ভারত গত সোমবার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। পরদিন ফরিদপুর ও পাবনার বড় হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা হয়ে যায়। তার পরদিন অবশ্য পেঁয়াজের দাম কমে ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ হয়েছে। তবে খুচরা বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। আসলে ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার দিন সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাই মানুষ প্রয়োজনের থেকে বেশি পেঁয়াজ কিনে মজুত করেন।
ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় বেঙ্গালুরুতে। সেখানকার প্রথম দুটি ফসল (পেঁয়াজ) বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। তৃতীয়টির আংশিক নষ্ট হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করতে পারে, সেই আশঙ্কা ছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরেও একই সমস্যার কারণে তারা পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছিল। ফলে দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজার পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে দুই-এক মাস আগেই সরকার যদি ব্যবসায়ীদের বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানির পরামর্শ দিত, তাহলে এমন বিপর্যয় এড়ানো যেত।
অবশ্য গতবারের মতো পেঁয়াজের বাজার অতটা খারাপ হবে না। কারণ, দেশেও পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি হয়েছে। ব্যবসায়ী থেকে কৃষকপর্যায়ে পেঁয়াজের মজুত রয়েছে। তা ছাড়া চীন, তুরস্ক, মিসর ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য ব্যবসায়ীরা ঋণপত্র খুলেছেন। চলতি মাসের শেষের দিকে সেসব পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। ব্যবসায়ীরা সাধারণত ভারতের বাইরে তৃতীয় কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন না। তার কারণ হচ্ছে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে খরচে পোষানো যায় না। তা ছাড়া ভোক্তারাও বাংলাদেশ ও ভারতের বাইরের অন্য কোনো পেঁয়াজ কিনতে চান না।
পেঁয়াজের মতো পচনশীল দ্রব্যের মূল্য সব সময় চাহিদা ও জোগানের ওপর নির্ভর করে। ফলে বাজারে অভিযান চালিয়ে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। উল্টো অভিযানের মাধ্যমে হয়রানি করা হলে হিতে বিপরীত ঘটনা ঘটতে পারে। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা নিজেদের গুটিয়ে নিতে পারেন। তাই সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।
লেখক, পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক পেঁয়াজ আমদানিকারক