প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে করণীয়

প্রতীকী ছবি: প্রথম আলো

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপে খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগে মৌখিক পরীক্ষা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। পরীক্ষা চলবে আগামী ২২ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন কুমিল্লার লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. রিয়াজ উদ্দিন

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় ২৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে। এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতকের ফলাফলের ওপর ১০ নম্বর। আর অবশিষ্ট ১৫ নম্বর মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডের হাতে থাকবে। প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, প্রকাশ ক্ষমতা, সাধারণ জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে দক্ষতার ভিত্তিতে এই নম্বর দেওয়া হবে।

প্রাথমিকের চাকরির মৌখিক পরীক্ষায় কিছু মৌলিক বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। প্রথমেই নিজের নামের অর্থ, নামের সঙ্গে মিল আছে এমন বিখ্যাত ব্যক্তি, নিজের বংশ পরিচয়, পরিবার ও মৌখিক পরীক্ষার দিনে কোনো গুরুত্বপূর্ণ দিবস থাকলে, সেই সম্পর্কে জানতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডের সদস্যরা প্রার্থীর নিজের পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। তাই কয়েকটি সুন্দর ইংরেজি বা বাংলা বাক্যে নিজের পরিচয় দিতে হবে। প্রার্থীর সুন্দর উপস্থাপনা ও মার্জিত প্রকাশভঙ্গি বোর্ডের সদস্যদের মুগ্ধ করবে।

আরও পড়ুন

মৌখিক পরীক্ষায় প্রার্থীর নিজ জেলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। তাই জেলার প্রতিষ্ঠা, নামকরণ, আয়তন, উপজেলা ও পৌরসভার সংখ্যা, জেলার ব্র্যান্ডিং নাম, উল্লেখযোগ্য নদ-নদী, দর্শনীয় স্থান ও জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজ জেলা কোন সেক্টরের অধীনে ছিল এবং সেক্টর কমান্ডার কে ছিলেন, সেটি জানতে হবে। নিজ জেলার বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কেও জানা উচিত। এ ছাড়া নিজ ইউনিয়ন, উপজেলা, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হতে পারে।

স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পঠিত বিষয় সম্পর্কে প্রায় সব মৌখিক পরীক্ষায়ই প্রশ্ন করা হয়। তাই নিজ বিষয়ের সব মৌলিক ধারণাগুলো শিখে নিতে হবে। বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা আবশ্যক। ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট, ৬ দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, অপারেশন সার্চলাইট, অসহযোগ আন্দোলন, স্বাধীনতার ঘোষণা, ১১টি সেক্টর, মুজিব বাহিনী, মুজিবনগর সরকার ও মুক্তিযুদ্ধ–সম্পর্কিত সব তথ্য গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে রাখা উচিত। বঙ্গবন্ধুর পরিবার, শৈশবকাল, শিক্ষাজীবন, রাজনৈতিক সংগ্রাম, ৭ মার্চের ভাষণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, শাসনকাল, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং তাঁর রচিত তিনটি বই সম্পর্কে ভালোভাবে পড়তে হবে। জাতীয় চার নেতা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে অবদান রাখা অন্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কেও জানতে হবে।

আরও পড়ুন

প্রাথমিকের মৌখিক পরীক্ষার আগে কবিতা, গান বা ছড়া শিখে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একটি করে গান ও কবিতা শিখে রাখতে পারেন। নজরুলসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক, দেশাত্মবোধক কিংবা লোকগান গাইতে বলা হতে পারে। বোর্ড বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কোনো কবিতা আবৃত্তির জন্য বলতে পারেন। কখনো কখনো প্রার্থীকে নৃত্য পরিবেশনের জন্যও বলা হয়। তাই এসব সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোও যথাযথভাবে চর্চা করতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষাসংক্রান্ত সব তথ্য গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, দপ্তর, বর্তমান প্রতিমন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষার ভিশন, মিশন, প্রান্তিক যোগ্যতা, উদ্দেশ্য, পিটিআই, ডিপিএড, সিইনএড, পিইডিপি-৪ এবং সর্বশেষ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় প্রাথমিক শিক্ষাসংক্রান্ত সব তথ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। এ ছাড়া নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং শিক্ষাসংক্রান্ত সব কিছু জেনে রাখা ভালো। প্রাথমিক মৌখিক পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজির মৌলিক কিছু প্রশ্নও করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ বাংলা ও ইংরেজি শব্দের বানান, কিছু বাক্যের ইংরেজি অনুবাদ, প্রবাদ-প্রবচন, যুক্তবর্ণের গঠন এবং অন্য কিছু প্রশ্নও করতে পারেন।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো পড়তে হবে। সংবিধানের শিক্ষাসংক্রান্ত ধারা কোনটি—এমন প্রশ্ন করা অস্বাভাবিক নয়। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো, বিশেষ করে শিক্ষাসংক্রান্ত ৪ নম্বর অনুচ্ছেদটি মনে রাখা উচিত।

বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্প্রতি আলোচিত বিষয়গুলো পড়তে হবে। বাজেট, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, অস্কার, নোবেল পুরস্কার, খেলাধুলা, সরকারের মেগা প্রজেক্ট ও অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও পড়ে রাখতে পারেন।

প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই থেকেও প্রশ্ন করা হতে পারে। বিশেষ করে গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি বই থেকে। তাই চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বোর্ড বইয়ের সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। মৌখিক পরীক্ষায় কোনো প্রশ্নের উত্তর না পারলে বিনয়ের সঙ্গে দুঃখিত বলা উচিত। অযথা বেয়াদবি বা অসৌজন্যমূলক আচরণ করা একদমই ঠিক নয়। যেকোনো ধরনের মুদ্রাদোষ ও আঞ্চলিকতা পরিহার করতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে যেকোনো রুচিশীল ও মার্জিত পোশাক পরে উপস্থিত হতে হবে।

আরও পড়ুন

মৌখিক পরীক্ষায় কেবল আপনার জ্ঞানের গভীরতা যাচাই করা হয় না, আপনার কথা বলার ধরন, উপস্থাপনা, সৌজন্যতা, ব্যক্তিত্ব, বিনয় ও মানসিক উৎকর্ষতাও যাচাই করা হয়। তাই মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি থাকতে হবে। সবার জন্য শুভকামনা।