কানাডায় ইমিগ্রেশনে যে যে ডকুমেন্ট প্রয়োজন–পর্ব ১

কানাডায় আবেদন করতে ডকুমেন্টগুলো যথাযথ হতে হবে
ছবি সংগৃহীত

অভিবাসীদের দেশ কানাডা। শতকরা মাত্র ৪ দশমিক ৯ ভাগ ফার্স্ট নেশন ছাড়া এ দেশের শতকরা ৯৫ ভাগের বেশি মানুষ ইমিগ্র্যান্ট। অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য কানাডা প্রতিবছর ৩ লাখের ওপর ইমিগ্র্যান্ট পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এনে থাকে। আজ থেকে ২০–৩০ বছর আগেও কানাডার ইমিগ্রেশন অনেক সহজ ছিল। দিনে দিনে কানাডা ইমিগ্রেশন সিস্টেমকে জটিল করে ফেলছে। কারণ তারা প্রচুর দরখাস্ত পায়, ফলে অনেক যাচাই-বাছাই করে কানাডা বিদেশ থেকে লোক আনে। আগামী ৩ বছরে যেহেতু ১২ লাখের বেশি লোক কানাডায় আসবেন, তাই আবেদনকারীদের দরখাস্তের আগে ডকুমেন্টগুলো নির্ভুলভাবে জোগাড় করে রাখতে হবে। কানাডার ইমিগ্রেশনের জন্য এখন ইন্টারভিউ হয় না। বিশেষ প্রয়োজনে তারা আপনাকে ই–মেইল করবে কিংবা বড়জোড় ফোন করবে। আপনার ডকুমেন্ট দেখে তারা আপনাকে বুঝে নেবে।

প্রতিবছর লাখ লাখ আবেদন বাতিল হয়ে যায় আবেদনপত্র পূরণের অভাবে এবং প্রকৃত ডকুমেন্ট না করার কারণে। আজ আমরা জানব, একটি আবেদনপত্র করতে হলে কী কী ডকুমেন্ট লাগবে। দুই পর্বে আমরা এসব বিষয়ে জানবে।

নামের বানান

আমাদের দেশে অনেকের নামের বানান একেক জায়গায় একেক ধরনের থাকে। তেমনি আমাদের নামের বানানে অনেক অসঙ্গতি থাকে। কারও নামের শুরুতে এক জায়গায় শুধু মো. থাকে, আবার অন্য জায়গায় মোহাম্মদ থাকে, আবার কোথাও মুহাম্মদ থাকে। সব ডকুমেন্টে একই ধরনের বানান থাকা উচিত, তা না হলে আপনার আবেদনপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। শুধু নিজের নাম নয়, মা–বাবার নামের বানানও সব জায়গায় এক রকম থাকা জরুরি।

কানাডার ইমিগ্রেশনের জন্য বিস্তারিত সবকিছু সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে
ছবি: সংগৃহীত

পারসোনাল ইনফরমেশন ডকুমেন্ট

যিনি আবেদন করবেন, তাঁর এবং তাঁর ডিপেন্ডেডের (স্বামী/স্ত্রী, সন্তান) মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এবং আবেদনপ্রক্রিয়া চলার সময় কমপক্ষে ছয় মাস পাসপোর্টের মেয়াদ থাকতে হবে। আবেদনপ্রক্রিয়া চলার মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়ার কমপক্ষে ছয় মাস আগে পাসপোর্ট নবায়ন করে নিতে হবে। আবেদনকারী এবং তাঁর ডিপেন্ডেডদের জন্মনিবন্ধন থাকতে হবে। জন্মনিবন্ধন হতে হবে সরকার প্রদত্ত প্রকৃত জন্মনিবন্ধন। ১৮ বছরের ওপরের সবার ভোটার আইডি কার্ড অথবা ন্যাশনাল আইডি কার্ড থাকতে হবে। বিবাহিতদের জন্য Marriage Certificate এবং নিকাহনামা থাকতে হবে। বাংলাদেশে এ দুটি ডকুমেন্ট এখনো বাংলায় ইস্যু করা হয়। তবে যে কাজি আপনাকে বিয়ে পড়িয়েছেন, তাঁর কাছে আপনি যদি আপনার বাংলা ডকুমেন্ট নিয়ে যান, তবে তিনি একটি নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে তা ইংরেজিতে অনুবাদ করে দেবেন।

