চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ৩৫ হাজার পদ যে কারণে শূন্য

ফাইল ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষক নিয়োগের চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত ফলে ৬৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগের কথা থাকলেও নির্বাচিত হয়েছেন ৩২ হাজার ৪৩৮ জন প্রার্থী। কেন ৩৫ হাজারের বেশি প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ দেওয়া গেল না, সেই ব্যাখ্যা দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। প্রথম আলোকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. এনামুল কাদের খান এসব ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

জানতে চাইলে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. এনামুল কাদের খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, আমরা কেন চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ৩৫ হাজারের বেশি প্রার্থীকে নিয়োগ দিইনি। বিষয়টি আসলে একটু জটিল। কোনো কোনো বিষয়ে অনেক আবেদন জমা পড়েছে। যেখানে সব প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করা যায়নি। আবার কোনো কোনো বিষয়ে আবেদন কম পড়েছে কিন্তু সেসব বিষয়ে বেশিসংখ্যক প্রার্থীর নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ ছিল।’

এই বিষয়ে উদাহরণ দিতে গিয়ে চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান বলেন, ‘চারুকলা বিষয়ে পদ খালি ছিল ৩ হাজার কিন্তু আমরা আবেদন পেয়েছি ১১ জনের। আবার সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ১ হাজার ৬৩৩টি পদ খালি, সেখানে আবেদন এসেছে ১৯ হাজার। আবার একটি বিষয়ে পদ আছে ৪ হাজার, আবেদন করেছেন ৪২ হাজার প্রার্থী। এখানে আমরা সবাইকে নিয়োগ দিতে পারিনি। এ রকম পরিস্থিতিতে পদ খালি না থাকা সবাইকে নিয়োগ দেওয়া যায়নি। পদ খালি ছিল, প্রার্থীরা আবেদন করেছেন কিন্তু আমরা তাতে সুযোগ থাকার পরও নিয়োগ দিইনি, এমনটা হয়নি। তবে যেসব পদে নিয়োগ দেওয়া যায়নি, তা অন্য গণবিজ্ঞপ্তি থেকে পূরণের উদ্যোগ নিচ্ছি আমরা। আমাদের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কাজ করছেন।’

আরও পড়ুন

বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি থেকে ৩৫ হাজার প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘অন্য গণবিজ্ঞপ্তি থেকে সেগুলো পূরণ করা যাবে। তাই বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির পরিকল্পনা আমাদের নেই।’

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির অনলাইন পুলিশ ভেরিফিকেশন এ সপ্তাহে

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির অনলাইন পুলিশ ভেরিফিকেশন এ সপ্তাহে শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে এনটিআরসিএ। এনটিআরসিএ বলছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ অনলাইন পুলিশ ভেরিফিকেশনের এ কাজ তদারক করছে।

শিক্ষক নিয়োগের চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচিত ৩২ হাজার ৪৩৮ জন প্রার্থীর চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশন সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে এনটিআরসিএ। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এবার নির্বাচিত প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন অনলাইনে করার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি করা গেলে অল্প সময়েই নিয়োগ পাবেন নির্বাচিত প্রার্থীরা।

কোনো কোনো বিষয়ে অনেক আবেদন জমা পড়েছে। যেখানে সব প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করা যায়নি। আবার কোনো কোনো বিষয়ে আবেদন কম পড়েছে কিন্তু সেসব বিষয়ে বেশিসংখ্যক প্রার্থীর নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ ছিল।
মো. এনামুল কাদের খান, এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান প্রথম আলোকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগ অনলাইন পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়টি দেখছে। তারাই মূলত এই কাজ করে। তারা এই সপ্তাহের মধ্যেই একটি লিংক তৈরি করে এনটিআরসিএ কে দেবে। সেখান থেকে প্রার্থীরা অনলাইনে পুলিশ ভেরিফিকেশনের আবেদন করতে পারবেন। চলতি সপ্তাহে এটি শুরু করা সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেন এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান।

মো. এনামুল কাদের খান আরও বলেন, ‘নির্বাচিত প্রার্থীরা যাতে অনলাইনে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করতে পারেন, সে জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। মন্ত্রণালয় একটি অনলাইন লিংক তৈরি করে আমাদের দেবে। সেখান থেকে প্রার্থীরা যথাযথ তথ্য দিয়ে লগইন করতে পারবেন এবং প্রার্থীর দরকারি কাগজপত্র আপলোড করতে পারবেন। সেই কাগজপত্র যথাযথ কর্তৃপক্ষ দেখে ভেরিফিকেশন অনলাইনে করতে পারবেন।’ দু-এক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কয়েকজন প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশনে অনেক বেশি সময় লেগে গেছে। এমনও হয়েছে, এ কারণে অনেকের নিয়োগ-জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ প্রক্রিয়া যদি অনলাইনে হয়, তাহলে অনেক কষ্ট ও ভোগান্তি কমে আসবে এবং নিয়োগ দ্রুত হবে। আমরা অনলাইনে ভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাই। আমরা চাই, এবার থেকেই এই নিয়ম বাস্তবায়িত হোক।’

সম্প্রতি চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। ফলাফলে ৩২ হাজার ৪৩৮ জন প্রার্থীকে নির্বাচন করা হয়েছে। এনটিআরসিএর এক বিজ্ঞপ্তিতে ফলাফল প্রকাশের কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ সুপারিশের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ৩২ হাজার ৪৩৮ জন প্রার্থীকে নির্বাচন করা হয়েছে। প্রাথমিক নির্বাচনের ফলাফল এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি নামক সেবা বক্সে পাওয়া যাচ্ছে।

এ ছাড়া নির্বাচিত প্রার্থী এবং প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের খুদে বার্তার মাধ্যমে ফল জানানো হয়েছে। নির্বাচিত প্রার্থীরা নিজ নিজ আবেদন আইডি ও মুঠোফোন নম্বর দিয়ে লগইন করে ফলাফল দেখতে পারবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা নিজ নিজ ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে তাঁর প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত প্রার্থীর তথ্য দেখতে পারবেন। কোনো নির্বাচিত প্রার্থী কিংবা প্রতিষ্ঠানপ্রধান টেকনিক্যাল কারণে খুদে বার্তা না পেলে এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটের চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি-২০২২ সেবা বক্স থেকে প্রাথমিক নির্বাচনের ফলাফল দেখতে পারবেন।

এনটিআরসিএ বলছে, এবার নির্বাচিত প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন অনলাইনে করার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি করা গেলে অল্প সময়েই নিয়োগ পাবেন নির্বাচিত প্রার্থীরা।

নির্বাচিত প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম অনলাইনে পূরণের কথাও বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচিত প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম (ভি-রোল) অনলাইনে পূরণ করে জমা দিতে হবে। ফরম জমা করা-সংক্রান্ত নির্দেশনা পরবর্তী সময় এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি ও নির্বাচিত প্রার্থীর মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানানো হবে।

২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর ৬৮ হাজার ৩৯০ জন শিক্ষক নিয়োগের চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ।