সঞ্চয়ের ৫০/৩০/২০ নীতি

প্রতীকী ছবি

কথায় আছে, টাকা হাতের ময়লা। এই আছে তো এই নেই। চাকরিজীবীদের তো মাসের শুরুতে নিজেকে প্রাসাদের রাজা মনে হয়, কিন্তু মাসের অর্ধেক পেরোতেই পকেটে টান পড়ে। টাকার ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিপদে দুনিয়ার সব মানুষই। এই সমস্যার কথা ভেবেই যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ‘অল ইওর ওর্থ: দ্য আল্টিমেট লাইফটাইম মানি প্ল্যান’ নামের একটি বই লিখেছেন, যেখানে তিনি আয় বণ্টনের ৫০/৩০/২০ নীতি দিয়েছেন। এটা মেনে চললে টাকা বাঁচানোর পথ পাওয়া যাবে।

সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন দেউলিয়া আইনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ। দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচতে ওয়ারেনের পরামর্শ কাজে লাগাতে পারেন এখনই।

এলিজাবেথ ওয়ারেন ‘অল ইওর ওর্থ: দ্য আল্টিমেট লাইফটাইম মানি প্ল্যান’ বইয়ের প্রচ্ছদ

৫০% খরচ নিত্যচাহিদায়

কর দেওয়ার পর আয়ের যে অংশ থাকবে, সেটা একদম আধাআধি ভাগ করে ফেলতে হবে। এই ৫০ শতাংশ টাকা খরচ হবে একদম নিত্যপ্রয়োজনীয় বিষয়ে, যেমন মাসিক বাজার, বাড়িভাড়া, ধারদেনা পরিশোধে, বিমা প্রিমিয়াম, গাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ ও পানির বিল, ইন্টারনেট ও কেবল টিভির বিল ইত্যাদিতে। এখন কারও যদি নিয়মিত ভালোমন্দ খাওয়ার সাধ থাকে, তবে তা-ও এই ৫০ শতাংশে রাখতে হবে।

এখন কথা হচ্ছে, এত কিছু কীভাবে ৫০ শতাংশে আঁটানো যায়? যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন। বিশেষ করে শখের ভালো খাওয়া কীভাবে এই তালিকায় আসে? কিন্তু ওয়ারেনের কথা হচ্ছে, টাকা বাঁচাতে হলে কঠিনভাবেই এটি মানতে হবে। এক খাতে খরচ বাড়াতে হলে অন্য খাতে কমিয়ে ভারসাম্য রাখতে হবে। যদি এক খাতে বেশি খরচ করেই ফেলেন, তাহলে দুই দিন গাড়িতে না উঠে বাসে উঠুন, অথবা হেঁটে যান। ফোনে একটু কম কথা বলুন, না হয় মাসের বাকি দিন খাওয়া নিয়ে বাহুল্য নাই করুন। দেখবেন, ঠিকঠাক এঁটে গেছে।

সবকিছুর পর যে টাকা বেঁচে গেছে, তাই দিয়ে হোক সঞ্চয় ও বিনিয়োগ।
ছবি: রয়টার্স

৩০% খরচ শখে

ধরুন বাইরে খাবেন, দরকার নেই, তা-ও নতুন একটা পোশাক কিনবেন; এক জোড়া জুতা যথেষ্ট, আবার একটা কেনার খায়েশ—এসব শখ এই ৩০ শতাংশে আঁটাতে হবে। ধরুন, শখটা অনেক বড়, এক মাসের ৩০ শতাংশ দিয়ে পূরণ সম্ভব নয়, তাহলে সেটাকে লক্ষ্য ধরে এই ৩০ শতাংশ থেকে জমাতে থাকুন। মোদ্দাকথা হচ্ছে, শখের জন্য এর বাইরে যাওয়া যাবেই না।

২০% সঞ্চয়

সবকিছুর পর যে টাকা বেঁচে গেছে, তাই দিয়ে হোক সঞ্চয় ও বিনিয়োগ। জরুরি খরচের টাকাও এখান থেকে নেওয়া যেতে পারে। তবে এই ভাগের টাকা আটকে রাখতে হবে, যেন বিপদের সময় হাত খালি হয়ে না যায়। অবসর গ্রহণের পরে বা দুর্দিনে চাকরি চলে গেলেও কারও কাছে যেন হাত পাততে না হয়।

৫০ শতাংশের ভাগ থেকে ছোটখাটো ধার পরিশোধ করা হলেও বাড়ির ঋণ, গাড়ির ঋণের মতো খরচ এই ২০ শতাংশ থেকে যেতে পারে। কারণ, এগুলো তো আসলে আমাদের সম্পদই।

আয় যেভাবেই ভাগ করা হোক না কেন, কর অবশ্যই আগে পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে পরবর্তী সময়ে করের বোঝা আয়ের শতভাগ ধরেই টান দেবে।

আরও পড়ুন