জরিপে অংশগ্রহণকারী ৮৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়ে ব্যাংক ধসে পড়লে করদাতাদের অর্থে তাদের বাঁচানো ঠিক নয়। তবে রিপাবলিকান সমর্থক ৪০ শতাংশ ও ডেমোক্র্যাট সমর্থক ৫৫ শতাংশ মানুষ বলেছেন, সরকার বেইল আউট করলে তাঁরা সমর্থন করবেন।
এক দশক আগে রয়টার্স ও ইপসোসের আরেক জরিপে বেইল আউটের প্রতি সমর্থন আরও মৌন ছিল। ২০২১ সালের সেই জরিপে মাত্র ২০ শতাংশ রিপাবলিকান সমর্থক ও ৫৩ শতাংশ ডেমোক্র্যাট সমর্থক বলেছিলেন, তাঁরা বেইল আউট সমর্থন করেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক–ব্যবস্থার ওপর জনগণ একেবারে আস্থা হারাননি। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৮ শতাংশ বলেছে, ব্যাংক–ব্যবস্থায় তাদের বেশ ভালো রকম আস্থা আছে।
এ ছাড়া ৭৭ শতাংশ বলেছে, ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে শেয়ারহোল্ডার ও নির্বাহীরা যে মুনাফা করেছেন, তা আমানতকারীদের ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।
বিষয়টি হচ্ছে, গত বছরের শুরুতেই ফেডের নীতি সুদহার ছিল শূন্যের কাছাকাছি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেনজনিত মূল্যস্ফীতির প্রভাব মোকাবিলায় গত এক বছরে ফেড আটবার নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছে। ফলে বাণিজ্যিক ঋণের সুদহারও বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে সে দেশের বন্ডের সুদহার বেড়েছে। ঋণ ও বন্ডের সুদহার বেড়ে যাওয়ার সম্মিলিত ফল হলো, বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদ জায়গায় বিনিয়োগ করার সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়া। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা ভাবছেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রকল্পে বিনিয়োগ না করে বরং বন্ডে বিনিয়োগ করাই ভালো, আরামে সুদ খাওয়া যাবে।
এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো। বিনিয়োগকারীরা স্টার্টআপে বিনিয়োগ কমিয়ে দেওয়ায় সিলিকন ভ্যালির এ স্টার্টআপগুলো সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে রক্ষিত আমানত ভেঙে খেতে শুরু করে। তাতে সিলিকন ভ্যালির ব্যাংকের আমানতে টান পড়ে। এ বাস্তবতায় এসভিবি গত বুধবার ২১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বন্ড বিক্রি করে, যার সিংহভাগই ছিল মার্কিন ট্রেজারি বন্ড। এর সুদহার ছিল ১ দশমিক ৯ শতাংশ, অথচ ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার প্রায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। ফলে তাদের ক্ষতি হয় ১৮০ কোটি ডলার।
এ ঘটনার পর গ্রাহকেরা এক দিনে ৪২ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার তুলে নিলে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। তার জেরে তিন দিনের মধ্যে সিগনেচার ব্যাংকের পতন হয়।
তবে মালিকপক্ষকে বাঁচানোর চেয়ে গ্রাহকদের কীভাবে সুবিধা হবে, তা নিশ্চিত করতেই এবার ব্যস্ত ছিল মার্কিন সরকার। সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ ও ফেডারেল রিজার্ভের যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, মার্কিন অর্থনীতি সুরক্ষিত ও মানুষের আস্থা ধরে রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এ এফডিআইসি সিগনেচার ব্যাংকের সব হিসাব আরেকটি ব্যাংক ‘ফিফথ থার্ড ব্যাংক’ করপোরেশনে স্থানান্তর করেছে। গ্রাহকদেরও সমস্যা নেই। সোমবার থেকেই গ্রাহকেরা হিসাব ব্যবহার করে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন।