এবার ভারতের চালে শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিলেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদিফাইল ছবি: এএফপি

ভারতের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের নতুন ফ্রন্ট খোলার ইঙ্গিত দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার ট্রাম্পের নজর চালসহ কৃষিজাত পণ্যে। শুধু ভারতের কৃষিজাত পণ্য নয়, কানাডার সারের ওপরও চোখ পড়েছে ট্রাম্পের।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার সংবাদে বলা হয়েছে, সস্তা বিদেশি পণ্য মার্কিন উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন মার্কিন কৃষকেরা। সেই অভিযোগ হাতিয়ার করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন কানাডার সার, ভারতের চালসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য আমদানিতে নতুন শুল্ক আরোপের কথা ভাবছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের জন্য ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের সহায়তা ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

হোয়াউট হাউস সূত্রে জানা গেছে, এই প্যাকেজের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আয়ের একটি অংশ কৃষকদের সহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে। সয়াবিন ও শস্যের মতো মূল ফসল উৎপাদকদের জন্য এককালীন ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার এবং ফল ও সবজি চাষের জন্য ১০০ কোটি ডলার দেওয়া হবে।

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ অর্থ বিতরণ শুরু হবে। যেসব খামারের বার্ষিক আয় ৯ লাখ ডলারের কম, তাদের সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫৫ হাজার ডলার পর্যন্ত দেওয়া হবে। ফসলের কম দাম, উচ্চ উৎপাদন খরচ ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যে কৃষকদের এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৮ সালেও কৃষকদের এমন সহায়তা দেওয়া হয়েছিল।

ট্রাম্পের সমর্থকেরা মনে করছেন, শুল্কের অর্থ দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করা হচ্ছে; কতরদাতাদের কিছু করতে হচ্ছে না। অন্যদিকে সমালোচকেরা মনে করছেন, শুল্কের প্রভাব মোকাবিলার জন্য এটি একধরনের বেল আউট।

কৃষকদের সহায়তায় নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউস

প্যাকেজটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে কৃষকদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কৃষকেরা সস্তা বিদেশি কৃষিপণ্যের বিষয়ে ট্রাম্পকে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য চাপ দেন। তাঁরা বলেন, যেসব দেশ থেকে চাল আমদানি হচ্ছে, সেখানে চাল উৎপাদনে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। এতে মার্কিন বাজারের ক্ষতি হচ্ছে।

কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, কোন দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কম দামের চাল পাঠাচ্ছে, মার্কিন সরকার তা খতিয়ে দেখবে। যারা প্রতারণা করছে, তাদের পণ্যে আরও শুল্ক আরোপের কথা বলেন তিনি।

ট্রাম্প আরও বলেন, চালের ক্ষেত্রে ভারত যদি ডাম্পিং করে থাকে, সে বিষয়ে তিনি ‘ব্যবস্থা নেবেন।’ কৃষকেরা দাবি করেছেন, ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের মতো দেশ থেকে চাল আমদানির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে চালের দাম কমছে। তাঁদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতি, পণ্যের দাম নিয়ে উদ্বেগসহ চলমান অর্থনৈতিক চাপের প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন। ট্রাম্পের সমর্থকদের বড় একটি অংশ হলেন এই কৃষকেরা। তাঁর শুল্কনীতির কারণে বাড়তি খরচসহ বাজারে বিভিন্ন ধরনের যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, কৃষকেরা তার বড় ভুক্তভোগী। এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্প বলেছেন, চালে ডাম্পিং করা ভারতের উচিত নয়।

ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যচুক্তি না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে কৃষিপণ্য। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের কৃষিপণ্যের বাজারে ঢুকতে চায়, কিন্তু ভারত কোনোভাবেই নিয়ে কৃষকের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করতে রাজি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি বড় অভিযোগ, ভারত রাশিয়ার তেল কিনে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের খরচ জোগাচ্ছে। সে অভিযোগসহ সামসগ্রিকভাবে বিভিন্ন অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।

এ বাস্তবতায় ট্রাম্প ভারতের চালে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করলে পরিস্থিতির যে আরও অবনতি হবে, তা বলাই বাহুল্য বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।