সংকটের ধাক্কায় সিঙ্গারের মুনাফা কমে অর্ধেক

মুনাফা কমার খবরে গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ২ টাকা ৮০ পয়সা কমেছে।

শেয়ারবাজার

দেশে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি ও ডলার-সংকটের কারণে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে বিভিন্ন কোম্পানির মুনাফায়। পাশাপাশি বিশ্ববাজারে শিল্পের কাঁচামালের মূল্য ও জাহাজভাড়া বৃদ্ধি পাওয়াতেও মুনাফা কমছে কোম্পানিগুলোর। এর একটি উদাহরণ হলো, ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান সিঙ্গার বাংলাদেশ, যাদের মুনাফা এক ধাক্কায় অর্ধেক কমে গেছে।

কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া বৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে আগের বছরের চেয়ে আমাদের পণ্য উৎপাদন ও বিপণন খরচ ১৪ শতাংশ বেড়েছে। খরচের এই চাপ সামাল দিতে আমরা পণ্যমূল্য ৯ শতাংশের মতো বাড়িয়েছি। তারপরও মুনাফা আগের বছরের তুলনায় অর্ধেকের বেশি কমেছে।
আকরাম উদ্দিন আহমদ, অর্থবিষয়ক পরিচালক ও সিএফও, সিঙ্গার বাংলাদেশ।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক এই কোম্পানি গতকাল বুধবার তাদের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানিটির মুনাফা কমে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে কোম্পানিটি বলেছে, দেশে গত কয়েক মাসে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তথা মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ টিভি, ফ্রিজ, এসির মতো পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছে। কারণ, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির চাপ সামাল দেওয়াই ছিল তাঁদের অগ্রাধিকার। এ ছাড়া সিলেট ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে ওইসব এলাকায় ইলেকট্রনিক সামগ্রীর বিক্রি কমেছে। একদিকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিক্রি বাড়েনি, অন্যদিকে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে খরচ বেড়ে গেছে। এতে বছরের ছয় মাস শেষে মুনাফায় বড় ধাক্কা লেগেছে।

সিঙ্গারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে জুন (অর্ধবার্ষিক) সময়কালে কোম্পানিটি তাদের নানা পণ্য বিক্রি করে প্রায় ৯২৫ কোটি টাকা আয় করেছে। ২০২১ সালের প্রথমার্ধে তথা একই সময়ে এই আয়ের পরিমাণ ছিল ৮৬৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে সাড়ে ৬০ কোটি ৫২ লাখ টাকা বা ৭ শতাংশের মতো। আর চলতি বছরের প্রথমার্ধে পণ্য তৈরি ও বিক্রি বাবদ খরচের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছর না ঘুরতেই কোম্পানির খরচ বেড়েছে সাড়ে ১১ শতাংশের বেশি।

কোম্পানি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, চলতি বছরের প্রথমার্ধে সিঙ্গারের বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু জুন শেষে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭৫ কোটি টাকা বা ৮ শতাংশ কম বিক্রি হয়েছে। বন্যা ও মূল্যস্ফীতির কারণেই মূলত বিক্রির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

জানতে চাইলে সিঙ্গার বাংলাদেশের অর্থবিষয়ক পরিচালক ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আকরাম উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া বৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে আগের বছরের চেয়ে আমাদের পণ্য উৎপাদন ও বিপণন খরচ ১৪ শতাংশ বেড়েছে। খরচের এই চাপ সামাল দিতে আমরা পণ্যমূল্য ৯ শতাংশের মতো বাড়িয়েছি। তারপরও মুনাফা আগের বছরের তুলনায় অর্ধেকের বেশি কমেছে। কারণ, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিক্রি না হওয়ায় চলতি বছরের প্রথমার্ধে বেশি ঋণ করতে হয়েছে। এ জন্য ঋণের সুদ বাবদ খরচও বেড়েছে অনেক। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির চাপ এসে পড়েছে ব্যবসায়ের ওপর।’

আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস কমে হয়েছে ২ টাকা ৩১ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪ টাকা ৬৯ পয়সা। কোম্পানির সব ধরনের খরচ ও কর পরিশোধের পর যে মুনাফা থাকে, তার ভিত্তিতেই ইপিএস হিসাব করা হয়। সেই হিসাবে দেখা যায়, সব খরচ বাদ দেওয়ার পর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা অর্ধেকের বেশি কমে গেছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত উৎপাদন খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির ওপরই চলমান বৈশ্বিক ও স্থানীয় অর্থনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়বে। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে অনেক কোম্পানির মুনাফা ও আয় কমে যাবে। তাতে কোম্পানির শেয়ারের দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যার ধাক্কা এসে লাগবে পুরো বাজারে।

এদিকে মুনাফা কমে যাওয়ার খবরে গতকাল বুধবার সিঙ্গার বাংলাদেশের শেয়ারের দাম কমেছে। এদিন ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় পৌনে ২ শতাংশ বা ২ টাকা ৮০ পয়সা কমে ১৫৪ টাকায় নেমে এসেছে। এর আগের তিন কার্যদিবসেও অবশ্য কমেছে। এ নিয়ে গত চার কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় আট টাকা কমেছে।