চুয়েটে চাকরি মেলা: ২০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের স্টলে কেউ দিচ্ছেন সিভি, কেউ সাক্ষাৎকার
সকাল থেকেই চাকরিপ্রত্যাশী তরুণ-তরুণীদের পদচারণে মুখর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্কেট বল মাঠ যেন রূপ নিয়েছে এক ক্ষুদ্র কর্মবাজারে—চারদিকে রঙিন ব্যানার, সারিবদ্ধ স্টল, করপোরেট দুনিয়ার অভিজ্ঞ মুখ আর নতুন স্বপ্নে ভরপুর শত শত শিক্ষার্থী। কারও হাতে সযত্নে গোছানো সিভি, কারও ব্যাগে পোর্টফোলিও, আবার কারও চোখে ভরসা আর আশার ঝিলিক। কেউ লাইন দিয়ে অপেক্ষায়, কেউ সরাসরি কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলছেন—সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয়েছে চুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব আয়োজিত চাকরি মেলা।
আজ শনিবার দুই দিনের ক্যারিয়ার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে সকাল নয়টায় শুরু হয় দিনব্যাপী এই চাকরি মেলা। ওয়ালটন, প্রাণ, বিএসআরএম, কে ওয়াই স্টিল, ইস্পাহানি, নাভানাসহ ২০টির বেশি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের স্টলে সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। কেউ সিভি জমা দিচ্ছেন, কেউ তাৎক্ষণিক সাক্ষাৎকারে অংশ নিচ্ছেন, আবার কেউ শিল্পক্ষেত্রের প্রযুক্তি ও দক্ষতা নিয়ে কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করছেন। অনলাইন ও সরাসরি মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী সিভি জমা দেন এ আয়োজনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সদ্য স্নাতক শিক্ষার্থী আল ফারাবি বলেন, ‘চাকরির জন্য আমাদের প্রতিদিনই খোঁজ রাখতে হয় এবং বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আবেদন জমা দিতে হয়। কিন্তু চুয়েটের চাকরি মেলায় একসঙ্গে ২০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে সিভি জমা দিতে পেরেছি। পাশাপাশি নিয়োগদাতাদের চাহিদা সম্পর্কে জানার সুযোগও হয়েছে। এটি আমাদের কষ্ট অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে।’
এদিন বেলা আড়াইটা থেকে অনুষ্ঠিত হয় ‘উদ্যোক্তা’, ‘ক্যারিয়ার টক’ এবং ‘করপোরেট নেটওয়ার্কিং ও দক্ষতা’ শীর্ষক তিনটি সেমিনার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন, হেইডেলবার্গ ম্যাটেরিয়ালস বাংলাদেশের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মিজানুর রহমান এবং গোভ্যালি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরুণ উদ্যোক্তা জিওন আহমেদ। সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয় দুই দিনের এ উৎসব, যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ আবদুল মতিন ভূইয়া।
এর আগে শুক্রবার উৎসবের প্রথম দিনে সকাল নয়টায় অনুষ্ঠিত হয় শিক্ষা খাত সংস্কার ও উন্নয়নের মডেল উপস্থাপন প্রতিযোগিতা। ছয় মিনিটে নিজেদের প্রস্তাবিত মডেল তুলে ধরেন ২৪টি দলের ৫০-এর বেশি প্রতিযোগী। বিজয়ী হয় চুয়েট শিক্ষার্থী আদিবা তাসনিম ও মুসারাত তাবাসসুম রিদির দল ‘খালি কলসি বাজে বেশি’।
বিজয়ী আদিবা তাসনিম বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এটি আমাদের আত্মবিশ্বাস ও উপস্থাপন দক্ষতা বাড়িয়েছে। পাশাপাশি উৎসবে অংশ নিয়ে ক্যারিয়ারসংক্রান্ত বিভিন্ন সেমিনারে নতুন অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।’
প্রথম দিনে আরও অনুষ্ঠিত হয় ‘উচ্চশিক্ষা’, ‘গবেষণা’, ‘বিসিএস প্রস্তুতি’ ও ‘ব্যাংক জব প্রস্তুতি’ শীর্ষক চারটি সেমিনার। এতে বক্তা ছিলেন ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত চুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাগর দে, ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মো. তাকি তাজওয়ার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক ও ৪৪তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত তানভীর রহমান এবং চুয়েটের ইলেকট্রনিকস ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুরশাদুল মামুন।
চুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাবের সভাপতি মো. আলি হাসান তুহিন বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা উদ্যোক্তা, বিসিএস, ব্যাংক জব, উচ্চশিক্ষা, গবেষণা প্রস্তুতিসহ নানা বিষয়ে সেমিনার আয়োজন করেছি। এসব সেমিনারে সফল ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। মূলত সদ্য স্নাতকদের চাকরির সুযোগ বাড়ানো এবং ক্যারিয়ার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিই আমাদের উদ্দেশ্য।’
এ আয়োজনের সহযোগী পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিল প্রথম আলো।