বিসিএস ভাইভা অভিজ্ঞতা-১২, খাদ্যচাহিদা মেটাতে কৃষিবিদেরা কী কী ভূমিকা রেখেছেন

মো. নাজমুস শাহাদাত ফাহিম
ছবি: সংগৃহীত

৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলবে আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৯ হাজার ৮৪১ প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। প্রতিদিন ১৮০ জনের ভাইভা নিচ্ছে পিএসসি। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য আগে যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত আয়োজনে আজ ১২তম পর্বে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. নাজমুস শাহাদাত ফাহিম।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করে ৪১তম বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন নাজমুস শাহাদাত। এটাই ছিল তাঁর প্রথম বিসিএস। তাই ভাইভার আগে বিচলিত ছিলেন। গত ১৫ মার্চ মৌখিক পরীক্ষা হয় তাঁর।

আরও পড়ুন

নাজমুস শাহাদাত বলেন, ‘১৭ থেকে ১৮ মিনিট ভাইভা হয় আমার। ভাইবা বোর্ডে ১০ থেকে ১২টি প্রশ্ন করা হয়েছিল। সব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও মোটামুটি যতটুকু জানি, তা বলার চেষ্টা করেছি, না পারলে দুঃখ প্রকাশ করেছি।’

যেহেতু কৃষি বিষয়ে স্নাতক পাস করেছেন, তাই নাজমুস শাহাদাতকে কৃষিবিষয়ক কয়েকটি প্রশ্ন করা হয়।

তবে অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে তাঁর পঠিত বিষয়ে কম প্রশ্ন করা হয়েছে। নাজমুস শাহাদাতের কাছে জানতে চাওয়া হয়, দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা মেটাতে কৃষিবিদেরা কী কী ভূমিকা রেখেছেন?
এর উত্তরে নাজমুস শাহাদাত বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে ক্রমাগত নগরায়ণের কারণে কৃষিজমি কমে এক-তৃতীয়াংশ হয়েছে এবং জনসংখ্যা হয়েছে প্রায় তিন গুণ। তবু কৃষিবিদদের একের পর এক উচ্চফলনশীল জাত আবিষ্কার, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন জাত উন্নয়ন এবং মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের মানুষের খাদ্যচাহিদা পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন কৃষিবিদেরা।

আরও পড়ুন
মো. নাজমুস শাহাদাত ফাহিম
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন

কৃষিজমিতে পোকা ও রোগবালাই দমন করে কৃষিবিদেরা যেমন একদিকে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়িয়েছেন, অন্যদিকে প্রাণিসম্পদের উৎপাদন বাড়িয়ে আমিষের চাহিদা পূরণে কাজ করছেন।

দেশের কোন অঞ্চল কোন ফসলের জন্য বিখ্যাত—এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। নাজমুস শাহাদাতকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ময়মনসিংহে কোনো ফসল বেশি উৎপন্ন হয়? উত্তরে ‘ধান’ বলায় সম্পূরক প্রশ্ন করা হয়—গম, নারকেল ও চা কোন অঞ্চলে বেশি হয়? উত্তরে তিনি বলেন, গম উত্তরবঙ্গে, নারকেল দক্ষিণবঙ্গে আর চা সিলেট অঞ্চলে বেশি হয়।

৪১তম বিসিএসে নাজমুস শাহাদাতের প্রথম পছন্দ ছিল প্রশাসন ক্যাডার, দ্বিতীয় পুলিশ ক্যাডার এবং তৃতীয় শুল্ক ও আবগারি ক্যাডার। মৌখিক পরীক্ষার দিন ১৫ জনের মধ্যে শেষ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘একে একে সবাই ভাইভা দিয়ে বের হচ্ছিল আর আমার দুশ্চিন্তা বাড়ছিল। মনে হচ্ছিল, সময় যাচ্ছে না।’

ভারত-শ্রীলঙ্কার কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে বলা হয় নাজমুস শাহাদাতকে। ইংরেজিতে প্রশ্ন করায় ইংরেজিতে উত্তর দেন।  মো. নাজমুস শাহাদাত বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে তখন একটা মন্ত্রিপর্যায়ের আলোচনা হয়েছিল, ভাইভা বোর্ডে স্যার নিজেই সেটা বলেছিলেন। আমার জানা না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেছিলাম।’

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যকার সংকটের কারণ এবং বাংলাদেশের করণীয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। নাজমুস শাহাদাত বলেছিলেন, ‘বিশ্বের কোনো দেশের সঙ্গেই আমরা শত্রুতায় জড়াব না, বরং সবার সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলব। এ জন্য যতটা সম্ভব চেষ্টা করতে হবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সংকট সমাধানের এবং আন্তর্জাতিক মত গড়ে তুলতে হবে।’

মো. নাজমুস শাহাদাতের স্নাতকে সিজিপিএ–৩.৭৩ এবং স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ–৩.৯৩। ভাইভায় তাঁর সনদ দেখে স্যাররা সিজিপিএর প্রশংসা করেন। প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পড়া শিক্ষা কীভাবে কাজে লাগাবেন, তা জানতে চাওয়া হয়। প্রশাসন ক্যাডারের মাঠপর্যায়ের কাজের সঙ্গে তুলনা করে উত্তর দিয়েছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতির তুলনা করতে বলা হয় নাজমুস শাহাদাতকে। নিয়মিত পত্রিকা পড়ায় এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা ছিল তাঁর। কিছু তথ্যসহ কয়েকটি পয়েন্টে উত্তর দেন। উত্তর শুনে স্যাররা খুশি হয়েছিলেন।

বাংলাদেশের কিছু মানবাধিকার সংগঠন এবং তাদের প্রধানদের নামও জিজ্ঞাসা করা হয়। দুটি সংগঠনের নাম বলতে পারলেও প্রধানদের নাম বলতে পারেননি। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ‘মানবাধিকার’ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। নাজমুস শাহাদাত সংবিধান ভালোভাবে পড়েছিলেন, তাই ঠিকমতো উত্তর দিতে পেরেছিলেন।

প্রশাসন ক্যাডারের পদক্রম জানতে চাওয়া হয়। মাঠ প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় প্রশাসন—দুভাবেই পদক্রম বলেন তিনি। জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব জানতে চাইলে সব কটি বলতে পারেননি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাতই মার্চের ভাষণের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল।

নাজমুস শাহাদাত বলেন, পত্রিকা পড়ার অভ্যাস মৌখিক পরীক্ষায় খুব সাহায্য করেছিল। নিয়মিত পত্রিকা পড়ায় অনেক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ হয়েছিল। আত্মবিশ্বাস থাকায় ভাইভা ভালো হয়েছিল।