‘ভুতুড়ে চাকরি’ নিয়ে বিপাকে যুক্তরাষ্ট্র
সম্পর্কে যখন কেউ হঠাৎ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়, সেটাকে বলা হয় ‘ঘোস্টিং’। কিন্তু চাকরির ‘ঘোস্টিং’ আবার কী? চাকরিপ্রার্থীরা আবেদনের পর আবেদন পাঠাচ্ছেন, প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছেন, কিন্তু চাকরিদাতা একেবারেই নিরুত্তর। এটিই হতে পারে ‘ঘোস্ট জব’ বা ‘ভুতুড়ে চাকরি’।
ভুতুড়ে চাকরি হলো এমন একটি চাকরির পদ, যা কোনো কোম্পানি বিজ্ঞাপন দেয়, কিন্তু বাস্তবে তা অস্তিত্বহীন বা সত্যিকারের নিয়োগের উদ্দেশ্যে নয়। অন্য কথায়, পদটি হয় নকল, ইতিমধ্যেই পূরণ হয়ে গেছে, অথবা তা সরাসরি নিয়োগের জন্য নয়।
ঘোস্ট জবের বিস্তার
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির ওপর একটি সমীক্ষা অনুসারে, অনলাইনে বিজ্ঞাপিত চাকরির ২২ শতাংশ আসলে নিয়োগের উদ্দেশ্য ছাড়া পোস্ট করা হয়। যুক্তরাজ্যের একটি সমীক্ষায় এই সংখ্যা ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত দেখানো হয়েছে। মার্কিন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন চাকরির বিজ্ঞাপন থাকলেও মাত্র ৫ দশমিক ১ মিলিয়ন মানুষ নিয়োগ পেয়েছিলেন।
কোম্পানির ‘প্রতারণা’ নাকি পরিকল্পনা?
ক্যারিয়ার কোচ জাসমিন এসকালেরা ও তাঁর সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, কিছু কোম্পানি পদগুলো পোস্ট করে ‘ট্যালেন্টপুল’ তৈরি করতে চায়, অর্থাৎ এখন না নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও ভবিষ্যতের জন্য তথ্য সংগ্রহ করে রাখে। অন্যরা নিজেদের বৃদ্ধির চিত্র দেখাতে পদসংখ্যা বাড়িয়ে দেখায়, আবার কেউ কেউ ডেটা সংগ্রহ ও বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেয়।
চাকরিপ্রার্থীর ওপর প্রভাব
এরিক থম্পসনসহ বহু চাকরিপ্রার্থী জানান, ঘোস্ট জব তাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করেছে এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করেছে। লেস্টারের মার্কেটিং পেশাজীবী আইলিশ ডেভিস বলেন, আবেদন করার পর কোনো সাড়া না পাওয়া ‘সোল ডেস্ট্রয়িং’। নিয়োগকারীদের উচিত চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানো।
আইনগত পদক্ষেপ
কানাডার অন্টারিও রাজ্য নেতৃত্ব দিচ্ছে। ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কোম্পানিগুলোকে প্রকাশ করতে হবে যে বিজ্ঞাপিত পদটি সত্যিই পূরণ করা হচ্ছে কি না। ২৫ জনের বেশি কর্মচারী থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাক্ষাৎকার নেওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে প্রার্থীদের উত্তর দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে এরিক থম্পসন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। ‘দ্য ট্রুথ ইন জব অ্যাডভারটাইজিং অ্যান্ড অ্যাকাউন্টাবিলিটি অ্যাক্ট’ প্রস্তাব করে তিনি নকল চাকরির বিজ্ঞাপন বন্ধের দাবি তুলেছেন। নিউ জার্সি ও ক্যালিফোর্নিয়ার আইনসভাগুলোও একই বিষয়ে নজর দিচ্ছে।
চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি পরামর্শ
ড. এসকালেরা বলেন, সরাসরি কোম্পানির হায়ারিং ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করুন। যদি কোনো পদ দীর্ঘ সময় ধরে বারবার পোস্ট হয় বা বিজ্ঞাপনটি অনিয়মিতভাবে পুনরায় প্রকাশিত হয়, তবে সতর্ক হওয়া উচিত।