চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের আন্দোলনে হামলার অভিযোগ, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

৫ দফা দাবিতে ১৯ অক্টোবর থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। রাজু ভাস্কর্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২৭ অক্টোবরছবি: প্রথম আলো

চোখে নেই আলো, হাতে সাদাছড়ি। চাকরির দাবিতে রাস্তায় বসা প্রতিবন্ধী তরুণ-তরুণীদের চোখেমুখে ক্লান্তি আর ক্ষোভ। দাবিদাওয়া না মানা শুধু নয়, এবার আন্দোলনরত প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ ও বহিরাগত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।

চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা জানান, ৫ দফা দাবিতে ১৯ অক্টোবর থেকে তাঁরা রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেও বারবার পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে শাহবাগে পুলিশি ব্যারিকেডের ভেতরে অবস্থান নেওয়ার সময় হঠাৎ বহিরাগত কয়েকজন এসে তাঁদের ওপর হামলা চালায়। হামলার পর আহত ব্যক্তিদের কেউ কেউ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবারও আন্দোলনের স্থানে ফিরে আসেন।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মাসুদুর রহমানের ভাষ্য, ‘প্রথমে কিছু বহিরাগত এসে আমাদের মারধর করে। পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখে। পরে তিনজন পুলিশ আমাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে মেরেছে, শার্ট ছিঁড়ে দিয়েছে। পথচলার প্রধান মাধ্যম সাদাছড়ি ভেঙে ফেলেছে। পানি চাইলে দেয়নি।’

আরেক আন্দোলনকারী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘পুলিশ আমাকে সরে যেতে বলেছিল। আমি উঠতেই একজন পা দিয়ে পেটের নিচে আঘাত করে। প্রচণ্ড ব্যথায় কুঁকড়ে উঠি, রাস্তায় পড়ে যাই, বমি করি।’ তাঁর দাবি, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ ও বহিরাগত ব্যক্তিরা বর্বরোচিত হামলা করছে।

আন্দোলনকারীরা জানান, হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন প্রতিবন্ধী। তাঁদের মধ্যে দুজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন

পুলিশের দাবি, ‘সব মিথ্যা’

এদিকে চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। শাহবাগ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘থানায় কাউকে মারধর করা হয়নি। এগুলো নির্জলা মিথ্যা। তারা রাস্তায় বসে যানজট তৈরি করেছিল। এতে অ্যাম্বুলেন্সের রোগীর স্বজনসহ পথচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। উত্তেজিত জনতা হয়তো হামলা করেছে।’

তবে আন্দোলনকারীদের দাবি, হামলার সময় পুলিশ উপস্থিত ছিল এবং কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে বিচার দাবি

হামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার বিকেল চারটায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদ। পরিষদের আহ্বায়ক আলী হোসাইন বলেন, ‘৯ দিন ধরে রাস্তায় আছি, সরকার কোনো উত্তর দিচ্ছে না। উল্টো হামলা হচ্ছে। থানায় নিয়ে মারধর করা হয়েছে। দোষী পুলিশ সদস্য ও সন্ত্রাসীদের বিচার করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোনো আশ্বাস শুনতে চাই না। অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার আন্দোলনকারীদের প্রতি সংহতি জানান এবং হামলার দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেন।

প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা সংবাদ সম্মেলন থেকে পাঁচ দফা দাবি জানান। তাঁদের প্রধান দাবিগুলো হলো প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য বিশেষ নিয়োগপ্রক্রিয়া চালু করা; মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগের সুযোগ দেওয়া; চাকরিতে যোগদানের বয়সসীমা শিথিল করা এবং চলমান আন্দোলনে হামলার বিচার করা।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে পুলিশের বক্তব্য, ব্যস্ত রাস্তায় অবস্থানের কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন