এপ্রিলের বার্তার প্রভাবই কি শেয়ারবাজারের সূচকে

ব্যাংক বন্ধের কারণে রোববার শেয়ারবাজারও বন্ধ ছিল। তাই গতকাল সোমবার ছিল শেয়ারবাজারে সপ্তাহের প্রথম লেনদেন দিবস। দিনটি শেষ হয়েছে একাধিক রেকর্ড দিয়ে। তাই বলা চলে, শেয়ারবাজারের জন্য গতকাল সোমবারটি ছিল ‘গুড মানডে’। অবশ্য শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রে মানডে সুপরিচিত ‘ব্ল্যাক মানডে’ হিসেবে।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল এক দিনে তিনটি রেকর্ড হয়েছে। বাজার মূলধন, প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে বাছাই করা ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচকে এ রেকর্ড হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় দুই মাস পর লেনদেন ছাড়িয়েছে আবার ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

ডিএসইএক্স সূচকটি ৭ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম না করা পর্যন্ত ঋণের সীমা নির্ধারণ করা হয় প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ৮০ টাকা। আগে ঋণের সর্বোচ্চ এ সীমা ছিল প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ৫০ টাকা।

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল এক দিনে ৫৬ পয়েন্ট বা প্রায় ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৮২ পয়েন্টে। প্রধান সূচকটি এখন সাড়ে ৬ হাজার পয়েন্টের মাইলফলক ছুঁই ছুঁই করছে। আজ মঙ্গলবার ডিএসইএক্স সূচকটি মাত্র ১৮ পয়েন্ট বাড়লেই ছুঁয়ে ফেলবে সাড়ে ৬ হাজার পয়েন্টের মাইলফলকটি। এ ছাড়া ভালো মানের বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত এ বাজারের অপর সূচক ডিএস-৩০ গতকাল ১৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৪৪ পয়েন্টে। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি এ দুটি সূচক চালু হয়েছিল। চালু হওয়ার প্রায় সাড়ে আট বছর পর এসে সূচক দুটি সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে।

ঢাকার বাজারের সার্বিক বাজার মূলধন গতকাল এক দিনে ৩ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৩১ কোটি টাকায়। এর আগে সর্বশেষ গত ১৯ জুলাই এটি ৫ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৫ কোটি টাকার সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত এপ্রিলে মার্জিন ঋণ নীতিমালা পরিবর্তন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বাজারে একধরনের বার্তা দেওয়া হয়েছিল। সে সময় সূচকের সঙ্গে সমন্বয় করে ঋণসীমা নির্ধারণ করা হয়। বাজারের প্রভাবশালী বিনিয়োগকারীদের অনেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সেই বার্তা বুঝতে পেরেছিলেন। সেই অনুযায়ী বিনিয়োগ করেন। তাতে সূচক ও শেয়ারের দাম বেড়ে নতুন উচ্চতায় উঠেছে।

এপ্রিলে সূচকের সঙ্গে সমন্বয় করে ঋণসীমা নির্ধারণের সময়ই নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটি বার্তা বাজারে দিয়েছিল। যাঁরা বাজারের খেলোয়াড়, তাঁরা সেই বার্তা ভালোই বুঝতে পেরেছিলেন। তার প্রতিফলন আমরা সূচকে দেখতে পাচ্ছি।
মোহাম্মদ মুসা, অধ্যাপক ,ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়

কী ছিল এপ্রিলের সেই বার্তায়

গত ৪ এপ্রিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ারবাজারের ঋণসংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে। সেখানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের ৭ হাজার পয়েন্ট পর্যন্ত ঋণের সীমা বাড়ানো হয়। ডিএসইএক্স সূচকটি ৭ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম না করা পর্যন্ত ঋণের সীমা নির্ধারণ করা হয় প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ৮০ টাকা। আগে ঋণের সর্বোচ্চ এ সীমা ছিল প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ৫০ টাকা। বিএসইসির সর্বশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ডিএসইএক্স সূচক ৭ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করলে ঋণসীমা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে ১০০ টাকার বিপরীতে ৫০ টাকায় নেমে যাবে। বিএসইসি তাদের নির্দেশনায় ওই সময় বলেছিল, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ঋণসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ঋণসীমা বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই শেয়ারবাজারে লেনদেন বেড়ে যায়। কারণ, গ্রাহকের শেয়ার কেনার সক্ষমতা বাড়ে। এখন একজন গ্রাহকের নিজের এক লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকলে তার বিপরীতে তিনি ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারছেন। তাতে নিজের ১ লাখ ও ঋণের ৮০ হাজার মিলিয়ে একজন গ্রাহক মোট ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ার কিনতে পারছেন। এরপর ওই বিনিয়োগকারীর শেয়ারের দাম যত বাড়বে, তার ঋণ নেওয়ার সক্ষমতাও তত বাড়বে। এভাবেই ঊর্ধ্বমুখী বাজারে বড় বিনিয়োগকারীরা তাঁদের বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। পাশাপাশি ছিল কারসাজির ঘটনাও। তাতে তরতর করে বেড়েছে কিছু শেয়ারের দাম।

গত ৪ এপ্রিল যেদিন নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে ঋণসুবিধা বাড়ানো হয়েছিল, সেদিন ডিএসইর প্রধান সূচকটি ছিল ৫ হাজার পয়েন্টের অবস্থানে। বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার ঘরে।

জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘এপ্রিলে সূচকের সঙ্গে সমন্বয় করে ঋণসীমা নির্ধারণের সময়ই নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটি বার্তা বাজারে দিয়েছিল। যাঁরা বাজারের খেলোয়াড়, তাঁরা সেই বার্তা ভালোই বুঝতে পেরেছিলেন। তার প্রতিফলন আমরা সূচকে দেখতে পাচ্ছি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ডিএসইএক্স সূচকটি ৭ হাজার পয়েন্টে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না।’

মোহাম্মদ মুসা আরও বলেন, গত কয়েক মাসে সূচক বেশ বাড়লেও ভালো মৌলভিত্তির অনেক শেয়ারের দাম এখনো অবমূল্যায়িত আছে। সেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে থাকলে সূচকটি আরও তরতর করে বাড়বে।

আরও পড়ুন

গত ৪ এপ্রিল যেদিন নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে ঋণসুবিধা বাড়ানো হয়েছিল, সেদিন ডিএসইর প্রধান সূচকটি ছিল ৫ হাজার পয়েন্টের অবস্থানে। বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার ঘরে। সেখানে চার মাসের ব্যবধানে প্রধান সূচকটি বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ পয়েন্ট বা ২৭ শতাংশ। আর বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় লাখ কোটি টাকা।