সমন্বিত ১০ ব্যাংকে অফিসার পদের প্রিলিমিনারির প্রস্তুতিতে করণীয়
ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের সদস্যভুক্ত ১০টি ব্যাংক/ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অফিসার (সাধারণ) পদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। অনিবার্য কারণে সেটি স্থগিত করা হয়েছে। যাঁদের প্রস্তুতিতে একটু ঘাটতি ছিল, তাঁরা আরও ভালো প্রস্তুতির জন্য বেশি সময় পেলেন। সময়টা প্রার্থীদের সঠিকভাবে কাজে লাগানো উচিত। অফিসার (সাধারণ) পদে মোট ২ হাজার ৭৭৫ জন নেওয়া হবে। কার্যকরীভাবে প্রস্তুতি নিলে আপনিও হতে পারেন ২ হাজার ৭৭৫ জনের একজন। এই পরীক্ষার সার্বিক দিকনির্দেশনা এবং পরীক্ষার প্রস্তুতি কৌশল নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক মো. মাজহারুল হাসান নাহিদ।
ব্যাংকের সাধারণ অফিসার পদের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সাধারণত ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন আসে। যেখানে প্রতি প্রশ্নের বিপরীতে ১ নম্বর আর ভুল উত্তর দিলে ০.২৫ নম্বর কাটা যায়। পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সময় থাকে এক ঘণ্টা। পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) এবং কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি অংশ থেকে প্রশ্ন করা হয়।
বাংলা
সাধারণত গত বছরের প্রশ্নগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য থেকে মোট ২৩ থেকে ২৫টি প্রশ্ন থাকে। এর মধ্যে বাংলা ব্যাকরণ থেকেই বেশি প্রশ্ন করা হয়। সাধারণত ব্যাকরণ থেকে ১৭ থেকে ১৮টি এবং বাংলা সাহিত্য থেকে ৭ থেকে ৮টি প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে।
বাংলা ব্যাকরণ
আগের বছরের প্রশ্নের আলোকে বলা যায়, বাংলা ব্যাকরণের ধ্বনি, শব্দ, উপসর্গ, কারক-বিভক্তি, শুদ্ধ বানান, সন্ধি, বাগধারা, বাক্য সংকোচন, বিপরীত শব্দ, প্রতিশব্দ, বাংলা ভাষা, প্রকৃতি-প্রত্যয় ইত্যাদি বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ব্যাকরণের ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারির অধিকাংশ প্রশ্ন এসব বিষয় থেকে আসে।
বাংলা সাহিত্য
বাংলা সাহিত্য অংশ থেকে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) নির্ধারিত ১১ জন সাহিত্যিকের সবকিছু খুব ভালোভাবে পড়তে হবে। পাশাপাশি প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্যকর্ম, পত্রপত্রিকা ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।
ইংরেজি
চাকরির পরীক্ষায় ভালো করতে ইংরেজিতে ভালো করার কোনো বিকল্প নেই। পরীক্ষায় ইংরেজিতেও সাধারণত ২৪ থেকে ২৫টি প্রশ্ন এসে থাকে। পুরো ইংরেজি প্রস্তুতিকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথম ভাগ হলো ভোকাবুলারি-সংক্রান্ত আর দ্বিতীয় অংশে ইংরেজি ব্যাকরণ-সংক্রান্ত।
