আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ও বিজ্ঞানের প্রস্তুতিকৌশল নিয়ে কিছু কথা

শাহ মো. সজীব

সাধারণ জ্ঞানের অন্যতম স্থান দখল করে আছে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি। আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি নানা মাত্রায় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এখানে আছে অর্থনৈতিক ইতিহাস, রাজনৈতিক ইতিহাস, সামরিক ও যুদ্ধের ইতিহাস। আছে নানা ধরনের সংগঠন, কূটনৈতিক অবস্থান, ভূরাজনীতি। তাই একজন বিসিএস প্রত্যাশীকে লিখিত পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের আন্তর্জাতিক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। যেখানে টীকা আছে ৪০ নম্বর, বিশ্লেষণী ধরনের প্রশ্ন ৪৫ নম্বর এবং সমস্যা সমাধানমূলক প্রশ্ন ১৫ নম্বর। মোট ১০০ নম্বর। সময় ৩ ঘণ্টা। আর এতে তথ্যপূর্ণ লেখা না থাকলে নম্বর তোলা বেশ কঠিন। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ভালো করার জন্য যা করতে পারেন।

অ) বিগত বছরের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও টীকাগুলো একবার পড়ে নেবেন। বাকি প্রশ্ন আপাতত পড়ার দরকার নেই। তবে যেসব প্রশ্ন বর্তমানে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে, তা পড়ার প্রয়োজন নেই।

আ) সমসাময়িক বিষয়গুলো অবশ্যই জানতে হবে। এ জন্য দৈনিক পত্রিকার আন্তর্জাতিক পাতা খুব ভালো করে পড়বেন। মাসিক সাধারণ জ্ঞানের ম্যাগাজিন থেকেও আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলো মাথায় রাখবেন। প্রথমা প্রকাশনের ‘মাসিক চলতি ঘটনা’ আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

ই) আন্তর্জাতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোও জেনে যেতে হবে। ৩৪তম বিসিএসে দেখা গেছে, ঐতিহাসিক প্রশ্ন বেশি করে করেছে। এই অংশে যা গুরুত্বপূর্ণ, আমেরিকার স্বাধীনতা, মনরো ডকট্রিন, চৌদ্দ দফা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, হিটলারের উত্থান ও জার্মানি, বিশ্বমন্দা ১৯২৯-৩০, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, আমেরিকা-ভিয়েতনাম যুদ্ধ, স্নায়ুযুদ্ধ ইত্যাদি।

ঈ) যদি আপনার হাতে সময় থাকে, তবে ড. তারেক শামসুর রেহমানের ‘নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি’ বইটি পড়তে পারেন। কাজে লাগবে।

উ) পড়ার সময় আলাদা খাতায় সংক্ষিপ্ত আকারে নোট করতে পারেন, যাতে পরীক্ষার আগে একটু দেখা যায়।

ঊ) বাজার থেকে একটি আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির গাইড সংগ্রহ করে নিলেই হবে। আর দরকার নেই।

ঋ) কোয়াড বিতর্ক, রোহিঙ্গা সমস্যা, জাতিসংঘের সর্বশেষ সাধারণ সম্মেলন, আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার ও তালেবানদের শাসন, প্রভাবশালী রাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পররাষ্ট্রনীতি, করোনা টিকার রাজনীতি পড়ে যাবেন।

এ) প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় বিষয়সম্পর্কিত ম্যাপ, চিত্র, তুলনামূলক ছক, হার, সারণি ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে।

ঐ) কিছু তাত্ত্বিক বিষয় সম্পর্কে কনসেপচুয়াল ধারণা নিয়ে যাবেন। যেমন অর্থনৈতিক কূটনীতি, জাতিরাষ্ট্র, অরাষ্ট্রিক নিয়ামক, ভঙ্গুর রাষ্ট্র, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, সন্ত্রাসবাদ, সুনীল অর্থনীতি, ব্যর্থ রাষ্ট্র, পররাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি।

ও) যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, ইরান, রাশিয়া, চীন—এসব দেশের সঙ্গে পরস্পরের অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক কেমন, তা জেনে যাওয়া নিরাপদ।

