লা মেরিডিয়ান কাণ্ডে জালিয়াতির আরেক ঘটনা

শেয়ারবাজারে লা মেরিডিয়ানকে সরাসরি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে জালিয়াতির নতুন আরেক ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। নিয়ম অনুযায়ী, ইস্যু ব্যবস্থাপক হিসেবে দুটি মার্চেন্ট ব্যাংকের নামে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু এ দুই মার্চেন্ট ব্যাংকের মধ্যে একটি দাবি করছে, এ সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না। এ কারণে এ ঘটনার লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংক আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট।

রাজধানীর পাঁচতারকা এ হোটেলটির মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠান বেস্ট হোল্ডিংসকে তালিকাভুক্তির আবেদনে ইস্যু ব্যবস্থাপক হিসেবে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ছাড়া আরও ছিল রেস পোর্টফোলিও অ্যান্ড ইস্যু ম্যানেজমেন্ট। গত শুক্রবার প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘পর্ষদ সভা থেকে বাদ, অর্থমন্ত্রীর চিঠি স্থগিত’ শীর্ষক এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দুই ইস্যু ব্যবস্থাপকের নাম উল্লেখ করা হয়। ওই দিনই প্রথম আলোর প্রতিবেদনের সূত্র ধরে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শুক্লা দাশ স্বাক্ষরিত প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লা মেরিডিয়ান বা বেস্ট হোল্ডিংসের কোনো ইস্যুতেই ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেনি। এমনকি এ-সংক্রান্ত কোনো চুক্তিও হয়নি।

আরও পড়ুন

আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সহযোগী কোম্পানি। নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে চাইলে সে জন্য ইস্যু ব্যবস্থাপক নিয়োগ করতে হয়। এ জন্য তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী কোম্পানিকে ইস্যু ব্যবস্থাপকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। সাধারণত শেয়ারবাজারে মার্চেন্ট ব্যাংক হিসেবে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানই নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করে থাকে।

এদিকে, আইন লঙ্ঘন করে বেস্ট হোল্ডিংসকে শেয়ারবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির (ডিরেক্ট লিস্টিং) উদ্যোগ নেন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রভাবশালী এক পরিচালক, যিনি ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন। মূলত বেস্ট হোল্ডিংসের সুবিধাভোগী একটি শক্তিশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে ওই পরিচালক ১৬ ডিসেম্বর সরকারি ছুটির দিনে বিষয়টিকে ডিএসইর পর্ষদ সভার আলোচ্যসূচিভুক্ত করেন।

আরও পড়ুন

পরে তা জানাজানি হলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ছুটির দিনেই বিশেষ নির্দেশনা জারি করে কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার নির্দেশ দেয় ডিএসইকে। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে ডিএসইর কাছে ব্যাখ্যাও তলব করা হয়। বিএসইসির এ অবস্থানের পর গত বৃহস্পতিবারের পর্ষদ সভার আলোচ্যসূচি থেকে লা মেরিডিয়ানের তালিকাভুক্তির বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়।

২০১৬ সালে এক নির্দেশনার মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বেসরকারি কোম্পানির সরাসরি তালিকাভুক্তি বন্ধ করে রাখে বিএসইসি। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা নেই। এ কারণে লা মেরিডিয়ানে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকের বিনিয়োগের সরকারি মালিকানার তকমা দেওয়া হয়। পাশাপাশি কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর একটি চিঠিকেও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে ১৭ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাঁর সেই চিঠির কার্যকারিতাও স্থগিত করা হয়।