ব্যাংকের প্রিলিমিনারিতে ভালো করতে হলে অবশ্যই ভোকাবুলারিতে ভালো করতে হবে। কারণ, বিগত প্রশ্নগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শুধু ভোকাবুলারি অংশ থেকেই পরীক্ষায় ১২ থেকে ১৩টি প্রশ্ন এসেছে। ভোকাবুলারি অংশ থেকে সিনোনেম, অ্যান্টোনেম, অ্যানালজি, ওয়ান ওয়ার্ড সাবস্টিউশন, ইডিওমস অ্যান্ড ফ্রেসেস ইত্যাদি বিষয় খুব ভালোভাবে পড়তে হবে। ইংরেজি ব্যাকরণে ভালো নম্বর পেতে হলে ভার্ব, ভয়েস চেঞ্জ, সেনটেন্স কারেকশন, ন্যারেশন, পিন পয়েন্ট এরোর, ফিল আপ দ্য ব্ল্যাঙ্কস ইত্যাদি বিষয়গুলোয় মনোযোগ দিতে হবে।
গণিত
গণিতে ভালো করতে হলে ইংরেজি মাধ্যমে বেশি বেশি গণিত অনুশীলন করাই সর্বোত্তম পন্থা। ব্যাংকের গণিত পরীক্ষায় সাধারণত ২০ নম্বর থাকে। এর মধ্যে ১৭ থেকে ১৮ নম্বর থাকে শুধু পাটিগণিতে। আর ২ থেকে ৩ নম্বর থাকে বীজগণিত এবং অন্যান্য বিষয় থেকে। পাটিগণিত অংশে ভালো করতে হলে পরিমাপ, লাভ-ক্ষতি, শতকরা, সুদ/মুনাফা, অনুপাত, গড়, বয়স, সংখ্যা, সমীকরণ, দূরত্ব, সময়-কাজ ইত্যাদি সংক্রান্ত গণিতগুলো বেশি বেশি অনুশীলন করতে হবে। এর পাশাপাশি বীজগণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি ইত্যাদি বিষয়ের বেসিক থেকে গণিতের প্রস্তুতি নিতে হবে।
সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞান অংশ থেকে সাধারণত ২০ নম্বরের প্রশ্ন এসে থাকে। এ অংশকে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। বাংলাদেশ বিষয়াবলি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি। বাংলাদেশ বিষয়াবলি অংশে বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, সংবিধান, আইন, ব্যাংকিং-সংক্রান্ত প্রশ্ন, সংগঠন, বিখ্যাত বই, খেলাধুলা এবং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অংশ থেকেই অধিকাংশ প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক অংশে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, যুদ্ধ, চুক্তি, খেলাধুলা, নোবেল পুরস্কার, বিজ্ঞান, সভ্যতা, বিভিন্ন দেশ, বিখ্যাত ব্যক্তি, জায়গা ও আন্তর্জাতিক মণ্ডলে সাম্প্রতিক ঘটনা থেকেই প্রায় সব প্রশ্ন আসে।
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি
কম্পিউটারের গঠন, নেটওয়ার্ক, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, ইনপুট-আউটপুট, মেমোরি, নম্বর সিস্টেম, ই-কমার্স, দৈনন্দিন জীবনে তথ্যপ্রযুক্তি এসব বিষয় খুব ভালোভাবে না পড়ে পরীক্ষার হলে যাওয়া অনুচিত হবে। কারণ, এই অংশের অধিকাংশ প্রশ্নই এসব বিষয় থেকে পরীক্ষায় আসে।
পরীক্ষায় এসব বিষয়ের প্রস্তুতির পাশাপাশি পরীক্ষার্থীকে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হতে হলে অবশ্যই একজন পরীক্ষার্থীর সময়-সংক্রান্ত ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। কারণ, ১০০টি প্রশ্নের এই পরীক্ষায় সময় থাকে মাত্র ৬০ মিনিট। সেই হিসাবে প্রতিটি প্রশ্নের জন্য সময় পাওয়া যাবে মাত্র ৩৬ সেকেন্ড। এ ছাড়া প্রিলিমিনারিতে ভালো করতে হলে আগের বছরের পরীক্ষার বিভিন্ন প্রশ্ন সমাধান করলে অন্যদের চেয়ে প্রস্তুতিতে এগিয়ে থাকা যায়। অনলাইন কিংবা অফলাইন, যেখানেই হোক না কেন বিভিন্ন মডেল টেস্ট দিয়ে নিজের প্রস্তুতিকে শাণিত করার কোনো বিকল্প নেই। সবার জন্য শুভকামনা।