ভালো দামে লাভের মুখ দেখলেন পাবনার পেঁয়াজচাষিরা

খেতের পেঁয়াজ জমির পাশেই রোদে শুকানো হচ্ছে। এবার ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষকেরা। গত সোমবার পাবনার বেড়ার ঢালারচর ইউনিয়নের হিজলাকোঠা গ্রামেছবি: প্রথম আলো

কয়েক বছর ধরেই আগাম বা মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ চাষে লোকসান দিচ্ছিলেন পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার চাষিরা। এ বছর ভালো লাভের দেখা পেয়েছেন তাঁরা। এতে খুশি কৃষক ও তাঁদের পরিবার। এ কারণে হাটে নতুন পেঁয়াজ তুলতে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে এ দুই উপজেলার কৃষকদের মধ্যে।

সাঁথিয়া ও বেড়া দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা। সাঁথিয়া উপজেলায় এবার ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা ও সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে হালি জাতের পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অন্যদিকে বেড়া উপজেলায় ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা ও ২ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে হালি জাতের পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। দুই উপজেলায় মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ এখন কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করেছে। অন্যদিকে দুই সপ্তাহ ধরে জমিতে হালি পেঁয়াজ লাগানো শুরু করেছেন কৃষকেরা।

আগে থেকে বাজারে ভালো দাম থাকায় কৃষকেরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করেছেন।
সঞ্জীব কুমার গোস্বামী, কৃষি কর্মকর্তা, সাঁথিয়া, পাবনা
আরও পড়ুন

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন-চার বছর ধরে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজে কৃষকেরা লোকসান দিচ্ছিলেন। গত বছর কৃষকেরা ২০-২৫ টাকা কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি করেন। অথচ প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ছিল ৩০ টাকা। এবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় ৩৩-৩৫ টাকা। তবে গতবারের চেয়ে এবার উৎপাদন খরচ বাড়লেও কৃষকেরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৮৫-৯০ টাকায়। এতে কৃষকের প্রতি কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাভ হচ্ছে।

বেড়া উপজেলার ঢালারচর ইউনিয়নের রামনারায়ণপুর গ্রামের পেঁয়াজচাষি সাবদার মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জমি থেকে নতুন পেঁয়াজ তুলে উঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। পরে দু-এক দিন সেগুলো রোদে দিয়ে বাজারে তোলা হবে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পেঁয়াজ পরিষ্কারের ফাঁকে কিষানি লাইলি খাতুন বলেন, ‘গত বছর পেঁয়াজের আবাদ করে আমাদের লোকসান হয়েছিল। কিন্তু এবার দাম ও ফলন দুটোই ভালো। তাই আমরা খুশি।’

একই ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামে খেত থেকে পেঁয়াজ তুলছিলেন পেঁয়াজচাষি আবদুল লতিফ। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে দেখছি পেঁয়াজ ওঠার সময় এলেই দাম কমে যায়। কিন্তু এবার সেটি হয়নি, তাই ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। এই সময়ে বাজারে দাম বেশি থাকলে কৃষকের লাভ। আর অন্য সময় দাম বেশি থাকলে মজুতদারের লাভ হয়।’

গত সোমবার সাঁথিয়ার বোয়ালমারী হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রির জন্য প্রচুর নতুন পেঁয়াজ উঠেছে। পাইকারিতে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়।

আরও পড়ুন

বোয়ালমারী হাটের পেঁয়াজের আড়তদার রাজা হোসেন বলেন, পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ থাকায় কৃষক এবার ভালো দাম পাচ্ছেন। হাটে নতুন পেঁয়াজের আমদানিও বেশি। গত বছর এই সময়ে পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষক কেঁদে বাড়ি ফিরেছিলেন। এবার খুব আনন্দ নিয়েই তাঁরা বাড়ি ফিরছেন।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী ও বেড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইউসুফ আলী জানান, আগে থেকে বাজারে ভালো দাম থাকায় কৃষকেরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা ভালো দামও পাচ্ছেন। এমন দাম পেলে ভবিষ্যতে কৃষকেরা আরও বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদে উৎসাহী হবেন।