কর্মক্ষেত্রে সময় ব্যবস্থাপনা করবেন যেভাবে

কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতে সময় ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ
ছবি: প্রথম আলো

কর্মক্ষেত্রে সময়ের কাজ সময়ে করতে সময় ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। সময় ব্যবস্থাপনা একটি পরিকল্পিত প্রক্রিয়া, যা দিয়ে ঠিক করা হয় কোনো নির্দিষ্ট কাজ করতে কতটুকু সময় ব্যয় করা উচিত। সঠিক সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অল্প সময়ে বেশি কাজ করতে পারেন। ফলে তার ক্যারিয়ারের উন্নতিও দ্রুত হয়।

চাকরিজীবীদের সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব ও চাপ বাড়তে থাকে। যদি সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা আয়ত্ত করা না যায়, তাহলে দেখা যাবে কোনো কাজই ভালোমতো হচ্ছে না। কর্মক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারায় ক্যারিয়ার থেমে যেতে যারে। এমনকি পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়ার ফলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে পারে। সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়ানোর কিছু কৌশল এখানে তুলে ধরা হলো।

কাজের অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করা

আপনার কাজগুলোকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চার ভাগে ভাগ করুন। প্রথম ধাপ গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি; এসব কাজ তাৎক্ষণিক করুন। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু জরুরি নয়; এসব কাজ পরে করতে পারেন। তৃতীয় জরুরি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নয়; আগে সিদ্ধান্ত নিন কাজটি করবেন কি না। যদি করতে চান, তাহলে দ্রুত করে ফেলুন। চতুর্থ জরুরি নয় এবং গুরুত্বপূর্ণও নয়; এসব কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।

ডিজিটাল ক্যালেন্ডার বা নোটবুক ব্যবহার করা

সময় ব্যবস্থাপনার জন্য ডিজিটাল ক্যালেন্ডার বা নোটবুকের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বিভিন্ন অ্যাপ ও ডিজিটাল ডিভাইসে ক্যালেন্ডার বা নোট লিখে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। যেখানে দিন ধরে বিভিন্ন সময় কাজের তালিকা তৈরি করে রাখা যায়। ক্যালেন্ডার বা নোট ব্যবহারের আরেকটা উপকারী দিক হলো, অনেক সময় কাজের চাপ বেশি থাকলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজের কথা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি তা ক্যালেন্ডার বা নোটবুকে লিপিবদ্ধ থাকে, তাহলে সেটি ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আর ডিজিটাল ডিভাইসে রিমাইন্ডার দেওয়ার ব্যবস্থাও করে রাখা যায়।

সময়সীমা নির্দিষ্টকরণ এবং লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

প্রতিটি কাজ ভালোভাবে করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে নিন। কাজের সময়সীমা না থাকলে কম সময়ে বেশি কাজ করা সম্ভব হয় না এবং কাজের মধ্যে খামখেয়ালিপনা ও ঢিলেমি ভাব দেখা যায়। নির্ধারিত সময়ে কোনো কাজ করতে হলে কাজের স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য মাত্রা থাকা প্রয়োজন। বড় কাজের ক্ষেত্রে একটি সর্বোপরি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা থাকতে পারে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে পুরো কাজটি যেন ভালোভাবে করা হয়, সেজন্য কাজটিকে ছোট ছোট স্বল্পমেয়াদি অংশে ভাগ করে, তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করলে পুরো কাজটি নির্ধারিত সময়ে করার সম্ভাবনা বাড়ে।

কাজ জমিয়ে রাখার অভ্যাস পরিত্যাগ করা

অনেকেই আছেন আলসেমির কারণে সময়ের কাজ সময়ে না করে জমিয়ে রাখেন। পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, তাঁরা নির্ধারিত সময়ে তাঁদের কাজ শেষ করতে পারেন না। এতে তাঁদের ক্যারিয়ারে বিরূপ প্রভাব পড়ে। তাই সবার উচিত সময়ের কাজ সময়ে শেষ করার মানসিকতা তৈরি করা। কাজ জমিয়ে রাখার অভ্যাস পরিত্যাগ করা। বর্তমান সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে এবং কাজ শুরু করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

আগে থেকেই পরিকল্পনা

দিন শুরু করার সময় আপনার কাছে সুনির্দিষ্ট কাজের পরিকল্পনা থাকতে হবে। সারা দিনে আপনি কী কী কাজ করবেন, সেটির তালিকা। এই প্রক্রিয়াকে আপনার অভ্যাসে পরিণত করুন। পাশাপাশি পরবর্তী দিনের কাজের তালিকা তৈরি করে রাখুন, যেন পরের দিন সকালে ভাবতে না হয় যে আপনাকে ওইদিন কী কী কাজ করতে হবে। তবে শতভাগ কাজের তালিকা যে আপনি আগেই তৈরি করে ফেলতে পারবেন ব্যাপারটা সব সময় এমন নাও হতে পারে।

অনেক সময় তাৎক্ষণিকভাবে আপনার কাছে নতুন কাজ চলে আসতে পারে এবং আপনার নির্ধারিত কাজের তালিকার বাইরেও সেই কাজটি করার প্রয়োজন হতে পারে। যখন আপনি একটি নির্দিষ্ট দিনের কাজের তালিকা তৈরি করেন তখন সেখানে জরুরি কাজের জন্য কিছু সময় বরাদ্দ রাখতে পারেন।