দেশি তরুণদের মধ্যে বাড়ছে লিংকডইনের জনপ্রিয়তা

বাংলাদেশি তরুণ চাকরিপ্রত‍্যাশী ও বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছেও পেশাগত উন্নয়নের কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে পেশাদার নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম লিংকডইন। মডেল: লাবণ্যছবি: প্রথম আলো

চাকরির বাজারে প্রবেশ করে হিমশিম খাওয়ার গল্প বাংলাদেশের লাখো তরুণের। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার কারণে অনেকেই প্রথম দিকে অপ্রস্তুত অবস্থায় চাকরির খোঁজে নামেন। এখন শুধু ডিগ্রি থাকা যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন যথাযথ তথ্য, পেশাগত নেটওয়ার্ক ও বিভিন্ন যুগোপযোগী দক্ষতা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০২৪ সালে দেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। প্রতিবছর ২০ থেকে ২২ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করেন। এক দশক ধরে এই সংখ্যা ২৫ থেকে ২৭ লাখের মধ্যেই রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে চাকরির খোঁজ পাওয়া থেকে শুরু করে সার্বিক বিষয়ে পরিবর্তন আনছে পেশাদার নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম লিংকডইন। শুধু চাকরি খোঁজার মাধ্যম নয়, নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করে এটি। বাংলাদেশি তরুণ চাকরিপ্রত‍্যাশী ও বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছেও পেশাগত উন্নয়নের কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে এটি।

আরও পড়ুন

লিংকডইনের সুবিধা

জাহিদ হাসান একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। অনেক খুঁজেও মনের মতো চাকরি পাচ্ছিলেন না। তখন এক শিক্ষকের পরামর্শে অ্যাকাউন্ট করেন লিংকডইনে। শুরু হয় তাঁর চাকরির খোঁজে নতুন যাত্রা এবং সফলতার দেখাও পান দ্রুত। লিংকডইন এন্ট্রি-লেভেল থেকে সিনিয়র পর্যায়ের নানা ধরনের চাকরি খুঁজে পাওয়া যায়। করপোরেট সেক্টরে যেমন মার্কেটিং, ফাইন্যান্স, মানবসম্পদ ও অপারেশনসের জন্য এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।

প্রযুক্তি খাত, ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের চাকরিও লিংকডইনে খুঁজে পাওয়া যায়। এসব চাকরির বিজ্ঞাপন সাধারণ পত্রিকা বা মোবাইল অ্যাপে পাওয়া যায় না। রিমোট কাজের জনপ্রিয়তা বেড়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে, তাই লিংকডইনকে তাঁরা প্রধান মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।

লিংকডইনেও ফিচার ও ডিজাইন পোর্টফোলিও হিসেবে ব্যবহার করা যায়। চাকরিপ্রার্থী পূর্বের কাজ, প্রজেক্ট ও দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেন। অনেক নিয়োগকর্তাই একাডেমিক যোগ্যতার পাশাপাশি এসব দক্ষতাকে বেশি গুরুত্ব দেন।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা বাড়ছে

ডেটারিপোর্টালের (DataReportal) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশে লিংকডইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৮ মিলিয়ন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২৫ সালের শুরুতে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯০ মিলিয়ন (মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৭ শতাংশ)। বর্তমানে বাংলাদেশের লিংকডইন ব্যবহারকারীর মধ্যে ৭০ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ নারী। এই সংখ্যার বড় অংশই তরুণ পেশাজীবী ও শিক্ষার্থী।

এশিয়ার অন্যান্য দেশেও বাড়ছে লিংকডইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ, পাকিস্তানে প্রায় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় প্রায় ১১ শতাংশ মানুষ লিংকডইন ব্যবহার করেন।

নিয়োগকর্তা হিসেবে লিংকডইনেও অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা হয় টেক স্টার্ট-আপ ‘পাঠাও’–এর মানবসম্পদ ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুর রহমান অভির সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, লিংকডইন প্রধানত টেকনিক্যাল পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বেশি দেয়। লিংকডইন থেকে যেসব সিভি আসে, তা বেশি প্রফেশনাল। লিংকডইনে পেশাদারি বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে, যা নিয়োগকর্তা ও চাকরিপ্রার্থী উভয়ের জন্যই উপকারী।

আরও পড়ুন

চাকরি খোঁজার অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে পার্থক্য

বর্তমান চাকরির বাজারে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যেমন লিংকডইন, ফেসবুক ও চাকরির অ্যাপগুলোর আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ফেসবুক মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হলেও স্থানীয় গ্রুপ ও কোম্পানি পেজের মাধ্যমে কিছু চাকরির বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এতে পেশাদার নেটওয়ার্কিং সুবিধা নেই। জব অ্যাপ ও ওয়েবসাইট যেমন Indeed, Glassdoor, Naukri ও BDJobs মূলত চাকরির বিজ্ঞপ্তি, অ্যাপ্লিকেশন ট্র্যাকিং ও কোম্পানি ইনসাইড প্রদান করে, তবে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ সীমিত।

লিংকডইন ব্যতিক্রমধর্মী, কারণ পেশাদার নেটওয়ার্কিং, ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড তৈরি এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক চাকরির সুযোগ পাওয়ার জন্য সবচেয়ে কার্যকর প্ল্যাটফর্ম এটি। লিংকডইনেও বেশ কিছু স্মার্ট টুলস যেমন অ্যাডভান্সড জব ফিল্টার, জব অ্যালার্টস এবং ইজি অ্যাপ্লাই ফিচার চাকরির আবেদন প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলেছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন