কর্মজীবী নারী: ১০ সত্যি মানলে জীবন সহজ হয়
কর্মজীবী নারীদের জীবনে চ্যালেঞ্জ কম নয়। একদিকে কর্মক্ষেত্রে অগ্রগতি, অন্যদিকে ঘরোয়া দায়িত্ব, এবং সবকিছু সামলানোর মধ্যে নিজের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা রক্ষা করা। তবে কিছু কার্যকর কৌশল অনুসরণ করে নারীরা এই ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেন। জীবনকে আরও অর্থবহ ও আনন্দময় করে তুলতে কর্মজীবী নারীরা দশ সত্যি অনুসরণ করুন।
১. নিজের প্রয়োজন ও মূল্য নির্ধারণ করুন
প্রতিদিন কিছু সময় নিজের জন্য বরাদ্দ করুন এবং ভাবুন—আজ কোন কাজগুলো মানসিক শান্তি ও জীবনের লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে। নিজেকে প্রশ্ন করুন, “আমি কী চাই? আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কী?” নিজের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করলে মানসিক চাপ কমে এবং জীবন আরও সংগঠিত হয়।
২. পারিবারিক দায়িত্ব সমানভাবে ভাগ করুন
পরিবারের দায়িত্ব একা নিলে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। পরিবারের সদস্যরা মিলে দায়িত্ব ভাগাভাগি করুন—যেমন রান্না, বাজার, সন্তানদের পড়াশোনা ও ঘরের অন্যান্য কাজ। খোলাখুলি আলোচনা করে দায়িত্ব সমানভাবে ভাগ করলে পরিবারের সব সদস্য সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে এবং কাজের চাপ কমবে।
৩. কর্মস্থলে নিজের দাবি উত্থাপন করুন
নিজের অবদান ও দায়িত্ব স্পষ্টভাবে তুলে ধরুন। গুরুত্বপূর্ণ মিটিং বা মূল্যায়ন সভায় প্রকল্পের সাফল্য, নতুন উদ্যোগ বা নিজের অতিরিক্ত দায়িত্বের উল্লেখ করুন। স্পষ্টভাবে কথা বললে ন্যায্য সুযোগ ও মূল্যায়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
৪. ‘না’ বলার কৌশল শিখুন
অতিরিক্ত চাপ এড়াতে ‘না’ বলা শিখুন। সরাসরি কিন্তু শালীনভাবে বলুন—‘আমি এখন এটি করতে পারছি না, তবে অন্য সময় সাহায্য করতে পারি।’ প্রয়োজন হলে বিকল্প সময় বা সমাধান প্রস্তাব করুন। ‘না’ বলার সংক্ষিপ্ত কারণ বলুন, বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রয়োজন নেই। এতে নিজের সময় ও শক্তির সঠিক ব্যবহার সম্ভব হয়।
৫. নিজের জন্য সময় তৈরি করুন
নিজের জন্য নিয়মিত সময় বের করুন। দৈনন্দিন জীবনের ছোট বিরতি নিন—পড়াশোনা, হাঁটা, গান শোনা বা মেডিটেশন। নিজের জন্য সময় রাখা মানসিক স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষমতার জন্য অপরিহার্য।
৬. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। ছোট অভ্যাস—প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট হালকা ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পানি পান, পর্যাপ্ত ঘুম—দৈনন্দিন জীবনে শক্তি ও মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে।
৭. আত্মবিশ্বাসী হোন
নিজের যোগ্যতা ও অর্জনের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করুন, মিটিংয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করুন এবং ছোট ছোট অর্জনকেও গুরুত্ব দিন। আত্মবিশ্বাসী মনোভাব আপনাকে কর্মক্ষেত্রে প্রভাবশালী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে।
৮. সহায়তা চাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
সবকিছু একা করার চেষ্টা মানসিক চাপ বাড়ায়। প্রয়োজনে সহকর্মী, বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিন। কাজে দায়িত্ব ভাগাভাগি করুন বা ঘরের দায়িত্বে অংশ নিন। সহায়তা চাওয়াটা মানসিক চাপ কমাতে এবং কাজের গুণগত মান বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
৯. কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনে ভারসাম্য রক্ষা করুন
সময় ব্যবস্থাপনা ও অগ্রাধিকার নির্ধারণের মাধ্যমে কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখুন। সপ্তাহের দিনগুলোয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও মিটিংয়ের জন্য সময় নির্ধারণ করুন এবং ছোট দায়িত্বগুলো ভাগাভাগি করুন। ছুটির দিনগুলো নিজের মতো করে উপভোগ করুন।
১০. সমাজে নারীর ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করুন
নারীর মর্যাদা ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় কমিউনিটিতে নারী নেতৃত্ব, শিক্ষার সুযোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধিবিষয়ক কর্মকাণ্ডে অংশ নিন। এটি শুধু আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে না, বরং সমাজে নারীর মর্যাদা ও ভূমিকা দৃঢ় করে। গার্ডিয়ান অবলম্বনে