প্রাইজবন্ড কিনে ভাগ্য দেখুন

আপনার ছোট শিশুকে কেউ টাকা দিয়েছেন। এখনই তাঁর নামে ব্যাংক হিসাব খুলতে চাইছেন না। ভাবছেন, কী করবেন। অথবা কাছের কারও বিয়ে, বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন বা সুন্নতে খতনা। নগদ টাকা বা উপহার হিসেবে কোনো পণ্যও দিতে চাইছেন না। তাহলে কী করবেন। আপনার জন্য সহজ সমাধান প্রাইজবন্ড দেওয়া। প্রতিটি প্রাইজবন্ডের মূল্য ১০০ টাকা। প্রাইজবন্ড ভাঙিয়ে সহজেই নগদ টাকা পাওয়া যায়। আবার ধরে রাখলে প্রাইজবন্ডের মাধ্যমে নগদ পুরস্কারও জিততে পারেন। ভাগ্যে থাকলে মাত্র ১০০ টাকা বিনিয়োগ করেও ৬ লাখ টাকার মালিক বনে যাওয়া সম্ভব। 

সমাজের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে সঞ্চয়প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য এটি চালু করে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে চালু এ বন্ডের নাম ‘বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড’। প্রাইজবন্ডকে পুরস্কার বন্ড ও লটারি বন্ডও বলা হয়। আবার সুদের কোনো ব্যাপার নেই বলে একে সুদবিহীন বন্ডও বলা হয়। ভাঙানো ও কেনা—দুটোই করা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সব ক্যাশ অফিস, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে। বছরে চারবার লটারির ড্র হয়, তাতেই নির্ধারণ হয় কারা জিতল পুরস্কার। প্রতিবছরে ৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই ও ৩১ অক্টোবর লটারি ড্র হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, যে কেউ চাইলেই প্রাইজবন্ড কিনতে পারেন। আবার ভাঙানো যাবে যখন-তখন। এর কোনো মেয়াদ বা সীমা নেই।

এটি সঞ্চয় অধিদপ্তরের পণ্য হলেও পরিচালনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে সরকার বাজার থেকে টাকা ধার করে। এর কোনো মেয়াদ না থাকায় যেকোনো সময় বিক্রিও করা যায়। 

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বর্তমানে বাজারে ৫ কোটি ৬৬ লাখ ৬৯ হাজার ৮৯৪টি প্রাইজবন্ড রয়েছে। ফলে গ্রাহকেরা ৫৬৬ কোটি টাকার এ বন্ড কিনেছেন। প্রাইজবন্ডের ড্র করে থাকে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে চেয়ারম্যান করে গঠিত কমিটি। তবে কেনার দুই মাস পার হওয়ার পর প্রাইজবন্ড ড্রয়ের আওতায় আসে। নতুন কেনা প্রাইজবন্ডের পাশাপাশি আগে কিনে রাখা প্রাইজবন্ডও ড্রয়ের আওতায় থাকে। ড্র অনুষ্ঠানের দুই বছর পর্যন্ত পুরস্কারের টাকা দাবি করা যায়। এর মধ্যে কেউ দাবি না করলে পুরস্কারের অর্থ তামাদি হয়ে সরকারি কোষাগারে ফেরত যায়।

প্রাইজবন্ডে প্রতিটি সিরিজের জন্য ৪৬টি পুরস্কার রয়েছে। সব মিলিয়ে ৫৮টি সিরিজের জন্য রয়েছে ২ হাজার ৬৬৮টি পুরস্কার। প্রথম পুরস্কার ১টি ৬ লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ১টি ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার ২টি ১ লাখ টাকা করে, চতুর্থ পুরস্কার ২টি ৫০ হাজার টাকা করে এবং পঞ্চম পুরস্কার ৪০টি ১০ হাজার টাকা করে। 

জেতার পর মূল বন্ডসহ নির্ধারিত ফরমে আবেদন করলে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে বিজয়ীকে পে-অর্ডার দেওয়া হয়। তবে ১৯৯৯ সালের ১ জুলাই থেকে পুরস্কারের টাকার ওপর সরকারকে উৎসে কর দিতে হয় ২০ শতাংশ। 

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সুদ না থাকায় প্রাইজবন্ডের চাহিদা কম। আবার যাঁরা কিনেছেন, তাঁরা বিক্রিও কম করেন। ড্রয়ের আগে অনেকে কিনে থাকেন, আবার পরে বিক্রি করে দেন।

ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, বিশ্বে প্রথম প্রাইজবন্ড চালু হয় ১৯৫৬ সালে, আয়ারল্যান্ডে। বাংলাদেশে প্রথম চালু হয় ১৯৭৪ সালে। তবে তখন ছিল ১০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড। ১৯৮৫ সালে চালু হয় ৫০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড। ১৯৯৫ সালে ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু হওয়ার পর ১০ টাকা ও ৫০ টাকা মূল্যমানের বন্ডগুলো সরকার তুলে নেয়। ভারত-পাকিস্তানে ১০০ থেকে ৪০ হাজার রুপি মূল্যমানের ৮ ধরনের প্রাইজবন্ড থাকলেও বাংলাদেশে ২০ বছর ধরেই রয়েছে শুধু ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড।