ব্রয়লার মুরগির দাম দ্বিশতক ছুঁয়েছে। গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এ মুরগি সর্বনিম্ন ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আগের দিন শনিবারেও যা ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা করে বিক্রি হয়। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা।
এদিকে প্যাকেটজাত চিনি বাজারে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, আর খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৮–১০ টাকা বেশি দরে। এ ছাড়া আমদানি করা রসুন, আদাসহ বেড়েছে আরও বেশ কিছু পণ্যের দাম।
গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল, নিউমার্কেট, আগারগাঁও তালতলা, মহাখালীসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দ্রব্যমূল্যের এমন চিত্র দেখা গেছে। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বেশি দামে পণ্য কেনায় তাঁদেরও দাম না বাড়িয়ে উপায় থাকছে না। আর ভোক্তাদের অভিযোগ, দাম এভাবে বাড়তে থাকলে আসন্ন রমজানে গিয়ে তা তাঁদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বাজারে ব্রয়লার মুরগি সর্বনিম্ন ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত শনিবারেও যা ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা করে বিক্রি হয়।
ব্রয়লার মুরগি অন্যান্য মাংসের চেয়ে অনেকটাই সস্তা। এ জন্য নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের মাংসের চাহিদা মেটানোর প্রধান ভরসা এই মুরগি। গত বছর ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামে একধরনের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল। সর্বশেষ গত অক্টোবরে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়েছিল। তবে ২০২২ সালের শুরুতে তা কেনা যেত ১৪৫–১৫০ টাকা দরে। সেই দাম ৩৩ শতাংশ বেড়ে এখন ২০০ টাকা ছুঁয়েছে।
রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. হেলাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো জিনিসের দাম কমেনি, বরং প্রতি সপ্তাহে বাজারে গিয়ে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি।’
দিন দশেক আগে বাজারে সোনালি মুরগির দাম প্রায় ৩০ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৩২০ হয়েছিল। গতকালও সেই দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে। ২০ টাকা বেড়ে তা ৭২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিমের (বাদামি) দাম রাখা হচ্ছে ১৩৫ টাকা। আর পাড়া–মহল্লার বাজারে তা আরও পাঁচ টাকা বেশি। অথচ চার দিন আগেও প্রতি ডজন ডিম কেনা যেত ১২০–১২৫ টাকায়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন ডিমের দাম ২৩ শতাংশ বেশি।
মাছের দামেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। আগের সপ্তাহের তুলনায় গতকাল বাজারে রুই ও তেলাপিয়া মাছ ২০–৩০ টাকা বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের। আকার অনুযায়ী পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০–২৩০ টাকা কেজি দরে।
আগে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছিল, তা কমার কোনো লক্ষণ নেই। পাশাপাশি সরকার যেসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা–ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। গত ২৬ জানুয়ারি খোলা চিনির খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে বাজার ঘুরে দেখা যায়, খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫–১২০ টাকা দরে। মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের খুচরা বিক্রেতা বুলবুল আহমেদ বলেন, খোলা চিনি তাঁদের পাইকারিতেই কিনতে হচ্ছে ১০৮ টাকা দরে। অথচ ২০২২ সালের শুরুতে এ চিনি ৭৫–৭৮ টাকা দরে বিক্রি হতো।
বাজারে বর্তমানে প্যাকেটজাত চিনি নেই বললেই চলে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কোম্পানির লোকেরা নিয়মিত প্যাকেট চিনির ফরমাশ (অর্ডার) নিতে আসেন না। এ জন্য ক্রেতাদেরও দিতে পারছেন না তাঁরা।
মসলার মধ্যে বাজারে আমদানি করা রসুন ও আদার দাম বেড়েছে। টিসিবির হিসাবে বাজারে আমদানি করা আদা দেড় সপ্তাহ আগে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকা ও এক মাস আগে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে এক শ টাকার বেশি। পাইকারি বাজারে আদা এখন ৩০০ টাকা আর খুচরা বাজারে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে সপ্তাহ দেড়েক আগে আমদানি করা যে রসুনের দাম ছিল ১৩০–১৪০ টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে। এ ছাড়া মাঝারি ও ছোট দানার মসুর ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা।
অবশ্য মৌসুম থাকায় সবজির বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল দেখা গেছে। প্রায় সব ধরনের সবজির দাম ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে রয়েছে। যদিও কাঁচা মরিচ, বরবটি ও করলার দাম বেশ চড়া। কয়েক দিন আগে বাজারে কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। এখন রান্নার জন্য অতি প্রয়োজনীয় এ পণ্য বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকার আশপাশে।
সাধারণত ভোক্তার চাহিদা ও পণ্যের জোগান অনুসারে বাজারে জিনিসপত্রের দাম ওঠা–নামা করে। তবে গত দুই বছরে নিত্যপণ্যের মূল্যস্তরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাই জোরালো। অর্থাৎ একবার যে পরিমাণে দাম বাড়ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা আর আগের বা কাছাকাছি অবস্থানে ফিরছে না। বিশেষ করে গত বছর দ্রব্যমূল্যে ছিল একধরনের লাগামহীন অবস্থা। চলতি বছরের দ্বিতীয় মাসে এসেও সেই রেশ রয়ে গেছে। মূল্যবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ।