খরচ বেশি, গরুর দামও বাড়তি

দেশে গরু পালনের শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এ এলাকাতেই গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা। 

পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় গরু পালনের খরচের সঙ্গে গরুর দামও বেড়ে গেছে। দেশে গরু পালনের দিক থেকে শীর্ষপর্যায়ে থাকা এ এলাকায় গরুর দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে মাংসের বাজারেও। গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় গরুর মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

 দাম বাড়লেও খামারিরা গরু বিক্রিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে হাটে গরু উঠছে কম। এ ছাড়া গত দু-তিন সপ্তাহের ব্যবধানে গোখাদ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। তাতে খামারিদের গরু পালনের খরচও আরেক দফা বেড়েছে। এতে হাটে যে দামে গরু বিক্রি হচ্ছে, তাতেও লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানান খামারিরা। 

আরও পড়ুন

 খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই কারণে মূলত এখন হাটে বিক্রির জন্য গরু উঠছে কম। প্রথমত, গরু পালনের খরচের তুলনায় হাটে দাম কম। তাই বাড়তি দামের আশায় এখনই বেশির ভাগ খামারি গরু বিক্রি করতে চাইছেন না। দ্বিতীয়ত, কোরবানির হাট সামনে রেখে যাঁরা গরু কিনতেন, তাঁরা এখন গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরু কেনার সাহস করছেন না। তাঁদের ধারণা, এক বছরের ব্যবধানে গরু পালনের খরচ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। ফলে আগেভাগে গরু কিনে তার পেছনে বাড়তি খরচ করে কোরবানির হাটে খুব বেশি লাভ করা যাবে না। ফলে হাটে গরু উঠছে কম। তবে গরু বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, এ মৌসুমে বিয়েশাদিসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে যাওয়ায় গরুর মাংসের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে গরুর দামও বেড়ে গেছে। 

 বেড়া বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা আবদুল মতিন জানান, সপ্তাহ দু-এক আগে যে গরুর দাম ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা ছিল, এখন তা ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে মাংসের হিসাব করলে প্রতি মণে দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে তাঁর দোকানে ৬৫০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

 খামারিরা বলছেন, এক বছরের ব্যবধানে গোখাদ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে আরেক দফা বেড়েছে গোখাদ্যের দাম। এক বছর আগেও গোখাদ্য গম, খেসারি ও অ্যাংকর ডালের ভুসি ২৪ থেকে ২৫ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হতো। এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৫৫ টাকা। ১৮ টাকা কেজির মসুরের ভুসি ৩৭ টাকা, ২২ টাকার কেজির খৈল৪৫ টাকা, ১০ টাকার কেজির ধানের গুঁড়া ১৮ টাকা, ২৮ টাকা কেজির চিটাগুড় ৬০ টাকা এবং ১৮ টাকা কেজির চালের খুদ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ৩৫০ টাকা মণের খড় এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়। একইভাবে কাঁচা ঘাসের দামও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। খামারিরা জানান, গোখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গরু পালন এখন আর মোটেও লাভজনক পর্যায়ে নেই। গরু পালন করতে গিয়ে অনেক খামারিই এখন বিপুল লোকসানে পড়েছেন।

 বেড়া পৌর এলাকার খামারি মাহফুজা মীনা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর খামারে ৮০টি গরু ছিল। গোখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় লোকসান কমাতে ২০টি গরু বেচে দিয়েছেন। এরপরও মাসে এখন এক লাখ টাকার মতো লোকসান হচ্ছে। কোরবানির হাট সামনে রেখে তাঁর খামারে ২০ থেকে ২২টি গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। কিন্তু গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন তিনি এসব গরুকে পর্যাপ্ত খাবার খাওয়াতে পারছেন না। ভুসি, খৈল কম খাইয়ে শুধু খড় বেশি খাওয়াচ্ছেন।

এদিকে গতকাল বেড়ার বড়শিলা গ্রামের ফসলের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, খামারিরা ঘাসের জমি কিনে সেখানে গরু বেঁধে রেখে সেগুলোকে সবুজ ঘাস খাওয়াচ্ছেন। বেড়া পৌর এলাকার সাণ্ড্যালপাড়া মহল্লার খামারি আবু তালেব বলেন, গতবার সাত থেকে আট হাজার টাকা দামে এক বিঘা খেসারি ঘাসের জমি বিক্রি হলেও এবার ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

আরও পড়ুন

 বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, গোখাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে অনেকেই গরু পালনে এবার আগ্রহ কম দেখাচ্ছেন। এরপরও ঐতিহ্যগত কারণে এ এলাকার লোকজন শেষ পর্যন্ত গরু পালনে এগিয়ে আসবেন বলে মনে করি। আর হাটে গরু ও গরুর মাংসের দাম কিছুটা বাড়লেও তা অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তুলনায় খুব একটা বেশি নয়।

 উত্তরাঞ্চলের অন্যতম পশুর হাট সাঁথিয়ার করমজা হাটের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক মো. মুকুল বলেন, ‘হাটে ওঠা গরুর সংখ্যা আগের মতোই আছে। তবে দাম বেড়েছে।’

আরও পড়ুন