মাংসের দাম নিয়ে বৈঠক, হট্টগোল করলেন ব্যবসায়ীরা

গরুর মাংসফাইল ছবি

ঢাকার বাজারে কোথাও কোথাও ৬০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। আবার বেশিও রাখছেন কেউ কেউ। এভাবে একেক জায়গায় একেক দামে মাংস বিক্রি হওয়ায় ক্রেতারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। সে জন্য মাংসের দাম সমন্বয়ে আজ রোববার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় বসেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সভায় মাংস ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় হট্টগোল করেন।

সভায় ব্যবসায়ীদের একটি অংশ অভিযোগ করেন, কেউ কেউ প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তাতে কয়েকজন ব্যবসায়ীর হাতে চলে যাচ্ছে গরুর মাংসের বাজার। ফলে পাড়া-মহল্লার অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা করতে পারছেন না। যেসব ব্যবসায়ী কম দামে মাংস বিক্রি করছেন, তাঁদের প্রতি নানা ধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলেন অভিযোগকারী ব্যবসায়ীরা। এতে সভায় অন্তত পাঁচবার উত্তেজনা দেখা দেয়। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি সব পক্ষকে কথা বলার সুযোগ দিলেও ঢাকার মাংস ব্যবসায়ীদের একাংশের মধ্যে সভা শেষ হওয়া পর্যন্ত একধরনের অসন্তোষ দেখা গেছে। তাঁদের অভিযোগ, কিছু ব্যবসায়ী কম দামে মাংস বিক্রি করে বাজার নষ্ট করছেন। অভিযোগকারীরা ৬০০ টাকায় মাংস বিক্রি করতে চান না।

শেষ পর্যন্ত সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী বুধবার বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি, বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ (বিডিএফএ) ব্যবসায়ীদের সব পক্ষ বসে গরুর মাংসের দাম কত হবে, তা ঠিক করবে। ওই সভার সিদ্ধান্ত আগামী রোববারের মধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনও (বিটিটিসি) গরুর মাংসের বাজার যাচাই করবে।

অস্বাভাবিক কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে ভোক্তারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আর একজন ব্যবসায়ী কম দামে বিক্রি করতে পারলে অন্যরা কেন পারবেন না, সেই প্রশ্নের উত্তরও খুঁজে দেখার প্রয়োজন আছে।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, মহাপরিচালক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

এরপর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সভায় মাংস ব্যবসায়ীদের পাকা রসিদের মাধ্যমে বেচাকেনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের যথাযথ স্থানে মূল্যতালিকা প্রদর্শনের মাধ্যমে মাংস বিক্রি করতে বলা হয়েছে।

সভায় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘বাজারে গরুর মাংসের দাম কত হবে, তা ব্যবসায়ীরা ঠিক করবেন। অস্বাভাবিক কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে ভোক্তারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আর একজন ব্যবসায়ী কম দামে বিক্রি করতে পারলে অন্যরা কেন পারবেন না, সেই প্রশ্নের উত্তরও খুঁজে দেখার প্রয়োজন আছে।’

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে মাংসের ২টি দোকান খোলা থাকলে ২০টি দোকান বন্ধ রয়েছে। ছোট ছোট পান দোকানেও মাংস বিক্রি হতো। সেসব বন্ধ হয়ে গেছে। কোরবানির ধরনে মাংস বিক্রি করে অনেকে হয়তো লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু অনেকে পারছেন না। সবাই যাতে ব্যবসা করতে পারেন, আবার ভোক্তারাও কমে পান, তেমন একটা জায়গায় দামটা নির্ধারণ হওয়া উচিত।’

সভায় বিটিটিসির উপপরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, কে কোন গ্রেডের মাংস বিক্রি করছেন, তা নিয়ে সমীক্ষা হওয়া উচিত। সেই অনুযায়ী দাম নির্ধারণ হতে হবে। কারণ, মাংসের মান সব ক্ষেত্রে সমান নয়। তবে এটা মাথায় থাকা উচিত, দিন শেষে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না থাকলে অনেক ভোক্তা মাংস কিনতে চাইবেন না।

একটা জিনিস মানতেই হবে, একটা সময় মানুষ যে পরিমাণে গরুর মাংস খেতেন, মূল্যবৃদ্ধির ফলে তা কমে গিয়েছিল। অনেকে মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দাম কমার ফলে অনেকে এখন মাংস খেতে পারছেন।
হেলাল উদ্দিন, সভাপতি, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, একটা জিনিস মানতেই হবে, একটা সময় মানুষ যে পরিমাণে গরুর মাংস খেতেন, মূল্যবৃদ্ধির ফলে তা কমে গিয়েছিল। অনেকে মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দাম কমার ফলে অনেকে এখন মাংস খেতে পারছেন। সুতরাং ব্যবসায়ীরা লাভ একটু কম করে হলেও ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখলে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী সবাই উপকৃত হবেন।

সভায় বিভিন্ন সুপারশপের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলেন, মাংস বিক্রির ক্ষেত্রে কার ব্যবসার কী ধরন, তা দেখতে হবে। খুব সরলীকরণ করে দেখার সুযোগ এখানে নেই। ভাইরাল হওয়ার জন্য অনেকে অনেক কিছু করেন। কিন্তু সুপারশপে চাইলেই মাংস, হাড্ডি, চর্বি, কলিজা মিলিয়ে বেচা সম্ভব নয়। সুতরাং, ভ্যালু এডিশনের জন্য দাম একটু বেশি হবে। ভালো জিনিস কিনলে ভালো দাম দিতে হবে।

ঢাকার মাংস ব্যবসায়ীদের একাংশ জানায়, আগে যাঁরা ৫০০ কেজি মাংস বিক্রি করতেন, গত কয়েক মাসে তাঁদের বেচাকেনা ১০০ কেজিতে নেমে এসেছে। আবার যখন কেজি ৭০০ টাকার নিচে নেমেছে, তখন বেচাকেনা ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। তাঁরা বলেন, দেশে এখনো ওয়েট দিয়ে লাইভ গরু বিক্রির সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। ফলে অনেক ব্যবসায়ী গরু কিনতে গিয়ে ঠকে যান। সেই চাপ পড়ে ক্রেতাদের ওপর।