অনভিজ্ঞতার কারণে অনেকে চামড়ার সঠিক দাম পান না

এবারের চামড়ার ব্যবসার নানা দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ চামড়া কিনতে পেরেছেন পোস্তার আড়তদারেরা?

আফতাব খান: ঈদের প্রথম তিন দিনে আমাদের কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য দেড় লাখের মতো। গতকাল (ঈদের প্রথম দিন) থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত এক লাখের মতো কাঁচা চামড়া কিনতে পেরেছি। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ চামড়া ঈদের দিন কেনা হয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ঢাকার বাইরের লবণ দেওয়া চামড়া কবে থেকে আসা শুরু হবে?

আফতাব খান: সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ঈদের ১০ দিন পর থেকে ঢাকার বাইরে থেকে চামড়া ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে। সারা দেশ থেকে যত পরিমাণে লবণ দেওয়া চামড়া ঢাকায় আসে, তার প্রায় ৭০ শতাংশ সরাসরি ট্যানারিগুলোতে চলে যায়। বাকি ৩০ শতাংশ চামড়া পোস্তার ব্যবসায়ীরা কিনে পরে ট্যানারির মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। ২০ বছর আগেও লবণ দেওয়া শতভাগ চামড়া পোস্তার মাধ্যমে ট্যানারিতে যেত। এখন আর সেই অবস্থা নেই।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনারা লবণ দেওয়া চামড়া কবে থেকে ট্যানারিতে বিক্রি করবেন?

আফতাব খান: ঈদের চতুর্থ দিন থেকেই আড়তের লবণযুক্ত চামড়া বিক্রি শুরু হয়ে যায়। ঈদের প্রথম তিন দিনে যেসব কাঁচা চামড়া আসে, তা মোটামুটি ১৫ দিনের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। আর সারা দেশ থেকে যেসব লবণযুক্ত চামড়া আসে, তা বিক্রি হতে দুই–আড়াই মাস সময় লাগে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এ বছর চামড়ার দরদাম কেমন মনে হয়েছে?

আফতাব খান: আমরা যেটা বুঝতে পেরেছি, এ বছর সবার জন্যই চামড়া বেচাকেনা ভালো হয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ী, মাদ্রাসা ও এতিমখানা—সবাই ভালো দামে চামড়া বিক্রি করতে পেরেছে। পোস্তার আড়তদারেরাও এবার চামড়া কিনে খুশি। আশা করছি সরকার যে দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, ট্যানারির মালিকেরা সেই দামেই লবণ দেওয়া চামড়া কিনবেন। তা না হলে আড়তদারেরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: পোস্তায় চামড়া সরবরাহ দিন দিন কমছে কেন?

আফতাব খান: পোস্তায় আড়তের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমেছে। ২০১৫ সালের আগে ২৩০টি আড়ত ছিল। এখন আছে ১১০টি। অনুমোদনহীন অনেক প্লাস্টিক কারখানা গড়ে উঠেছে এই এলাকায়। তারা বেশি ভাড়া দিয়ে ঘর ভাড়া নিচ্ছে। ফলে চামড়া ব্যবসায়ীরা আড়তের জন্য ঘর ভাড়া পাচ্ছেন না। পাশাপাশি অনেকেই এখন স্থানীয় পর্যায়ে চামড়ায় লবণ দিয়ে বিক্রি করছেন। এ ছাড়া হেমায়েতপুরসহ কয়েকটি স্থানেও চামড়ার আড়ত গড়ে উঠেছে। এসব কারণে পোস্তা এলাকায় চামড়ার সরবরাহ কমছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: অনেকে অভিযোগ করছেন, চামড়ার ন্যায্যমূল্য পাননি—এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

আফতাব খান: বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে আমি বলব, সেটাও হয়েছে অনভিজ্ঞতার কারণে। যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ী অনেক বছর ধরে চামড়া কেনাবেচা করছেন, তাঁরা মুনাফা করতে পারেন। তবে দু–একজন হঠাৎ করে কাঁচা চামড়া কেনাবেচার ব্যবসায় নেমে যান। অভিজ্ঞতা কম থাকায় তাঁরা প্রাথমিক উৎস থেকে বেশি দামে চামড়া কেনেন। কিন্তু পরে সেই দামে আর বিক্রি করতে পারেন না। তাই ক্ষতিগ্রস্ত হন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বাজারে ছাগলের চামড়ার দাম এত কম কেন?

আফতাব খান: চামড়ার বাজারদর আন্তর্জাতিক দরদামের ওপর নির্ভর করে। আন্তর্জাতিক বাজারে ছাগলের চামড়ার চাহিদা কমে যাওয়ায় দেশেও দাম কমে গেছে। সাধারণত পাঁচ বর্গফুটের কম আয়তনের ছাগলের চামড়া এখন আর চলে না। উত্তরবঙ্গের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের চামড়া আকারে বড় হওয়ায় সেটার কিছু চাহিদা আছে।