ঔ) গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও অর্থনৈতিক জোট বা সংগঠন পড়ে যাবেন। যেমন ন্যাটো, বিশ্বব্যাংক, ডব্লিউএইচও, ডব্লিউটিও ইত্যাদি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে বলছি। দৈনন্দিন বিজ্ঞান অংশে ৬০ নম্বর, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি অংশে ২৫ নম্বর, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি অংশে ১৫ নম্বরসহ মোট ১০০ নম্বর। এর সুবিধা হলো, লিখতে পারলে অনেক ভালো নম্বর তুলতে পারবেন। ভুল লিখলে আবার বিপদও আছে। একটা কথা বলা প্রয়োজন, বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক শাখার শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষা দেন। স্বাভাবিকভাবেই বাণিজ্য ও মানবিক ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রতিযোগীদের বিজ্ঞান সম্পর্কে গভীর ধারণা রাখার কথা নয়। কারণ, একাডেমিক জীবনে তারা এটি বেশি পড়ার সুযোগ পায়নি। তাই যদি অতি মাত্রায় কঠিন প্রশ্ন করা হয়, তাহলে বাণিজ্য ও মানবিক শাখার প্রতিযোগীদের বিরাট অসুবিধা হবে। তাই বিসিএসে বিজ্ঞান অংশে একটা গড় প্রশ্ন করার চেষ্টা করা হয়। দু–একটা কঠিন প্রশ্ন হয়তো থাকতে পারে; এর বেশি নয়। একটা কথা মনে রাখবেন, প্রশ্ন করে প্রতিযোগীকে আটকানো পিএসসির লক্ষ্য নয়; পিএসসির লক্ষ্য স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রতিযোগীর মেধা যাচাই। তাই বিজ্ঞান নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা বা ভয়ের কোনো কারণ নেই। সঠিক কৌশল ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পড়াশোনা এগিয়ে নিলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অংশে অবশ্যই ভালো করবেন। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি অংশে ভালো করার জন্য নিচের টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারেন।

অ) ১০ম থেকে ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নগুলো খুব ভালো করে পড়বেন। আর এটি অবশ্যই বিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়ের আগেই পড়ে শেষ করে ফেলবেন। কারণ, প্রশ্ন প্রচুর রিপিট হয়।

আ) প্রকৌশলী মুজিবুর রহমানের উচ্চমাধ্যমিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বইটি একটু পড়ে নেবেন।

ই) নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বইটি একবার বাছাই করে পড়বেন। অনেকে এটি প্রিলিতে পড়েছেন।

ঈ) বিগত প্রশ্ন পড়ার জন্য একটি গাইডের প্রয়োজন হবে। এটি ওরাকল বিজ্ঞান হতে পারে। পড়ার সময় বিজ্ঞানের পদার্থের বিভিন্ন সংকেত মনে রাখতে পারেন। এতে লেখার মান বাড়ে।

উ) বিগত প্রশ্ন পড়ার পরে গাইড থেকে অধ্যায় ধরে কিছু প্রশ্ন বাছাই করে পড়বেন, যা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে। সব পড়তে যাবেন না। এত সময় পাবেন না।

ঊ) প্রশ্ন পড়ার সময় টু দি পয়েন্টে পড়বেন এবং লেখার সময়ও তাই। কোনো সূচনা, শেষ বা অতিরিক্ত বিষয়ের অবতারণার প্রয়োজন নেই।

ঋ) চিত্র দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে ভালো নম্বর আসবে। তাতে আবার অপ্রাসঙ্গিক চিত্র দিয়ে ভরিয়ে রাখবেন না। আর চিত্র ফ্রি হ্যান্ডে আঁকবেন। স্কেল ধরতে গেলে সব প্রশ্নের উত্তর শেষ করতে পারবেন না।

এ) সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় বিজ্ঞানে। তাই একটু দ্রুত লেখার চেষ্টা করবেন।

ঐ) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক অংশটি বেশ কঠিন বিশেষ করে মানবিক ও বাণিজ্যিক শাখার পরীক্ষার্থীদের জন্য। তাই বেশ গুরুত্ব দিন। অধ্যায় ধরে ধরে বাছাই করে প্রশ্ন আয়ত্ত করুন।

ও) পড়ার সময়ই মাথায় পরিকল্পনা করে রাখবেন, কোথায় কোথায় চিত্র দেবেন। ইউটিউবে নানা রকম বিজ্ঞানভিত্তিক ভিডিও রয়েছে। চাইলে আপনি আপনার পড়ার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ভিডিও দেখতে পারেন।

ঔ) বিজ্ঞানটা বেশি করে রিভিশন দেবেন। আর এর জন্য আলাদা করে কোনো নোট করার প্রয়োজন নেই। বই ও গাইডে দাগিয়ে রাখলেই হবে।

আরও পড়ুন