শেয়ারবাজারে গত ছয় কার্যদিবসে ৩ হাজার ২১০টি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব সক্রিয় হয়েছে। বিও হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএলের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সিডিবিএলের হিসাবে, গত ২৯ ডিসেম্বর শেয়ার আছে, এমন বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ২১ হাজার ৩৩০। গত রোববার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৪০। অর্থাৎ গত ছয় কার্যদিবসে ৩ হাজার ২১০টি বিও হিসাবে নতুন করে শেয়ার কেনা হয়েছে। শেয়ারসহ বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কমেছে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যাও। গত ২৯ ডিসেম্বর শেয়ারশূন্য বিও হিসাব ছিল ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৭০টি। গত রোববার সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৪৭১।

এদিকে শেয়ারবাজারেও হাতবদল হওয়া শেয়ারের সংখ্যা বাড়ছে। গত ১৩ কার্যদিবসের মধ্যে গতকাল সোমবার সর্বোচ্চসংখ্যক শেয়ারের হাতবদল হয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। এদিন ডিএসইতে প্রায় ৫ কোটি ৩৬ লাখ শেয়ারের হাতবদল হয়। এর আগে সর্বশেষ গত ১৯ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ ৬ কোটি ৯ লাখ শেয়ারের হাতবদল হয়েছিল।

আরও পড়ুন

শেয়ারের হাতবদল বৃদ্ধি কী বার্তা দিচ্ছে শেয়ারবাজারে

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রধানত দুটি কারণে বাজারে হাতবদল হওয়া শেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। প্রথমত, বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়লে। দ্বিতীয়ত, বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ারের হাতবদল বাড়লে।

শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক দিন ধরে শেয়ারবাজারে হাতবদল হওয়া শেয়ারের সংখ্যা বাড়ছে মূলত কৃত্রিম উপায়ে। ব্লক মার্কেটে কিছু বিনিয়োগ নিজেদের মধ্যে শেয়ারের হাতবদল করছে। এতে বাজারে লেনদেন বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু তাতে প্রকৃত লেনদেন বাড়ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্রোকারেজ হাউসের নির্বাহীরা বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে কয়েকজন বিনিয়োগকারী কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম ও বাজারে লেনদেন বাড়াতে নিজের এক বিও হিসাব থেকে অন্য বিও হিসাবে শেয়ার স্থানান্তর করছেন। আবার কখনো কখনো সংঘবদ্ধভাবে নিজেদের পরিচিত বিও হিসাবের মধ্যেও এ ধরনের লেনদেন সংঘটিত হচ্ছে। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়াতে ও বাজারের লেনদেন বাড়াতে এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হচ্ছে ব্লক মার্কেটকে। ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকালও ৩৯ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় ১২ শতাংশ।

আরও পড়ুন

বিএসইসির আহ্বানে সাড়া কম বাজারে

এ অবস্থায় তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের হাতবদল বাড়িয়ে তার কতটা সুফল বাজারে পাওয়া যাবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত কয়েক দিনে নিজেদের পত্রকোষ বা পোর্টফোলিওতে কোনো শেয়ার কিনতে পারিনি। কারণ, আগের কেনা শেয়ারে বড় ধরনের লোকসানে রয়েছি। এ অবস্থায় নতুন করে বিনিয়োগের মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই।’

কয়েক হাজার বিও হিসাব নতুন করে সক্রিয় হওয়ায় ও শেয়ারের হাতবদল বৃদ্ধি পাওয়ায় লেনদেনেও তার প্রভাব পড়েছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৩৫ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৫১ কোটি টাকা বেশি।

লেনদেন বাড়লেও বেশির ভাগ শেয়ারেরই দরপতন হয়েছে। তাতে কমেছে সূচকও। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ১ পয়েন্টের মতো কমেছে। লেনদেন হওয়া ৩২৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম কমেছে ১৩১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৬৪টির দাম। আর দিন শেষে দাম বেড়েছে ৩২টির।

আরও পড়ুন

শেয়ারের ‘মূল্যস্তর’ এখনই উঠছে না