।

কারণ, যেসব প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়েছে, লেনদেন ও সূচকে সেসব প্রতিষ্ঠানের অবদান একেবারেই নগণ্য। বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে মন্দাভাব থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় করা না গেলে বাজার গতিশীল হবে না।

আরও পড়ুন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় এক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, বাজার এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই সাইড লাইনে,তথা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় করা না গেলে লেনদেন ও সূচকের উন্নতি হবে না।

বন্ড ছেড়ে টাকা তুলবে তিন ব্যাংক

শেয়ারবাজারের মাধ্যমে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা তুলবে শরিয়াভিত্তিক দুটি ও প্রচলিত ধারার একটি ব্যাংক। ব্যাংক তিনটি বন্ড ছেড়ে এ টাকা তুলবে। ব্যাংক তিনটি হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) এবং পূবালী ব্যাংক। এর মধ্যে ৮০০ কোটি টাকা তুলবে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক তুলবে ৭০০ কোটি টাকা এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক তুলবে ৬০০ কোটি টাকা।

গতকাল মঙ্গলবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ব্যাংক তিনটির বন্ড ছাড়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
বিএসইসি জানিয়েছে, ইসলামী ব্যাংক অরূপান্তরযোগ্য ৭ বছর মেয়াদি বন্ড ছেড়ে ৮০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এ টাকা মূলধনভিত্তি শক্তিশালী করার পাশাপাশি প্রচলিত ব্যবসায়ও বিনিয়োগ করতে পারবে। ইসলামী ব্যাংকের বন্ডের প্রতিটি ইউনিটের অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তির কাছে এ বন্ড বিক্রি করা হবে।

আরও পড়ুন

বড় ধরনের ঋণ অনিয়মের কারণে সংকটে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। সংকটে পড়ে ব্যাংকটি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে চাহিদা অনুযায়ী নিয়মিত নগদ জমার (সিআরআর) অর্থ জমা রাখতে পারছে না। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমানত কমে যাওয়ায় তারল্য দেখা দিয়েছে। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে বন্ড ছেড়ে শেয়ারবাজারের মাধ্যমে ৮০০ কোটি টাকা তোলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনিরুল মওলা প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ব্যাংকের তারল্যের ওপর কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছে। এ কারণে বন্ড ছেড়ে টাকা তোলার জন্য বিএসইসিতে আবেদন করা হয়েছে। সেটির অনুমোদন মিলেছে। বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থ মূলধন শক্তিশালী করার পাশাপাশি প্রচলিত ব্যবসায়ও কাজে লাগানো হবে।

আরও পড়ুন

প্রচলিত ধারার পূবালী ব্যাংক প্রাতিষ্ঠানিক ও উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বন্ডের মাধ্যমে ৭০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এই বন্ডের প্রতিটি ইউনিটের অভিহিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি টাকা।  

এদিকে ঋণ অনিয়মের কারণে তারল্য সংকটে পড়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককেও ৬০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাংকটির বন্ডের প্রতিটি ইউনিটের অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু নির্ধারণ করা হয়েছে এক কোটি টাকা। বন্ডের অর্থে ব্যাংকটি মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী করবে। সাম্প্রতিক সময়ে এ ব্যাংকটিরও আমানতে টান পড়েছে।

দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ইসলামী ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানায় রয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক একটি কোম্পানি। ২০১৭ সালে শেয়ারবাজার থেকে শেয়ার কিনে এ দুটি ব্যাংকের মালিকানায় যুক্ত হয় কোম্পানিটি। এরপর সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের ঋণ অনিয়মের কারণে ব্যাংক দুটিই সংকটে পড়েছে।

আরও পড়ুন