শিক্ষাগত ও ভাষাগত যোগ্যতা

প্রতিটি শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র ক্রিডেনশিয়াল করতে হবে। অর্থাৎ, আপনি বাংলাদেশে বা পৃথিবীর যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেছেন, তার মান কানাডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডে কতটুকু, তা তারা দেখে নেবে। আর এ ক্রিডেনশিয়াল করার গাইডলাইন কানাডার ইমিগ্রেশনের সরকারি ওয়েবসাইটে (http://www.cic.gc.ca/) দেওয়া আছে। আইইএলটিএস (IELTS) স্কোরের সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আপনি যদি স্টুডেন্ট ভিসায় আসেন, তবে আপনাকে একাডেমিক আইইএলটিএস পরীক্ষা দিতে হবে। আর প্রায় অন্য সব ভিসার জন্য আপনাকে ‘জেনারেল’ আইইএলটিএস দিতে হবে।

আগামী ৩ বছরে ১২ লাখ লোক নেবে কানাডা। এ জন্য পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মানুষ আবেদন করবেন
ছবি: সংগৃহীত

সেটেলমেন্ট ফান্ড

ভিসার জন্য আপনাকে ব্যাংকে সেটেলমেন্ট ফান্ড দেখাতে হবে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে টাকার পরিমাণের ভিন্নতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওরা যে টাকার পরিমাণের কথা আপনাকে বলবে, সেই পরিমাণ টাকা ক্যাশ আকারে ব্যাংকে থাকা ভালো। এ টাকা বিভিন্নভাবে থাকতে পারে। যেমন ফিক্সড ডিপোজিট, সঞ্চয়পত্র, চলতি হিসাব, প্রভিডেন্ট ফান্ড, শেয়ারবাজার ইত্যাদি। বাড়তি হিসেবে আপনাদের সোনা-গহনা, নিজ নামে বা স্পাউসের নামে সম্পত্তি থাকলে তা দেখাতে পারেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তাঁদের মাতা–পিতার টাকা এবং সম্পত্তি দেখালেও হবে।

আরও পড়ুন

কাজের অভিজ্ঞতা (ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স)

কানাডায় আবেদনের ক্ষেত্রে ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে কোনো মিথ্যার আশ্রয় নেবেন না। যেমন আপনার বা আপনার স্পাউসের যদি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকে, তবে প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদা অভিজ্ঞতার সনদপত্র জোগাড় করতে হবে। একেকটা সনদপত্র এক পাতার বেশি না হওয়াই ভালো। প্রতিটি জায়গায় যিনি আপনাকে এ সনদপত্র প্রদান করবেন, তাঁর নাম, পদবি, স্বাক্ষর, ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং ই-মেইল অ্যাড্রেস থাকতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে কানাডার ইমিগ্রেশন বিভাগ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। তাই যাঁদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতার সনদপত্র আনবেন, তাঁদের জানিয়ে রাখবেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা যেন আপনার অভিজ্ঞতাপত্রে যা লিখেছেন, তা বলতে পারেন।

মনে রাখবেন, কানাডিয়ান ইমিগ্রেশনের সিঙ্গাপুর অফিস থেকে আপনার চাকরির ব্যাপারে অধিকাংশ সময়ই খোঁজখবর নেবেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর থেকে সশরীর এসে অফিস দেখে যায় এবং আপনার উপস্থিতি তারা কামনা করে।
চলবে...

*আগামীকাল শুক্রবার পড়ুন ২য় পর্ব

লেখক: কানাডা প্রবাসী