ছোটরা মাঠে, বড়রাও নামছেন

  • ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরদিন থেকেই বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন দেশের ছোট ব্যবসায়ীরা।

  • ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পরদিন থেকেই বিশ্ববাজারে খোঁজখবর নিয়ে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে চুক্তি করতে শুরু করেন ছোট ব্যবসায়ীরা।

  • এদিকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিলেও শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা। ভারত যদি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে তাহলে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরদিন থেকেই বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন দেশের ছোট ব্যবসায়ীরা। এক চালানে ১০০, ২০০, ৫০০ টন বা ১ হাজার টন করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিও সংগ্রহ করেছেন এ রকম চার শতাধিক ব্যবসায়ী। তাঁরা প্রতিদিনই ঋণপত্র খুলে চলেছেন।

কিন্তু ছোটরা সরব হলেও পেঁয়াজ আমদানিতে বড় শিল্প গ্রুপগুলো এখনো সেভাবে এগিয়ে আসেনি। অবশেষে চারটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, সরকারের অনুরোধে তারা আমদানির উদ্যোগ নিচ্ছে। আগামী সপ্তাহেই তারা আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠান গত বছরে সংকটের সময় পেঁয়াজ আমদানি করেছিল।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানান, গতবারের মতো এবারও বড় বড় শিল্প গ্রুপকে পেঁয়াজ আমদানির অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

ভারত সরকার হঠাৎ করে গত সোমবার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। পরদিন থেকেই বিশ্ববাজারে খোঁজখবর নিয়ে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে চুক্তি করতে শুরু করেন ছোট ব্যবসায়ীরা। গত বছর ভারতের বিকল্প বাজারের খোঁজ নিয়ে চুক্তি করতে সময় লাগলেও এবার তাৎক্ষণিকভাবেই যোগাযোগ করা গেছে। কারণ, দুই পক্ষই এখন পরিচিত। ফলে খুব দ্রুতই আমদানির উদ্যোগ নেওয়া গেছে। ফলে ভারতের রপ্তানি বন্ধে গতবার যেমন সংকট হয়েছিল, এবার তা হবে না বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

ছোটরা এগিয়ে
পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলার আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে আমদানির অনুমতি (আইপি) নিতে হয়। ভারত রপ্তানি বন্ধের পরের দুই দিন মঙ্গল ও বুধবার চট্টগ্রাম ও ঢাকার উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে ১ লাখ ৩৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি সংগ্রহ করেছেন ছোট ২০০ ব্যবসায়ী। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় ২০০টি প্রতিষ্ঠান পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেতে আবেদন করেছে। বিকেল পর্যন্ত প্রায় এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামেও বৃহস্পতিবার প্রায় ২২ হাজার টন আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ছোট ব্যবসায়ীরা।

প্রতীকী ছবি

পেঁয়াজ আমদানিকারক ছোট প্রতিষ্ঠান খাতুনগঞ্জ ট্রেডিংয়ের কর্ণধার খায়রুল বাশার গতকাল প্রথম আলোকে জানান, গত বছরের অভিজ্ঞতায় বিকল্প বাজারে জানাশোনা ছিল। এ কারণে ভারত রপ্তানি বন্ধের পরই আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করতে দেরি হয়নি। বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আসবে।

ঢাকার উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক মো. আজহার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ীরা যে হারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র নিচ্ছেন, তা আগে কখনো দেখা যায়নি। অনুমতি অনুযায়ী পেঁয়াজ বাজারে এলে সংকট থাকবে না।

চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল জানান, চীন, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিসর, তুরস্ক, নিউজিল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে ব্যাপক আমদানির খবরে বাজারও পড়তির দিকে। খাতুনগঞ্জে তিন দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমে প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৫৫ টাকায় নেমেছে। খুচরায় ৮০ টাকা থেকে কমে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

উদ্যোগ নিচ্ছে বড় শিল্প গ্রুপ
গত বছর সংকটের সময় সবচেয়ে সক্রিয় ছিল বড় শিল্প গ্রুপগুলো। সরকারের অনুরোধে মেঘনা, এস আলম, সিটি ও বিএসএম গ্রুপ দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়ায় নেমে পড়ে।

এদিকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিলেও শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা। ভারত যদি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে তাহলে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। কারণ, ভারতের চেয়ে বিশ্ববাজারে পেঁয়াজের দাম এবং আনার খরচ বেশি পড়ে।

জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বুধবার রাতে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। এখন আমদানির উদ্যোগ নেব। বিদেশের দূতাবাসগুলো যদি এ ক্ষেত্রে সহায়তা করে তাহলে দ্রুত আমদানি করা যাবে। প্রসঙ্গত, গ্রুপটি গত বছর সব পেঁয়াজ কেনা দরে সরকারকে হস্তান্তর করেছে।

গত বছর সিটি গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপ পেঁয়াজ আমদানি করে সরকারি সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছে। সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহাও পেঁয়াজ আমদানিতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এস আলম গ্রুপের বাণিজ্যিক বিভাগের প্রধান মহাব্যবস্থাপক আখতার হাসান জানান, পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন তাঁরা। আগামী সপ্তাহে ঋণপত্র খোলার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে বলে তিনি জানান।

ব্যবসায়ীদের শঙ্কা
এদিকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিলেও শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা। ভারত যদি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে তাহলে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। কারণ, ভারতের চেয়ে বিশ্ববাজারে পেঁয়াজের দাম এবং আনার খরচ বেশি পড়ে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তা খুবই ইতিবাচক। এতে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে। সরবরাহও বাড়বে।